004746
Total Users : 4746
Charbak magazine logo
sorolrekha logo

লেখক তালিকা

জন্ম. ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে। সম্পাদনা করছেন ‘চারবাক’ ও ‘সরলরেখা’। যুক্ত আছেন সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’র সাথে। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: মায়াহরিণ, কাব্যগ্রন্থ ২০০৮, চারবাক, বুদ্ধিজীবীর দায়ভার, সম্পাদনা ২০০৯, সংবেদ, পক্ষ—প্রতিপক্ষ অথবা শত্রু—মিত্র, প্রবন্ধ ২০১০, চারবাক, নির্বাচিত চারবাক, সম্পাদনা ২০১১, চারবাক, নাচঘর, কবিতা, ২০১২, চারবাক, ভাষা সাম্প্রদায়িকতা অথবা সাম্রাজ্যবাদি খপ্পর, প্রবন্ধ, ২০১৩, চারবাক এবং মুখোশ, কবিতা, ২০১৬, চারবাক, করোনাকালে, কবিতা, ২০২২, চারবাক।
View Posts →
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
View Posts →
প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ
View Posts →
বাংলাদেশের উত্তরউপনিবেশি ভাবচর্চার পথিকৃৎ ফয়েজ আলম একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। উপনিবেশি শাসন-শোষণ আর তার পরিণাম, রাষ্ট্র ও সমধর্মী মেল কর্তৃক ব্যক্তির উপর শোষণ-নিপীড়ন ও ক্ষমতার নানামুখি প্রকাশ আর এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন তিনি। বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের নয়াউপনিবেশি আর্থ-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর রাষ্ট্র ও স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর শোষণচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার লেখা আমাদের উদ্দীপ্ত আর সাহসী করে তোলে। রুহানিয়াত সমৃদ্ধ দার্শনিক ভাবচর্চা আর সাহিত্যিক-রাজনৈতিক তত্ত্বচর্চাকে একসাথে কবিতার দেহে ধারণ করতে সক্ষম ফয়েজ আলমের সহজিয়া কবিতা। তার কবিতায় তিনি মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তার কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার যোগীরনগুয়া গ্রামে। বাবা মরহুম শেখ আবদুস সামাদ, মা সামসুন্নাহার খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ পাশ করার পর প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য এমফিল. ডিগ্রী লাভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ব্যক্তির মৃত্যু ও খাপ-খাওয়া মানুষ (কবিতা, ১৯৯৯); প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি ( গবেষণা, ২০০৪); এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজম (অনুবাদ, ২০০৫); উত্তর-উপনিবেশি মন (প্রবন্ধ, ২০০৬); কাভারিং ইসলাম (অনুবাদ, ২০০৬), ভাষা, ক্ষমতা ও আমাদের লড়াই প্রসঙ্গে (প্রবন্ধ, ২০০৮); বুদ্ধিজীবী, তার দায় ও বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব (প্রবন্ধ, ২০১২), জলছাপে লেখা (কবিতা, ২০২১), রাইতের আগে একটা গান (কবিতা, ২০২২); ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (প্রবন্ধ, ২০২২)।
View Posts →
কবি ও গল্পকার। যুক্ত আছেন চারবাক সম্পাদনা পরিবারের সাথে।
View Posts →
কবি। জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়।
View Posts →
প্রাবন্ধিক। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। বর্তমানে প্রান্তীয় কৃষক-মধুচাষি, বেতবাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন নিয়ে কাজ করছেন।
View Posts →
জন্ম— জুন, ০৬, ১৯৭৭। জন্মস্থান— উত্তর গোবীন্দর খীল, হাঁদু চৌধুরী বাড়ী, পটিয়া, চট্টগ্রাম। (শৈশব কৈশোর ও তারুণ্যের সময়যাপন) বেড়ে ওঠা (পূর্ব্ব বালিয়াদী, মীরশ্বরাই, চট্টগ্রাম) নানার বাড়ীতে। প্রকাশিত কবিতার বই— ফুলেরা পোষাক পরে না (সাল: ২০১৮, প্রকাশক : মনফকিরা, কলিকেতা)। প্রকাশিতব্য বই— অর্দ্ধনারীশ্বরবাদ : প্রকৃতিপুরুষতত্ত্ব (নন্দনতত্ত্ব), বটতলার বয়ান (ভাষাতাত্ত্বিক গদ্য) ও উদ্ভিদপ্রতিভা (কবিতা)। সম্পাদক— চারবাক।
View Posts →

