005898
Total Users : 5898
Charbak magazine logo
sorolrekha logo

লেখক তালিকা

জন্ম. ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে। সম্পাদনা করছেন ‘চারবাক’ ও ‘সরলরেখা’। যুক্ত আছেন সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’র সাথে। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: মায়াহরিণ, কাব্যগ্রন্থ ২০০৮, চারবাক, বুদ্ধিজীবীর দায়ভার, সম্পাদনা ২০০৯, সংবেদ, পক্ষ—প্রতিপক্ষ অথবা শত্রু—মিত্র, প্রবন্ধ ২০১০, চারবাক, নির্বাচিত চারবাক, সম্পাদনা ২০১১, চারবাক, নাচঘর, কবিতা, ২০১২, চারবাক, ভাষা সাম্প্রদায়িকতা অথবা সাম্রাজ্যবাদি খপ্পর, প্রবন্ধ, ২০১৩, চারবাক এবং মুখোশ, কবিতা, ২০১৬, চারবাক, করোনাকালে, কবিতা, ২০২২, চারবাক।
View Posts →
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
View Posts →
প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ
View Posts →
বাংলাদেশের উত্তরউপনিবেশি ভাবচর্চার পথিকৃৎ ফয়েজ আলম একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। উপনিবেশি শাসন-শোষণ আর তার পরিণাম, রাষ্ট্র ও সমধর্মী মেল কর্তৃক ব্যক্তির উপর শোষণ-নিপীড়ন ও ক্ষমতার নানামুখি প্রকাশ আর এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন তিনি। বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের নয়াউপনিবেশি আর্থ-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর রাষ্ট্র ও স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর শোষণচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার লেখা আমাদের উদ্দীপ্ত আর সাহসী করে তোলে। রুহানিয়াত সমৃদ্ধ দার্শনিক ভাবচর্চা আর সাহিত্যিক-রাজনৈতিক তত্ত্বচর্চাকে একসাথে কবিতার দেহে ধারণ করতে সক্ষম ফয়েজ আলমের সহজিয়া কবিতা। তার কবিতায় তিনি মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তার কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার যোগীরনগুয়া গ্রামে। বাবা মরহুম শেখ আবদুস সামাদ, মা সামসুন্নাহার খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ পাশ করার পর প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য এমফিল. ডিগ্রী লাভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ব্যক্তির মৃত্যু ও খাপ-খাওয়া মানুষ (কবিতা, ১৯৯৯); প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি ( গবেষণা, ২০০৪); এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজম (অনুবাদ, ২০০৫); উত্তর-উপনিবেশি মন (প্রবন্ধ, ২০০৬); কাভারিং ইসলাম (অনুবাদ, ২০০৬), ভাষা, ক্ষমতা ও আমাদের লড়াই প্রসঙ্গে (প্রবন্ধ, ২০০৮); বুদ্ধিজীবী, তার দায় ও বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব (প্রবন্ধ, ২০১২), জলছাপে লেখা (কবিতা, ২০২১), রাইতের আগে একটা গান (কবিতা, ২০২২); ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (প্রবন্ধ, ২০২২)।
View Posts →
কবি ও গল্পকার। যুক্ত আছেন চারবাক সম্পাদনা পরিবারের সাথে।
View Posts →
কবি। জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়।
View Posts →

সম্পূর্ণ লেখক তালিকা

অন্ধকারে মৃত্যুর গান

শিল্প আর যাই হোক, নৈতিক শিক্ষার একঘেয়ে কথন নয়। গোগোল জুকোভস্কি, ১৯৪৮

 

