লতাবেগম
উড়– উড়– ফাল্গুনে নিয়েছি হাওয়ার স্বাদ
কুয়াশাকার্তিকের পথে
ধূসর হরিতের চোখে
কুড়িয়েছি দূরের স্বপন
আর অলখে মেনেছি আধো আঁধারে লতা বেগমের অবয়ব
ওপথে এখনো যায়
দক্ষিণভূর্ষির বৃক্ষঘন আকাশ
টুপটাপ শিশিরের ভোর
দূর নক্ষত্রে ঝুলে থাকে
লতা বেগমের চোখ
চোখের বাইরে এসে বুঝেছি এতো প্রেম আমাদের ছিলো না
শালপ্রাংশুদিন পেরিয়ে এসে
ধুলোময় পথগুলোকেও মনে হয় আপন
ছিলো কাছে পলাশের বন
চূড়াকৃষ্ণের গাছ
বেলার সিমাবদ্ধতা মেনে হেঁটে গেছি
চোখে শিমফুলের মুগ্ধতা খুঁজে
সামনে ছিলো উলুঝড়ের বাতাস
অগ্নিআশঙ্কার ছায়া ছায়া রাত
শূন্য নাড়ার বিল
আমরা একবারও দেখতে পাইনি শরীরের ছায়া
সমস্ত অঘটনভার দিয়ে রেখেছি
ঘুরপথে যাওয়া অশ্বের খুরে
যে শুধু খেয়ালে ধুলো ও হাওয়ায় খেলে
উপরি পাওয়া আট আনা খরচ করেছি তারা গুনে গুনে
২
যে গাছের গায়ে লিখেছি নাম
আজ ওখানে নতুন নখের আঁচড়
তুমি কি ভেবেছ রোপিত চারাগুলো আমাদের কথা
বলবে দির্ঘকাল
ফাল্গুন পাতার পিঠে যে ধুলো জমে
শ্রাবণ বারবার ধুয়ে দেয়
প্রাচিন পক্ষিপদ থেকে আসা
আমরা অল্পই হেঁটেছি
কোনো লুপ্ত সমুদ্রবন্দরের তলে লুকোবে আমাদের
ইঙ্গিত
মমতাময় সংসার
কেউ আঙুল তুলে বলবে
ঐখানে কোনো বিনিময়পর্বের প্রস্তুতি ছিল
ছিল অন্ন আয়োজন
অনুচ্চারিত শব্দের স্পর্ধাকে
খুঁজে পাবে না কোনোদিন
শিতের ইশতেহার
গল্প শুনতে নারাজ পৌষনিশিরাত
পোশাক আউলা করে
তলিয়ে যাবার সাধ
জ্যোৎস্নাকে খুঁটে দেখে
কুয়াশার ঘনত্বকেও মেপে নেয় মুঠোয়
কোনো দূরবর্তি হিসাব না মেনে
কারবারি শিত বোঝাপড়া চায়
দ্বিধার প্রাচির ভেঙে
অঙ্গে অঙ্গে
খোলাখুলি জানায় বাকি লেনদেনে
আস্থা নেই তার
২
এই হাড়নাচানো শিতে হতে পারে কোনো আয়োজন
তুমিও জানো
কুয়াশাদরে ঘুমায় পক্ষিপদ
গাঢ় উম খুঁজে নেয় স্বাদের দেহ
এ রাতের অভিপ্রায় জানবে শৃগালেরা
হাড়ে হাড়ে শিতকে নাচাবে বলে
মৃদু আলোয় বা খোলা অন্ধকারে
জেগে থাকে পেঁচাদৃষ্টি
ঘাগুবৃক্ষরাও পাবে টের
এ রাতের অন্যরকম হাওয়া
প্রত্মপোশাক ছেড়ে
তারপর জানে ঘনআঁধার
তুমিও
৩
কোজাগরি রাতে
অনেকে চেয়েছিলো পলাশের রাজত্ব
অনেক পলাশচারা গজিয়েছে সেবার
শুধু ফুল ফোটার কাল গেছে মিলিয়ে
কেবল পাহাড়ের পাঁজরে লেগে আছে দাগ
পূর্বমুখি হাওয়া-গুঞ্জনে
চৈত্রচঞ্চল রাতে ছড়ায় রঙ
গেরস্থালির ফাঁকে কিংবা মাঘশেষে
এখনো রক্তবর্ণের বার্তা রটে
তারা খসতে দেখলে ফুলের নাম নিতে হয়
কোনো প্রত্মহাওয়া নেবো না সাথে
থাকবে অন্তরঅভিসন্ধি
অন্ধকার
পাতার মচমচ ধ্বনি
সপ্তাশ্বের আসর ঘিরে
এক রাত্রির সাধ হবে
বৃত্তাবদ্ধ হবার
ধার করা আলোয় আমরা দেখে নেব
পরস্পরমুখ
চৈত্রের শুরুতেই ঘটে যাবে
নক্ষত্রনামে খেলা
আমাদের দির্ঘজটলা চা-সিগারেটে
ক্রমশ জড়ো হবে শব্দবন্ধ
কখনো অকস্মাৎ জ্বলে উঠবে আগুন
আর কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম থাকবে না আগুনের
অন্ধকার বুক চিরে মাঝে মাঝে
উচ্চারিত হবে ফুলের নাম
নদি তারা ও পাতার গল্প
নিয়ন আলোয় পরস্পর দেখেছি পথ
একটা তারা ছিলো দূরে
কোনো নামে ডাকিনি
একটা অঙ্ক দু’জনে জানি
দু’জন দু’দিকে যাব
মাঝখানে মিটিমিটি
একটি তারা পাব
দিনের আলোয় দেখেছি মুখ
আমাদের খেলা ভাঙেনি
আজও প্রহরকে প্রিয় নাম বলিনি
দিনের দ্বিধা সরে গেছে মাত্র
একটা পাতাও পারিনি