সম্পূর্ণ লেখক তালিকা

আমরা যেদিন ব্রীজ দেখতে যাই

আমরা যেদিন ব্রীজ দেখতে যাই সেদিন আকাশে কোনো মেঘ থাকে না। আকাশ থাকে ঝকঝকে নীল। সেদিন কোনো গুমোট গরম থাকে না। ঝিরঝির বাতাস থাকে। নরম হলুদ রোদ থাকে। সেদিন ঘাসগুলো খুব সবুজ দেখায়। গাছগুলো মায়াবী সুন্দর দেখায়। আমরা যেদিন ব্রীজ দেখতে যাই সেদিন স্বপ্না সুন্দর করে চোখে কাজল টানে, শাড়ি পরে। আমি পাঞ্জাবী আর জিনস পরি। স্বপ্নাকে আমি শাড়ি পরা দেখতে পছন্দ করি, স্বপ্না আমাকে পাঞ্জাবী পরা দেখতে পছন্দ করে।

ব্রীজ দেখতে যাওয়াটা আমাদের প্রিয় একটা শখ। আমরা দুজনেই ব্রীজ পছন্দ করি। ব্রীজ দেখতে আমাদের খুব বেশি দূর যেতেও হয় না। আমরা শহরের এমন একটা জায়গায় থাকি যেখান থেকে মাইল দুয়েক পুব দিকে গেলেই নতুন আবাসনের শহর। ওখান থেকে রিক্সা করে ব্রীজ দেখতে যাওয়া যায়। ওখানে গেলে মনে হয় না শহরের ভেতরে আছি। মনে হয় শহর ছাড়িয়ে অনেক দূরে এসে পড়েছি। আবাসনের এই প্রকল্প বিশাল এলাকা নিয়ে। প্রকল্পের শুরুতে বড় সুন্দর গেট। গেট দিয়ে ঢুকলেই সারি সারি খালি প্লট। সামনের দিকে কয়েকটা প্লটে বিল্ডিং ওঠছে আর ফাঁকে ফাঁকে কিছু। স্কুল কলেজ হচ্ছে কিছু। তারপর শুধু ফাঁকা জায়গা। নিচু আর জলাভূমি ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে এই বিশাল আবাসন প্রকল্প। প্রকল্পের মাঝখান দিয়ে বিশাল পাকা মেইন রোড। সেই রোড দিয়ে রিক্সা নিয়ে ভেতরের দিকে যেতে থাকলে রাস্তার দুপাশে বিস্তীর্ণ ফাঁকা জায়গা। সেই জায়গায় এক ফুট আকৃতির দেয়াল ঘেরা বিভিন্ন সাইজের প্লট। প্লটগুলোতে সুন্দরভাবে পৌঁছার জন্য মেইনরোড থেকে চলে গেছে অনেক শাখা রাস্তা। রাস্তার দুপাশ ঘাসে ছাওয়া। মেইন রোড ধরে কিছুদূর গেলেই দেখা পাওয়া যায় ব্রীজটার। সরু খালের ওপর ব্রীজ্। খুব সুন্দর ঝকঝকে নতুন, সাদা রং করা। ব্রীজ পেরিয়ে আবার আবাসন প্রকল্প। অনেক অনেক দূর পর্যন্ত। রাস্তার দুপাশে সারি সারি গাছ, অনেক কৃষ্ণচূড়ার কোথাও দু একটা কাঠগোলাপের গাছ। যতদূর চোখ যায় ঘন সবুজ। গাছের নিবিড় মায়া। বাতাসের আদুরে ঝাপটা । শহরের এত কাছে এত সুন্দর প্রকৃতির এরকম ছোঁয়া ভাবা যায় না। আমরা এই জায়গাটা খুব পছন্দ করি। তবে এখানে আসি ব্রীজটার আকর্ষণে। উঁচু ব্রীজটার উপর দাঁড়িয়ে আশপাশটা দেখতে অসম্ভব ভালো লাগে। ব্রীজে দাঁড়ালে গায়ে খুব বাতাস লাগে। আমি আর স্বপ্না ওখানে দাঁড়িয়ে বাতাসের দাপাদাপি উপভোগ করি। স্বপ্নার খোলা চুল বাতাসে উড়তে থাকে। আঁচল উড়তে থাকে। স্বপ্নাকে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়। ব্রীজ পেরিয়ে কখনও আমরা আরো দুরে চলে যাই। তারপর সন্ধ্যার কাছাকাছি সময়ে এসে আবার ব্রীজে দাঁড়িয়ে সূযাস্ত দেখি। তারপর বাসায় আসি। প্রায় অন্ধকারের ভেতর দিয়ে রিক্সা করে আসতে আমাদের খুব ভালো লাগে।
স্বপ্নাকে বিয়ে করেছি পাঁচ বছর। আমাদের এখনো কোনো ছেলে-মেয়ে হয়নি। তিনবছর ধরে আমরা সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছি। তার আগের দু বছর জন্ম নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমাদের ছিমছাম সংসার। আমি একটা ফার্মে আছি। ভালো বেতন। আমি সুদর্শন চেহারার র্স্মাট পুরুষ। স্বপ্না গৃহিণী। খুব গুছিয়ে সংসার করে। শ্যামলা রংয়ের মায়াবী চেহারায় মেদহীন শরীর ওর। আমরা ভালো আছি। সংসারে, বিছানায় সব জায়গাতেই আমাদের ভালো পারফরমেন্স। আমি মোটামুটি ভালো একটা স্বামীর দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট। স্বপ্নার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করি। মাঝে সাঝে ভালো উপহার দিয়ে চমকে দেই। স্বপ্না যথেষ্ট বুদ্ধিমতী, আমাকে যত্ন করে। রান্নার হাত খুব ভালো, নতুন নতুন আইটেম রান্না করে খাওয়াতে পছন্দ করে। আমাকে খুশি রাখতে চায়। আমাদের সংসার আধুনিক জিনিস দিয়ে ছবির মতো করে সাজানো। স্বপ্না সব কিছু ঝকঝকে চকচকে করে রাখে। আমরা সুখি দম্পতি হিসেবে পরিচিত।
দাম্পত্য নিয়ে আমাদের তীব্র দ্বন্দ্ব বা অভিযোগ নেই তবে তিন বছরে আমাদের ঘরে নতুন কেউ এলো না। আমরা দুজন অবচেতনে দুজনকে দায়ী করি। ডাক্তারের মতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবু আমার মনে হয় বোধহয় স্বপ্নাই এজন্য দায়ী। ডাক্তার বিষয়টা ধরতে পারছেন না । বুঝতে পারি স্বপ্নাও মনে মনে ভাবে আমিই হয়তো দায়ী। ও আমাকে একদিন বলেছিলো- তুমি কি আর একটা ডাক্তার দেখাবে নাকি?
কেন?
না, মানে কোনো সমস্যা থাকতেও তো পারে।
সেটা তোমার ক্ষেত্রেও তো হতে পারে।
পারে। কিন্তু আমার তো সব ঠিক আছে। নিয়মিত পিরিয়ড হচ্ছে, ডাক্তার বলছে কোনো সমস্যা নেই।
সেটা তো ডাক্তার আমাকেও বলেছেন।