বোনের বুকের থেকে সরে যায় আমার অস্বস্তিময় চোখ
আমি ভাইফোঁটার দিন হেঁটে বেড়াই বেশ্যাপাড়ায়
আমি মরে গেলে দেখতে পাবো জন্মান্তরের করিডোর
আমি জন্মাবার আগের মুহূর্তে আমি জানতে পারিনি আমি জন্মাচ্ছি
আমি এক পরিত্রাণহীন নিয়তিলিপ্ত মানুষ
আমি এক নিয়তিহীন সন্ত্রাসলিপ্ত মানুষ
আমি দেখেছি আমার ভেতর এক কুকুর কেঁদে চলে অবিরাম
তার কুকুরির জন্যে এক সন্ন্যাসি তার সন্ন্যাসিনির স্বেচ্ছাকৌমার্য
নষ্ট করতে হয়ে ওঠে তৎপর লম্পট আর সেই লাম্পট্যের কাছে
গুঁড়ো হয়ে যায় এমনকি স্বর্গিয় প্রেম- শেষ পর্যন্ত আমি
কবিতার ভেতর ছন্দের বদলে জীবনের আনন্দ খোঁজার পক্ষপাতি
তাই জীবনের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই-মানুষের সঙ্গে
আমার কোনও বিরোধ নেই
মানুষের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই/ ফালগুনী রায়

 


দর্পিত, স্পর্ধিত ও দ্বিধাহীন-অনায়াসে শব্দগুলো চয়ন করা চলে ফালগুনীর ক্ষেত্রে। আচ্ছা, ফালগুনী রায় যদি কবিতা না লিখতেন অথবা তার সময়ে সংঘটিত কাব্যআন্দোলনে অংশবাক না হতেন, তাহলে? তার কাব্যজীবন বহুধাবিস্তৃত, ব্যাপক তা নয়, মাত্র তের বছরে লিখেছেন যৎসামান্য হাতেগোণা, যখন বাংলা কবিতা পৌঁছে গেছে উত্তুঙ্গে, উচ্চ শিখরে। রবীন্দ্রনাথের মতো মহিরুহ একদিকে; বিপরিতে তিরিশের অগণন মেধাবি তরুণের প্রকাশ্য রবীন্দ্রবিরোধিতা। পরবর্তিতে বাংলা কবিতাকে শাসন করেছেন যাদের অনেকেই, সুধীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব, জসিমউদ্দীন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সুনীল, জীবনানন্দ দাশের মতো কবিপ্রতিভাতো রয়েছেনই। কিছুদিন পরে একে একে মঞ্চে আসবেন অনেকেই, যার সূচনাবাদ্য শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল তখনই। ফালগুনী রায় অথবা তার সময়কে মূল্যায়ন করা হবে কোন প্রেক্ষাপটে? গোটা তিরিশের পর কাব্যজগতে দানা বাঁধে অনেকগুলো মুভমেন্ট মূলত কলকাতাকেন্দ্রিক, যার একটির সঙ্গে সচেতনভাবে যুক্ত ছিলেন ফালগুনী। ফালগুনী নিয়ে আলোচনায় একটি বিপদ আছে তাহলো-আরো কতগুলো মুখ চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়। মলয় রায়চৌধুরী, সুবিমল বসাক, শৈলেশ্বর ঘোষ। এদের মধ্যে মলয়ের প্রতি আমার একটা পক্ষপাত আছে, আর তাহলো তার চমৎকার গদ্যশৈলি। তো সেই সময়ের সুনীলের ‘কৃত্তিবাস’-কেও যে আলোচনায় আনতে হয়। ততোদিনে বাংলাদেশ একটা অস্থির সময় পার করছে, ক্রমশ দানা বাঁধছে স্বাধিনতা আন্দোলন। অপরদিকে, নকশাল আন্দোলন যা তারুণ্যের স্পৃহা, জুগুপ্সা, বিদ্রোহ আমূল পাল্টে দেয়। ফালগুনীর লেখায় যার আবছা-অস্পষ্ট ছবি আছে, টের পাওয়া যায়।


