যে যুবক ঘুমিয়ে আছে
যে যুবক ঘুমিয়ে আছে
নেশার ঘোরে কিংবা অন্তর্জালে
সভ্যতার অবিনাশী গান
তার কানে তুলে দাও।
পরম মমতায় তার হাতে তুলে দাও-
মরণজয়ী চেতনার ঝান্ডা
যে যুবক ঘুমিয়ে আছে-
ঘুমের ঘোরে সে যেন ভুলে না যায়
যুবক অর্থ- অনন্ত অসীম ছুঁয়ে দেখা
যুবক অর্থ- অচেনাকে চিনে নেওয়া
যুবক অর্থ- অন্যায়ের মুখে দাঁড়িয়ে
অসহায় মানুষের পাশে অবিনাশী গান-
অনন্ত অসীমে জেগে থাকা
পদাঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ করে বের হওয়া
যুবক অর্থ- দুর্গত বানভাসী মানুষের
পাশে দাঁড়িয়ে আর্তসেবা করা
যুবক অর্থ- দেশ গড়ায় নিজেকে
সীমাহীন ত্যাগী হওয়া।
যে যুবক ঘুমিয়ে আছে
তাকে জাগাও
তার কানে মন্ত্র দাও-
সমাজ পরিবর্তনের
অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলমন্ত্রে
তাকে জাগাও; তার বুকে-
দ্রোহের অগ্নিশিখা জ্বেলে দাও…
জীবনের খন্ডিত মৃত্যু
[জীবনানন্দ দাশ শ্রদ্ধাষ্পদেষু]
সময়ের সেতু পথ ধরে ধরে
যতিহীন শতাব্দীর সূর্য রাত্রি নক্ষত্র
মাঘসংক্রান্তির রাতে
অন্ধকার থেকে সময়ের তীরে
চারিদিকে প্রকৃতির প্রেম নিয়ে
মাঠের গল্প গান শোনাবে বলে
ছায়া আবছায়ায় পরস্পর-
আলেয়ায় পিপাসার গান হয়ে তোমাকে
ক্যাম্পে প্রেম নিবেদন করে-
সুরঞ্জনা- কথা দাও
অঘ্রান প্রান্তরে অন্ধকার থেকে
একটি প্রেমের কবিতা অবসরে-
মৃত্যুর আগে অনেক নদীর জল
হাজার বছর শুধু বোধ জন্মায়
অবেলায় খেলা করে
জীবনের খন্ডিত মৃত্যু
এবাদত
কবিতা লেখাই আমার এবাদত।
আমি একটি কবিতা লিখলেই-
আমার এক ওয়াক্ত এবাদত হয়ে যায়
আমি একটি কবিতার জন্য
এক ওয়াক্ত এবাদতের জন্য
নিসর্গ নিমগ্ন থাকি।
আমার মানসলোকে বহুকৌণিক আলো
বিচ্ছুরিত হয়
ধ্যানে কবিতার পঙ্ক্তিমালায় তসবি জপি
আমি যতই ধ্যানস্থ হই- ঈশ্বর প্রেমে মজি
কবিতার সরস বাক্যে ঊষর মাটি সুধাময় হয়
আমি ধ্যানস্থ হই আর কবিতায় তসবি জপি।
ঈশ্বর ধ্যানে প্রকৃতি যুক্ত হয়, প্রেম যুক্ত হয়
প্রেমের রসায়নে আমি সিক্ত হই, ভুলে যাই
জাগতিক চারপাশ; আমি আমাতে লীন হয়ে যাই।
জেগে ওঠো সতর্ক প্রহরা দাও
এখন চারদিকে সতর্ক প্রহরা দাও-
নইলে দেখবে- তারা সব কিছু
খুবলে খেয়ে নেবে-
দখলে নিতে চাইবে কিশোরীর শরীর
এক এক করে খুলে ফেলবে সবকটা কপাট
পৃথিবীর সব কিছু দখলে নিতে চায়!
ওরা কারা?
কারা ওদের মাথায় হাত রাখে?