আমরা দুজন দুজনকে সহ্য করি না, পছন্দই করি। তবু স্বপ্না আমাকে খুব নোংরাভাবে সন্দেহ করে। আমিও স্বপ্নাকে বিশ্বাস করি না। অফিস থেকে ফিরে বাথরুমে প্রবেশের সাথে সাথেই স্বপ্না আমার প্যান্টের দুই পকেট সার্চ করে। আরো একটু সুযোগ পেলে এক ঝটকায় আমার মোবাইলের কললিস্ট দেখে ফেলে। আমি এসব জেনেও না জানার ভান করি। অস্বীকার করি না যে, আমার দু’একজন বান্ধবী আছে তবে মোবাইলে প্রেম করার মতো সময় আমার নেই। তবু আমি এখন অনেক সাবধানী। নোংরা সন্দেহের কারণে বাসায় আসার আগেই ভালো করে মোবাইলের কললিস্টের নাম্বার ডিলিট করে দেই। অনেকদিন সন্দেহভাজন কিছুই ঘটেনি। তারপরও স্বপ্না গলা পরিবর্তন করে অন্য নাম্বার থেকে ফোন করে আমাকে পরীক্ষা করে। আমার খরচের একটা খসড়া নকশা একে দেখতে চায় কোথায় কাকে কত দিয়েছি। বান্ধবীদের পেছনে আমার খরচ কতো? অনেকদিন আগে আমার এক বান্ধবী লাবনীর একটা রুমাল ছিলো আমার পকেটে। রেস্টুরেন্টে ওর থেকে ওটা চেয়ে নিয়েছিলাম। ফেরৎ দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। ঐ একটা রুমাল এখনো আমার সংসারের দেয়ালে খুব ভালো ভাবেই লেপ্টে আছে।

সন্ধ্যায় স্বপ্না টেবিলে নাস্তা সাজায়। বেশির ভাগ দিন ও আমার পছন্দের নাস্তা বানায়। ওগুলোতে কামড় দিয়ে আমি প্রশংসা করি। চা খেতে খেতে আমরা স্বাভাবিক গল্প করি। স্বপ্না যখন নাস্তার কাপ পিরিচ ধুতে যায় আমি তখন ওর মোবাইলটা দেখি। অপরিচিত নাম্বার দেখলে সুযোগ বুঝে টুক করে টুকে নেই। ওইসব নাম্বারে পরদিন অফিস যেয়ে ফোন করি। বেশির ভাগই নারী কণ্ঠ পাই। সাথে সাথে রেখে দেই। দু একটা পুরুষ কন্ঠ পেয়েছি। ওদের সাথে কথা বলে বুঝতে চেয়েছি। সবাই যে কথা বলে এমন নয়। কেউ দু’একটা কথা বলেই লাইন কেটে দেয়। আমার সন্দেহ প্রবল হয়। ওরা কারা? ভেতরে ভেতরে জ্বলে মরি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস স্বপ্নার পুরুষ বন্ধু আছে।

আমরা এ রকম বিশ্রি সন্দেহ করি। পুরুষ বন্ধু ছাড়াও আমার ধারনা স্বপ্না বিয়ের আগে প্রেম করতো। খুব গভীর প্রেমে মত্ত ছিলো। কিন্তু স্বপ্না ওর প্রেমিককে বিয়ে করলো না কেন? আমার ধারণা ছেলেটা প্রতিষ্ঠিত না। স্বপ্নার ঐ শ্যামলা রংয়ের নরম কোমল ত্বক, বুদ্ধির উজ্জ্বল দুচোখের দিকে তাকিয়ে আমি নিশ্চিত হই এই মেয়ের পুরুষ বন্ধু না থেকে পারেই না। এই মেয়েকে পুরুষ পছন্দ করবেই। আর ও তাতে সাড়া দিবেই। স্বপ্নার চোখেই আছে একটা অবিশ্বস্ততা ও রহস্যের লুকোচুরি খেলা। এখন ও সাড়া কতটুকু দেয় তা নিয়েও আমি একটা ঘোরপ্যাচের মধ্যে থাকি। দু একদিন যখন সন্দেহে মাথা গরম হয়ে ওঠে এবং মনে হয় এখন বাসায় গেলেই দেখতে পাবো আমার বউয়ের বিছনায় অন্য কেউ। খুব অসময়ে ওকে হাতে নাতে ধরতে আমি বাসায় চলে এসেছি । কিন্তু কোনোদিনই কিছু পাইনি। তাতে যে আমার সন্দেহ চলে গেছে ওকে ধোয়া তুলশী পাতা মনে হয়েছে তা নয়। মনে হয়েছে ও খুব লাকী, ও খুব চালাক মেয়ে।