ফালগুনীর লেখা পাঠে তারাশংকর চোখে ভেসে আসে, জলসাঘর গল্পের ছবি সেলুলয়েড হয়। ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বংশের শেষ প্রতিনিধি ফালগুনী রায় বা তার পরিবার। প্রশ্নটা করাই যায়, আচ্ছা ফালগুনী যদি একটাও কবিতা না লিখতেন তাহলে বাংলা সাহিত্যের ইতরবিশেষ হতো-কিছু যায় আসতো কি-না? উত্তর এককথায় দেয়া সম্ভব ইতরবিশেষ কিছু হতো না। বাংলা সাহিত্যের রঙ্গমঞ্চে ফালগুনীর প্রভাব যতসামান্য, বলার মতো কিছু নয়। তাহলে আমরা কেনো ফালগুনীর আলোচনা করছি? এমন কোন বিশেষত্ব ফালগুনীর কবিতা আমাদের বাধ্য করেছে তাকে আলোচনায় টেনে আনতে? আধুনিক বাংলা কবিতার অঙ্গন ততোদিনে বেশ পুষ্ঠ-দুর্দান্ত প্রতাপে অনেকেই ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছেন। ফালগুনীর সময়টা মোটেই সুখকর নয়। রাজনৈতিক কারণ বাদ দিলেও, নিছক শিল্পের বিবেচনায়ও কালোত্তির্ণ-রসোত্তির্ণ সাহিত্য ফসল ঘরে তুলে দিয়েছেন অনেক সাহিত্যিকই। রবীন্দ্রনাথের মতো মহিরুহ তো আছেনই, আছেন নজরুল, সুধীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, বুদ্ধদেবসহ অনেকেই। সাহিত্য আন্দোলনে চলছে কলে­ালিয়, নিম, কীর্তিবাসসহ অনেকগুলো ধারা। তার মাঝে সমীর-মলয়-শৈলেশ্বর-ফালগুনীরা আলাদা একটি আন্দোলন নিয়ে তখন মাঠে। আর তার কারণেই পরবর্তিতে ফালগুনীসহ হাংরির অনেক লেখক-কবি আমাদের কাছে অত্যাবশ্যকিয় বিবেচিত হন; আলাদা স্পেস নিয়ে স্বাতন্ত্র্যের দাবিতে দাঁড়িয়ে যান।


বিশ্ববিক্ষা বা আন্তর্জাতিকতার ঢেউ তখনো কি লাগেনি কবিতায়। অবশ্যই লেগেছে। পাশ্চাত্য থেকে উঠতি কলকাতায় পাচার হয়ে আসছে হামেশা নানা মতবাদ, সাহিত্যের নানান রসদ। পদে অনন্য ব্যঞ্জনে সুস্বাদু। জাঁ আর্তুর র‌্যাবো, স্তেফান মালার্মে, ভের্লেন, লে কার্দোনেল, সামায়াঁ, মিখায়েল, রদেনবাখ, মাতেরলিঙ্ক, লাফোর্গ, ঘিল, দুবুস, মকেল, মাউক্লেয়ার, মেরিল, ভেরহারেন, কল, ভিলে গ্রিফিন, দুজারদাঁ, রেতে অঁরি দ্য রেনিয়ে এরা তখন দুর্দান্ত প্রতাপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন কলকাতার তরুণমস্তিষ্ক। শেলি, কিটস, ওয়র্ডওয়র্থ, ব্রাউনিং, টেনিসনের আধিপত্য কমতির দিকে এমন ভাবার যদিও কোনো কারণ নেই। হাংরির সাথে যুক্ত হলেন আমেরিকা থেকে সদ্যভারত ভ্রমণে আসা এ্যালেন্স গিন্সবার্গ। কলকাতা উন্মাদ, চলছে উন্মাদনা। সাহিত্যের মাতালসময়। স্বিকার-অস্বিকার, পাল্টা-পাল্টি কথাবিনিময়, শ্লি¬ল-অশ্লি¬লতা বিতর্ক। কবিতা নিয়ে মামলা হলো গড়ালো আদালতঅব্ধি, সেটা এখন ইতিহাস। নকশাল আন্দোলন দমনের নামে কলকাতায় চলছে অরাজক পরিস্থিতি, তরুণ নিধনের মহোৎসব। ঠিক এই সময়ের ফসল ফালগুনী। তার চোখের সামনে পাল্টে যাচ্ছে সময়-সবকিছু, চেনা কলকাতা তখন ভিষণ অচেনা। পাক-ভারত ভাগাভাগির ফলে তার পরিবার বাংলাদেশ অংশে থাকা বিশাল জমিদারি হারিয়ে ফেললো, অনিশ্চিত এক যাপিতজীবন। ব্যক্তিগত একাকিত্ব, যৌনতা, সম্ভোগ, রমণ সাধারণ মধ্যবিত্তের আটপৌঢ়ে জীবনের সংস্পর্শ বিভিষিকা ফালগুনীকে ব্যতিব্যস্ত করে দিয়েছে সন্দেহ নেই। যার ছাপ পড়েছে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক জীবনে। নিজেকে তখন কি তার ভিষণ একা মনে হয়েছে; মনে হয়েছে পৃথিবীর অসফল-অযোগ্য একজন মানুষ-হয়তো।