সবাই জেগে ওঠো-
একটা সতর্ক প্রহরা চাই
চাই একটা ঝাঁকুনি
প্রলম্বিত শাখাগুলো
এখনই ছেটে দেওয়ার সময়
এখনই জেগে ওঠার সময়
চারদিকে সতর্ক প্রহরা দাও…
পোয়াতি ধানের সাথে সখ্য
আমার বাবা-দাদা কিংবা নানা
কেউ কৃষক ছিল না; তবে তাদের ধানি জমি ছিল
সেখানে ফসল ফলতো আর ধানের মৌ মৌ গন্ধে
পুরো উঠোন ভরে যেত।
আমার বাবা কৃষক ছিল না-
তবে আমাকে নিয়ে ধানি জমিতে কাজ করেছেন
ধানি জমিতে ধানের চারা রোপন করেছি
আগাছা উপড়ে ফেলেছি; সার-কীটনাশক ছিটিয়েছি,
শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়েছি।
ধানি মাঠের আলপথে বসে খোলা আকাশে
দুপুরের খাবার খেয়েছি-
লাঙ্গলেরমুঠ চেপে ধরেছি রুখু জমিতে।
আমার বাবা কৃষক ছিল না-
তবে আমি কৃষকের কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছি।
ঈর্ষা
ঈর্ষার অনলে ভূমি পুড়ে সর্বনাশ
মাটির শরীর যেন কমলা রোদ্দুর
মনের গহিন স্বপ্নে নীল রাত্রিবাস
নিজের অপারগতা এক সমুদ্দুর।
নিজ নাক কেটে পর যাত্রা করো ভঙ্গ
এ কেবল অভিমান ব্যর্থতার কলি
মনের অনলে জ্বালো জীর্ণ নিজ অঙ্গ
বোশেখি প্রেমের শত ঝরা পদাবলি।
মানবিক পৃথিবীর সোনালি আকাশ
ঝরে পড়ে বেদনায় বক্ষ পুনর্বার
ভালোবাসা মেদুরতা ছড়ায় সুবাস
ভাবনায় জমে থাকে গাঢ় অন্ধকার।
যতটা রেখেছো মনে সঞ্চিত আগুন
এলোকেশী বারবার করেছো তো খুন।
এখনও শুনতে পাই
তার সাথে পথেই দেখা হয়েছিল
হয়তো কোনো জনাকীর্ণ রাজপথে-
এখন সে কথা আর মনে পড়ে না
শুধু মনে পড়ে লোকটি মন্ত্রের মতো
কিছু বাক্য উচ্চারণ করে দ্রুত চলে যায়
আমি আজও লোকটিকে খুঁজে ফিরি
আজও তার যাদুমন্ত্র কানে বাজে…
যে যুবক একাত্তর দেখেনি
কারা যেন গতরাতে আমার কানের কাছে
চুপিসারে বলে গেল-
বিজয়ের মাসে একবার-
শুধু আর একবার জ্বলে ওঠো-
বিজয় নিশান তুলে ধরো।
বুকের ভেতর যে তাজা গ্রেনেড উসখুস করছে
তাকে সঠিক নিশানায় ছুঁড়ে দাও।
যে যুবক একাত্তর দেখেনি-
তাকে সঠিক পথের দিশা বলে দাও
তার এখন সামনে বাড়ার সময়
তার হাতে তুলে দাও লাল-সবুজের পতাকা।
বাস্তুভিটা
বাসুদেব পোড়া বাস্তুভিটায় নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে
উঠোনে বৃদ্ধা মা, প্রিয়তম স্ত্রী আর দুই ছেলে
তারাও বাকরুদ্ধ। বাস্তুভিটা থেকে এখনও মিনমিনে তাপে
ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে আকাশে নালিশ করতে উড়ে যাচ্ছে।
আমরা সমবেত হয়েছি- ওদের সমবেদনা জানাতে।
বাসুদেব জানে- যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তারাও আসবে-
জানাবে সমবেদনা; আর অচিরেই তাকে
অজানায় পাড়ি দিতে হবে।
বাসুদেব আসে বাসুদেব যায়, পথের নিশানা তার
জানা নেই। জানা নেই, কার কাছে নালিশ করবে!
তবু বাসুদেবরা জেগে থাকে অসীম সাহস বুকে বেঁধে।
ফেরারি
কালের কলস থেকে
কবিতার নিখোঁজ শব্দগুলো
পথহারা পাখির ঝরা পালক হয়ে
ফেরি করে যত্রতত্র
প্রিয়জনেষু খুঁজে বেড়ায়
চিরচেনা ধূসর মুখ
কবিতার লিরিকে
বিন্দু বিন্দু শিশির জমে
নিজেকে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখি
নৈঃশব্দ্য রাত্রিদিন।