বিয়ের আগে পলির সাথে আমার প্রেম ছিলো। পলি যথেষ্ট সুন্দরী। পলির সাথে আমার পরিপূর্ণ কোনো শারীরিক সম্পর্ক ছিলো না। শুধু একদিন আবেগবশত আমাদের বাড়াবাড়ি হয়েছিলো, তবে আমরা যথেচ্ছাচার করিনি। বিয়ের জন্যই প্রতীক্ষা করেছি। পরে পলিকে বিয়ে করা হয়নি। ওকে আমার ঘরোয়া মেয়ে মনে হয়নি। সংসারী মনে হয়নি। ওর মধ্যে একটা উড়– উড়– ভাব ছিলো। সেজন্য আমাদের বিয়ে হয়নি। পলির সাথে এখনো আমার মাঝে মাঝে কথা হয়। কেন যেন ও এখনও আমাকে আকর্ষণ করে। ওর সাথে আমার কোনো শরীরী সম্পর্ক নেই। ও যদি ফোন করে বলে- আজ বিকেলে একটু আসতে পারবে। আমি না বলার শক্তি রাখি না। কিন্তু সত্যি বলছি এটা প্রেম নয়, কিন্তু কেন জানি না বলতে পারি না। ওকে এড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। স্বপ্না পলির কথা জানে। ওকে স্বপ্না একবারেই সহ্য করতে পারে না। স্বপ্না আর পলিকে যদি পাশাপাশি তুলনা করি তবে স্বপ্নাই আমার কাছে বেশি নাম্বার পাবে। পলির সাথে আমার সেরকম কোনো সম্পর্কও নেই। তবু পলির সাথে যোগাযোগ আছে এটা স্বপ্নাকে জানাই না। কারণ স্বপ্না আমাকে আর পলিকে বিশ্বাস করে না। ওর ধারণা আমরা খুব নিয়ম করে মিলিত হই।
শফিক আমার ভালো বন্ধু। ওর সাথে একসময় আমার ছোটখাট ব্যবসা ছিলো। ও আমার বাসায় আমি ওর বাসায় প্রায়ই যেতাম। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় ও স্বপ্নাকে পছন্দ করে। ওর সাথে স্বপ্নার একটা সম্পর্ক আছে। আমি বাসায় ছিলাম না এমন দু একদিন ও আমার বাসায় এসেছে। স্বপ্না তাকে বসিয়ে নিজে হাতে চা বানিয়ে খাইয়েছে। আমি বাসায় গেলে স্বপ্না বলেছে- আজ শফিকভাই এসেছিলো অনেকক্ষণ গল্প করলো। ওনার গল্প শুনতে খুব ভালো লাগলো। আমি নেই স্বপ্নার সাথে শফিকের এতো কিসের গল্প? শফিকের সাথে স্বপ্নার গল্প করতে কেন এতো ভালো লাগা? ব্যাপারটা আমার কাছে বিরক্তিকর অপছন্দের কিন্তু স্বপ্না বা শফিককে কিছু বলতে পারি না। আমার বন্ধু ইমরান খুব ফুর্তিবাজ। প্রায়ই দেখি স্বপ্নার সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলে। স্বপ্না মাঝে মাঝেই বলে- ইমরান ভাইয়ের সাথে আমার খুব মিলে। কি মিলে? এইসব ছাড়াও ওর কিছু বিষয় খুবই রহস্যজনক। ওর একটা খোপার কাঁটা আর কাঠের একটা অরনামেন্ট বক্স আছে। বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। ওই দুটো বস্তু ওর খুব প্রিয়। যক্ষের ধনের মতো ও দুটো আগলে রাখে। ও দুটো ওকে কে দিলো ? আমরা ধারণা ওগুলো ওর প্রেমিকের দেয়া উপহার।
আমার বা স্বপ্নার সন্দেহ নিয়ে আমরা কেউ কোনোদিন মুখ খুলি না। না স্বপ্না, না আমি। আমরা ইর্ষার লাভা আর নর্দমার কালো পানি নিয়ে আমরা গুমরাই। আমি যেটা করি স্বপ্নাকে ঘরের ভেতর বন্দী করে রাখতে চাই। একা কোথাও যেতে দেই না। কোথাও যেতে চাইলে প্রকাশ্য বিরক্তি দেখাই। আমার এরকম বিরক্তি দেখে ও কোথাও যাবে বলার সাহস করে না। তবে খুব কষ্ট পায়। ক্ষোভে পোড়ে। স্বপ্না যেটা করে আমার একটু ফিরতে দেরী হলেই মুখ অন্ধকার করে থাকে। কথা বলে না। আমাকে দেখেও মোবাইলে কথা বলায় ব্যস্ত থাকে। তারপর একদিন হয়তো ভালো করে রাধে না। স্বপ্নাকে কখনও ওর সব গুণ আর প্রতিভা প্রকাশ করতে দেই না। ও ভালো গান করতো কিন্তু আমি কোনো উৎসাহ দেখাইনি। ও একটু একটু ছবি আঁকতে পারতো, আমি বলেছি-ছবি আঁকা ভালো নয়। স্বপ্না এগুলো ভালোভাবে নেয়নি। আমার বন্ধু তানভীরের বউ নাসিমার গানের একদিন প্রশংসা করায় স্বপ্না দাতে দাত চেপে আমাকে বলেছিলো- হিপোক্রেট। আমার ধারনা স্বপ্না আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে গোপনে গান শিখে এবং ওর ছেলে বন্ধুদের মোবাইলে গান শোনায় কারণ একদিন আমি ওর মোবাইলে এমন একটা ম্যাসেজ দেখেছিলাম- তোমার কন্ঠ অপূর্ব।
স্বপ্না আমাকে আমার আপনজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চায়। আমার মা, বোন, আত্মীয় স্বজন কাউকেই ও সহ্য করে না। আমার ভালো উর্পাজন তবু ও আমার মা বোনকে কিছু দেয়া পছন্দ করে না। আমাদের বাসায় মাকে এনে রাখা যায়, মার শরীর ভালো না চিকিৎসার প্রয়োজন। কিন্তু স্বপ্নাকে কোনোভাবেই রাজী করানো যায় না। এইভাবে আমরা এক অপরের কাছে প্রশ্নবোধক হয়ে থাকি। আমরা তেলে আর জলে মিশি না। আমাদের মনে হয় দাম্পত্য এক সাজানো নাটক। আমি আর স্বপ্না একটা নাটকে শুধু অভিনয় করে চলছি। আমাদের ভেতরে কোনো প্রেম নেই, কোনো বন্ধন নেই।
কিন্তু আমরা যেদিন ব্রীজ দেখতে যাই সেদিন আমরা থাকি চনমনে, চাঙ্গা। সেদিন স্বপ্নাকে কিশোরীর মতো উচ্ছ¡ল দেখায়। খুব পরিপূর্ণ, সুখি সুখি দেখায়। সেদিন আমার স্বপ্ন্ার রান্নার কথা মনে হয় আহ্! কি অসাধারণ! সেদিন এই গোছালো জীবন, অফিস থেকে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে গোছালো হাতে চা, রাতের খাবার শেষে টিভি দেখা ,স্বপ্নার কোমর ছুঁয়ে বাতি নিভেয়ে শুয়ে পড়া, দুজনে মিলে প্ল্যান করে পর্দার কাপড় কেনা সব কিছু অনিন্দ্য সুন্দর মনে হয়। মনে হয় আহ্ জীবন কি সুন্দর! সেদিন খোলা মাঠে সবুজের মাঝে দাঁড়িয়ে স্বপ্না মনের আনন্দে, মনের ভুলে দু এক কলি গান করে। আমার মনে হয় স্বপ্নাকে আমি গান শেখাবো, ওকে রং তুলি কিনে দেবো। স্বপ্না মার জন্য একটা গরম শাল কেনার কথা বলে। সেদিন পাঞ্জাবীর বোতাম খুলে আমার লোমশ বুকে হাত রেখে স্বপ্না দাঁড়িয়ে থাকে। স্বপ্নার চকচকে চোখের দিকে তাকিয়ে আমি ভাবি পৃথিবীতে এতো সুন্দর চোখ আর কারো নেই।
সেদিন আমরা ব্রীজ দেখি, ব্রীজ থেকে ভূমি দেখি।
স্বপ্না বলে- দেখছো ব্রীজটা কি সুন্দরভাবে দুই খন্ড মাটি জোড়া দিয়ে এক করে রেখেছে।
আমরা মাঠে হাঁটি, ঘাসের গন্ধ নেই। বাতাসে ফুলের গন্ধ নেই। ব্রীজে উঠি। বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকি।
উঁচু ব্রীজ থেকে আমরা কখনও নীচের দিকে সরু নালাটার দিকে তাকাই-
আমি বলি- উহ্ কি কালো নোংরা পানি!
স্বপ্না বলে – কি দুর্গন্ধ!
আমরা বেশিক্ষণ নালাটার দিকে তাকাই না চোখ ফিরিয়ে নেই।
নীচে বহমান কালো দুর্গন্ধের নর্দমার উপর দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দর ঝকঝকে সাদা ব্রীজের ওপর দুজন দাঁড়িয়ে থাকি। বাতাস দুগন্ধ ছাপিয়ে কাঠগোলাপের গন্ধ নিয়ে আসে। আমি আর স্বপ্না হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকি। দুই পাশের সবুজ ঘাস দেখি। গাছের পাতাগুলোর নাচন দেখি। শরীরে বাতাসের ষ্পর্শ নেই। তারপর দুজনে কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকিয়ে থাকি। দেখি ঘাসের ওপর ছড়িয়ে আছে লাল কৃষ্ণচূড়া।
স্বপ্না বলে- কি সুন্দর! কি লাল!
আমি বলি-কৃষ্ণচূড়া গাছের একটা বৈশিষ্ট্য কি জানো ?
স্বপ্না বলে – কি?
কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল না ফুটলে গাছটা চোখে পড়ে না, মনেই হয় না এখানে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে।

শেয়ার করুন: