হরফেরা উইড়া যায়
তোমার কোনো খবর নাই
উইড়া গেছ হাওয়ায়? বাতাসে? আকাশের দেশে?
এইখানে রাইত আন্ধার
কড়াগুলা নইড়া উঠে স্বপনের দেশে
হাওয়া নাই নীল নাই আন্ধাইর সকল
ছবির পিছনে ছবি গাঙের পিছনে গাঙ্
আঁকে বৈশাখী নাকছাবি।
তোমার কোনো চিঠি নাই
হরফগুলা উইড়া যায় বিবাগের পাখি
তবু আমি খাম খুইলা দিনরাইত আঁকি
কিছু রৈদ আর তার কিছু ছায়াছবি।
তোমার ছায়াগাছ
এইখানেই বাস কর যেইখানে দাঁড়ায়া আছ।
দূর কোনো দূর না
আমার ভিতর
বড়জোর সাড়ে তিন হাত মাটির সমান।
তোমার ছায়াটা লম্বা
আমার যত পাখি তোমার ছায়ায় বসুক
উড়াই আর যা কিছু বাকি
তোমার ছায়াগাছের ডালে ডালে, উড়ুক।
আমার মাটির উপরে তুমি গাছ
তুমি গাছের উপরে আমার পাখিগান
শেষের বেলার সুরে বাইন্ধা দিও
মুইছা যাক সমাজ সংসার।
মা
লয়্যা যাইও তোমরা যা যা লইতে চাও
রূপার বাসন পিতলের থালাগুলি
সোনার গয়না আর যা কিছু।
সাহেব বিবি আঁকা বিবাহের উপহার গেলাসগুলি
আমি ভরি মনের মদে
কুশি কাটায় বুনি উল।
লয়্যা যাইও তুমরা যা যা লইতে চাও
শাড়ি গয়না বিদেশী থালবাটি গেলাস।
একবেলায় আমি বিছরাইতাম তার
জরির ফিতা-লেস সুইয়ের সূতা সেলাইয়ের বাক্স
আংটা দেয়া নাকফুল।
এইবেলা মাটি বিছরাই
মায়ের পিছে পিছে হাঁটি
তার গায়ের গন্ধে একদিন পৌছাইয়া যাবো
তার সাড়ে তিন হাত মাটির ঘর
এইমতো সাধ।
নিরাক্রে দাড়ি দেওন যাক
এই বাদলায় তিনটা দিন কিবা সাতটা
রাইতের পহর শেষ হইছে মনে কইরা
এইখানে একটা নিরাবেলি দাড়ি দেয়া যাইতে পারে।
মানুষ নিজেরই কাছে এক অনচিনা আয়োজন
খুব চিনি মনে হয় যারে সে যে হয় না পরানের চিন
তার আছে বাড়ি আছে ঘর আছে ক্ষেত খামার
আর জমিজিরাতের ভাগীদার
যার কিছু নাই সেও ভাগ দিতে দিতে
বেইচা দিছে কোন অনজানায় নিজের আসমান
তবু, তার মনে হয় তারার মালা গাঁথি
ফুলের মধু খাই
উইড়া যাই অচিন বনে
হায়, চিনবনে তার পাঁখ কাটা পইড়া গেছে কেমনে কই?
কাটতে যদি না দিই আমি কার সাধ্য চুরি করে আমার বেবাক!
এইসব ভাবতে ভাবতে আইসা সামনে দাঁড়ায় এক নিরাকের কাল
বুকের ভিতরে নিরাক
ফরফর শব্দ তুইলা উইড়া চলে নিরাকপঙ্খি…
এইখানে মনে কয় একখান দাঁড়ি দেওন যায়।
গত জনমের দাগ
যদিও আসমানে ভরা চান ঢালে রোশনাই
তবু, ভইরা উঠে না এই রাইত
কপালে নীল হয়্যা ফুইটা থাকে
গতজনমের সব দাগ..
চিনা অনচিনার মধ্যে কার জবান
তুমি অনচিনা বুলি, রপ্ত করা রীত।
আমার মায়ের মুখে মাঠে-ঘাটে-বাটে শুনা
খেয়ালে বেখেয়ালে বাজে পদ্যের উম
হয়্যা উঠে পরানের সুরাখ
টান দেয়, গাইয়া উঠে এক দুঃখের গীত।
তুমি তো সে না
তবে এ কার জবান বাজে আমার তিরাসের ঠোঁটে!
ঘুমে আর জাগনায় যারে জানছি আপন, জন্মের পহরে
মরবো যার বাঁস গায়ে লইয়া, সেইতো, তারে পরাণ দিছি।
তুমি কি আপন হইছিলা আমার
কোনো দিন কোনোকালে?
তয় তোমারে কেন আমার পড়তে হইছিল
কতশত দিনরাইত মাস বছর জুইরা?
কেন খুলতে হইছিল আন্ধাইরের একখান বেণী!
কেন বারেবারে যাইতে আসতে হইছিল
অলিগলি আদার বাঁদার দিয়া বহু দূর পথ?
কেন তোমারে আমার রপ্ত করতে হইছিল?
তয়, তুমি কেমনে হইছিলা আমার,
কইতে কি পারো একবার?
ওই যে আসমানের চান
বুঝি কি বুঝি না বেলায় মায়ের মুখে শুনছিলাম তার নাম
নিশুতি রাইতের আসমানে পাতা আদমসুরত
তারে তো আমার কোনো দিন পড়তে হয় নাই
জানতে হয় নাই একখান কিতাব খুইলা
কালপুরুষ
একদিন ফকফকা আসমানে দেখায়া আমার বাপে
চিনায়া দিছিল এইসকল
তয় তোমারে কেন আলাদা কইরা পড়বার লাগে!
তার পরে জানা লাগে দিলের খবর?
তোমারে শুনলেই কেন চিনতে পারি না,
চিনতে পারিনা কেন তোমার আচার?
পরাণ ভিজেনা কেন তোমার পরশে আমার….
ঘর বান্ধার স্বপ্ন আমার
আমি তো নিত-নিত ঘর বান্ধি
ঘরের সামনে কিছু সবুজ ঘাস
কিছু বিলের পানি কিছু উইড়া আসা কাইম
কিবা একটা শিউলি গাছ বসাই।
দেখি এই করে আসরের ওয়াক্তে গড়ায়
ঘরের সাথে আরও কত কি বান্ধনের রীত
আমাকে নিতনিত টানতেছে বেইলের কিনারায়
সূর্য ডুবতে বসে
আমার ঘর বান্ধার কাম
আসর হইতে মাগরিব-এশায় গড়ায়।
এই পৃথিবীতে কোনো কোরআন নাই,
নাই গীতা-ত্রিপিটক-বাইবেল
তুমি দিতে আসছিলা
দিতে দিতে একদিন আমি হয়া গেছ
আমি কেবল নিছি
নিতে নিতে কবে য্যান তোমাতেই মিইশা গেছি
দেয়া নেয়ার এই পৃথিবীতে এখন আর
কোনো তুমি নাই আমি নাই।
আমরা হইয়া ভাসি আর ভাসাই পৃথিবী
মহা সংসারে হাল বাই, মাটি চষি
গাঙ্গের পানিতে ছাড়ি পোনা মাছ
গাছের গোড়ার সাথে পুঁইতা রাখি আশা
হাল বাইতে বাইতে একদিন নাল জমি চাষের যোগ্য হবে
পুকুর ভইরা উঠবে ডিমঅলা মাছের আবাদে
বাগান জুইড়া কেবলই গাছের জঙলা
আমাদের কবরের উপর উঠবে এক নতুন আবাদী-ফসলি দুনিয়া
খাবারে ভরা মানুষের পাত।
সেই দুনিয়াতে কোনো কোরআন নাই
নাই তৌরাত-যবুর-ইঞ্জিল কিবা বেদ-গীতা-ত্রিপিটক-বাইবেল।
সেইখানে মানুষের ধর্ম হইবো চাষবাস
নিয়ত হইবো অঢেল ফসলের
মুনকির নাকির লিখবো হিসাব জনম জনম ধইরা
কত ফসলের করছিলাম আবাদ
কত মানুষের পেটে দিছিলাম ভাত
সেই দুনিয়ায় ইবাদতের নাম ‘ভালোবাসা’
ডাকনাম
বিশ্বাস করেন,
কোনোদিন ভাবিনাই দুঃখের চাষ করবো
ভাবিনাই সার দিয়া জন্মাবো যৌবনবতী গাছ
আর তাতে রৈদের রঙে ফলাবো দুঃখুফল!
কোনোদিন সাচ্চা দিলে দুঃখ দিয়া ভাবিনাই
কামিয়াব হবে আমার কবিতা
তবু আমার শরীর ভরা হরফ
মাঝরাইতে দেখি নিদ নাই
বাউলবাতাসে অন্ধ আমার দুই চোখ
তখন, কবির আঙ্গুল হতে ঝইরা পড়ে
টুপটাপ জোছনার ফুল!
আমার
তামার বরণ মুখের রং দুঃখের আঁচে
হঠাৎ দেখি লাগে যেন খাঁটি সোনার বরণ
আর, এইসব দু:খ-জোছনা-অন্ধ সুখ-বাসনারে
কারা যেন ‘কবিতা’ ‘কবিতা’ বইলা
ডাকনামে ডাকে।