বলা হয়, কবিতা হল শব্দের কারুকাজ। শব্দকে কবি নিজস্ব তাগিদে ইচ্ছামাফিক প্রয়োজনমতো পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাধ্যমে সময়োপযোগি করে গড়ে নেন। সময়ের বিবর্তনে মানুষের একরৈখিক চিন্তা-চেতনায়ও পরিবর্তন এসেছে। গ্রন্থিল জীবনের জটিলতাগুলো এক-আধটু নাড়াচাড়া করতে গিয়ে ফর্মে এসেছে
রূপান্তর। ১৮৮৬ সালে ‘লে ফিগারো’ পত্রিকা সিমবলিস্ট আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটাতে গিয়ে জঁ মোরেস বলেছিলেন, ‘শব্দসমূহ ব্যবহৃত হওয়া উচিত মানসিক স্থিতি প্রকাশ করার জন্য’। উনিশ শতকে যে আদর্শবাদিতা ও রোমান্টিসিজমের আবছা প্রবাহে নিও-প্লে¬টোসিজমের স্রোত শুরু হয়েছিল জগৎ সম্পর্কিত অতীন্দ্রিয়বাদি ধারণায়ও তা নিয়ে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। বিশ্বব্যাপি মানবিক সভ্যতার বিপর্যয়তো এখন আকছার ঘটনা। কবিতা তাই ব্যক্তি-নির্ভর, আত্মকেন্দ্রিক। ‘শিল্প’ শব্দটি কিছুদিন হলো পাশ্চাত্যের কল্যাণে আমাদের মনন-চিন্তায় স্থিতু হয়েছে। তিরিশের কবিরা প্রথা ভেঙে বেরিয়ে আসার যে চেষ্টা করেছিলেন তাতে তারা কতোটা সফল কিংবা ব্যর্থ সে আলোচনায় না গিয়েও বলা যায় তার একটা সূ² রেশ রয়ে গেছে এখনো, যার প্রবাহটা সামান্য নয়। ফালগুনীকে ধরতে হলে তার সময়টা অগুরুত্বপূর্ণ নয় তাই কিছুতেই।


ফালগুনীতে সাধারণ আটপৌঢ়ে জীবন আছে, আছে জীবনের প্রাত্যহিকতা। ক্লেদ-জুগুপ্সা, আত্মপ্রবঞ্চনা, দুর্বিনিত বেপরোয়া খামখেয়ালিপনা, নানা সামাজিক অসংলগ্নতার বিরুদ্ধে তি² শ্লে¬ষ হয়তো নিজের প্রতিও কিছুটা। নারির প্রতি মোহ, নারি শরীরের প্রতি আগ্রহ, ভালোবাসার প্রতি এক ধরনের অনুরাগ। পুনরুক্তি আছে প্রচুর, একই লাইন, একই শব্দ নানা জায়গায় বারবার ব্যবহৃত হতে দেখি। নারিকে মানুষ হিসেবে দেখার ব্যাপারটা তার কবিতায় খুব একটা নেই। কবিতাকে শুধুমাত্র কবিতার সৌন্দর্যে যারা আবিষ্কার করতে চান তাদের এই কবিতা নিশ্চয়ই হতাশ করবে; কিন্তু সাধারণ আটপৌঢ়ে প্রতিবাদ ক্ষোভের কথাগুলো শব্দে প্রকাশ করার কৃতিত্ব ফালগুনীকে দিতেই হয়, এ জন্যই হয়তো এখনো তার কবিতা গুরুত্বপূর্ণ, এ নিয়ে আলোচনায় বসেন কেউ কেউ।


খালাসিটোলার কাছে কোনো এক ইতর যুবক
খিস্তি করে ফলালো দাদাগিরি
বাইশ বছরে বাইশ লাইন কথা বলিনি যার সঙ্গে অন্তত
ট্যারা চোখে দেখে গ্যালো তার রাউডি বন্ধুরা
কাল হয়তো খুলে নেবে ঠ্যাং
বা পাল্টে দেবে পুরোপুরি মুখের জিওগ্রাফি
আজ তাই লিখে রেখে দিতে হবে সবকিছু
সব আশা সোনালি সুদূরতা আর ছেনালি ইচ্ছের কথা
জীবনের প্রথম জংশন মাতৃজঠর হতে বেরিয়ে হাঁটলুম
গত বাইশ বছর-কালই বুঝি শেষদিন
পৌঁছে যাবো শেষ জংশন শ্মশান চিতায়।
অথচ অনেক কাজ বাকি
থিভস জর্নাল পড়া বাকি
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চশমার ফাঁক দিয়ে পৃথিবী দেখা বাকি
জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুকারি রঙ পাল্টানো ট্রামে বসা বাকি
মসৃণ জংঘা রমণির সাথে সংগম বাকি
মাইকেল হেনরিআটার নিরব কবরে ঘাসফুল
ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাঁটুমুড়ে কিছুক্ষণ বসে থাকা বাকি
এখনো অনেক কাজ বাকি

অথবা

আর কত সত্যিকারের সতি মেয়ে বিপ্লবের কারণে
যৌনাঙ্গে বহন করে পুলিশের চুরুটের ছ্যাঁকা
তাদের প্রেমিক ক্যারিয়ারিস্ট হতে না পারায় সমাজের চোখে
বনে যায় বোকা
আর চালাক পাঁঠাকবিদের ভিড়ে ভরে ওঠে কফিহাউস
বঙ্গসংস্কৃতির প্যাণ্ডেল উঠিয়ে নিলে পর
ময়দানে সে জায়গায় চরে বেড়ায় ভেড়া…
কবিদের যোগ্যতা আমি চাই বিচার্য হোক কেবলি কবিতায়
রোজগেরে ছেলেদের ভিড় যাক বরং বিবাহসভায় অথবা
বেশ্যাখানায়
রক্তমাংসের শরীর আমার মরে যাবে একদিন নিশ্চিত
তবু শব্দের শরীরে থাকবে বেঁচে আমার চেতনা
ভবিষ্যতের পাঠক আমি জানি কবি কত পাইনে পেতেন
সে খবর নিশ্চিত রাখবে না


শ্লেষ বিদ্রুপ সংক্ষোভ শুধু প্রচলিত নিয়মনীতি, সমাজ-সংসার-সময়ের বিরুদ্ধে নয় অনেকটা নিজের বিরুদ্ধেও ফালগুনীর। উৎপলকুমার বসুর কথা দিয়ে শেষ করি: ‘খোলা চিতায় তার অবহেলিত দাহ হয়। বৈশাখের তপ্ত বাতাসে, আজ যেমন তার কবিতার বইয়ের পাতাগুলি, প্রায় তেমনই অবহেলায়, উল্টে যাচ্ছে নিজে নিজেই।’

শেয়ার করুন: