রাত্র বাড়লে শরীরে রস ছোটাছুটি করে। এই রস প্রবল বেগে নামতে চায়। শরীরে এই রস আসারও কিছু ব্যাপার আছে। কারণ রাত্রি হলে সে তরল ঢালে। তরল ছাড়া জীবন চলে না। জীবনের গূঢ় দুরুহ জটিল বিষয়গুলো তরলে সরল হয়ে উঠে। চোখের সামনে হাজারো পর্দা খুলে যায়। তরল মাঝে মাঝে শরীরের সাথে মনেও রসের সঞ্চার ঘটে। সেই রস যথার্থভাবে নিক্ষেপণের জন্য যথার্থ জায়গার প্রয়োজন হয়। জায়গার অবশ্য তার কোনো অভাব হয় না। কারণ সে একটা বিশেষ পরিষদের সম্মানিত সদস্য। সে পরিষদ দেশ চালায়, জনগণ চালায়। হাতের ওপর পিঁপড়ে নিয়ে খেলার মতো তারা মানুষ নিয়ে খেলতে পারে। আজকাল তার কাছে মানুষ আর এ শহরটাকে প্লেনে বসে দেখা লিলিপুট মানুষ আর খেলনা শহরের মতো মনে হয়।
এই টেবিলটায় যাদু আছে। শেষ করার পরেও বসিয়ে রাখে। সে আজ একটু তাড়াতাড়ি শেষ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু টেবিলটা টেনে রাখছে। সে অবশ্য একা নয়। তার সাথে আছে বিশিষ্ট শিল্পপতি তমিজউদ্দিন। ঐ ব্যাটাও টেবিলের যাদুটা ভালো বুঝে। নিজে বসে থাকে আবার অন্যকেও বসিয়ে রাখতে জানে। শেষের পর আরো দুপেগ ঢেলে এহসান পাটোয়ারি বলে- আজ উঠতে হবে।
বলেন কি বস? এতো তাড়াতাড়ি?
না, রাত হয়েছে। একটু পরই বারোটা বেজে যাবে।
কি যে বলেন সবে তো সন্ধ্যা হলো। বারোটা বেজে যাবে। তো কি হয়েছে। বারোটা বাজার জন্যই তো বসে আছি।
আমার একটা দাওয়াত আছে। যেতে হবে।
দাওয়াত কি মধ্যরাতের নাকি বস? চোখ টিপে হাসে তমিজউদ্দিন।
পাটেযারি হা হা করে হাসে- না, না এলাকার মানুষ, সমস্যায় পড়েছে। এই একটু আধটু সমাজসেবা আর কি! এলাকা তো ঠিক রাখতে হবে। জনগণ মন্ত্রী বানিয়েছে।
হাহা হা করে তমিজউদ্দিন হাসে- মন্ত্রীত্বে আমাদেরও কিছু ভাগ আছে।
ব্যাটা তমিজউদ্দিন একটা বদের হাড়ি। সুযোগ বুঝে শুনিয়ে দিলো মন্ত্রীত্বে ভাগ আছে। হারামজাদা একসময় ফুটপাথে গেঞ্জি বিক্রি করতো আর এখন কত বাহাদুরির কথা কয়। সব কড়ির ফল। তো পার্টির এসব লোক লাগে। তারও লাগে। কড়ি কার না লাগে! তাই পাত্তা দিতে হয়।
গাড়িটা বড় রাস্তা ধরে পাগলা ঘোড়ার মত ছুটে। রাত বারোটা বেজে তের মিনিট। রাস্তার লাইটগুলো তার চোখে ঝিলিক লাগায়। শহরটায় খুব আলো এখন। সব ঝলমল আর সব রঙের খেলা। চোখের সামনে কত রকম রঙিন বাতি খেলা করে।আর রঙিন একটা লাল বাতি জ¦ালিয়ে তাঁর অন্তপুরেও কতরকম খেলা খেলে সে! শরীরে আর মনে কি রস বেশি চলে এলো!
মালিবাগ দিয়ে শান্তিবাগের গলিতে ঢুকে বায়ে মোচড় দিয়ে গাড়িটা রংওঠা লাল দোতালা বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। বারোটা আটাস। শহরে রাতের ছাপ পড়েছে। গলিগুলো নির্জন। বাড়ির নীচে কোনো মানুষ নেই। তাকে বরণ করার জন্য একজন দুজন তো থাকার কথা। রাত কি একটু বেশি হয়ে গেছে! কব্জি ঘুড়িয়ে হাতঘড়িটা দেখে পাটোয়ারি। গাড়ির শব্দে ও তো কেউ বের হয়ে এলো না। তার একটু গোস্সাা হতে থাকে। গাড়ি থেকে নামে না সে। কোন সম্ভাষণ ছাড়া গাড়ি থেকে এখন নামায় অভ্যস্থ না সে। খুব একটা দেরি হয় না।বাড়ির ভেতর থেকে একটা ছায়ামুর্তি বের হয়ে আসে- আসো, এতো দেরি করলে।
সে সামান্য একটা দুলুনি অনুভব করে। একটু কি টলমল! না, এটা তেমন কিছুই না। হাস পাপিসের মচমচ আওয়াজে সে নেমে আসে। পুরোনো বাড়ি, খেলামেলা।লম্বা প্রশস্ত বারান্দা। প্রশস্ত ড্রইংরুম পুরো বাড়িতেই দীনতার ছাপ। তবে রুচির সাথে গোছালো। একটা হরিণের চামড়া ঝুলছে দেয়ালে। পুরোনো আভিজাত্যের চিহ্ন। বারান্দার করিডোরে লাইটটা গোলকের মতো জ্বলছে। চারপাশ নিস্তব্দ। কোনো মানুষের শব্দ নেই। বাড়িটা যেন ঘুমিয়ে আছে,নিঝুম রাতের আওয়াজ ভাঙ্গছে টুংটা চামচের শব্দ।
তার চোখে বারান্দার আলোটা ঘোলা ছায়া ফেলে। নিজেকে তার একটু শূন্য লাগে।মাথাটা কি একটু ঝিম ঝিম করছে! সামনের সোফায় তার সহকারী বসা। মনে মনে একটা গালি দেয় সে, শুয়োরের বাচ্চা! পা চাটা কুকুরটা দেখো কেমন কুকঁড়ে বসে আছে। কোনো নড়ন চড়ন নেই। মনে হচ্ছে মানুষ না সামনে বসে আছে একটা রোবট। চোখের পাতা পর্যন্ত নড়ে না, কিভাবে এগুলো রপ্ত করলো হারামজাদারা!
ঝিম লাগাটা আরো একটু বেশি হলে তার চোখ দুটো জড়িয়ে আসে।মাথাটা সোফার উপর এলিয়ে দেয়।
আসো ।
মানুষের কন্ঠ তার ঘোরটা কাটায়। না, ঘুলঘুলানিটা কেটে গেছে, শরীর এখন বেশ রেসপনসিভ। সে জুতার মচমচ আওয়াজ তুলে টেবিলে আসে। ডাইনিং রুমটা করিডোরের সাথে মিলানো। বেশ খোলামেলা। গ্রীলের বাইরের গাছগুলো রাতের অন্ধকারে রহস্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টেবিল উপচে পড়ছে বাঙালি খাবারে। ভর্তা, ভাত, মাছ মাংসের বাহারি পদ। আয়োজন ভালো পরিমানেও বেশ। তাঁর সৌজন্য দেখাতে হয়-তুমি তো মহা আয়োজন করেছো, এতো কিছু।
এতো দেরি করবে বুঝিনি। ভেবেছি মন্ত্রী মানুষ, সাথে অনেক লোক থাকবে।
কথা সত্য । লোক তার সাথে থাকে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে। সে না চাইলে লোকজন তার সাথে আঠার মতো লেগে থাকে। বিভিন্ন র্যাংকের, বিভিন্ন কিসিমের লোকজন থাকে। কিন্তু পানের আসরে সে তার সহকর্মী আর বেশি লোকজন নেয় না। অফিসের সাথে, কর্মক্ষেত্রের তার একান্ত জীবনকে মিলায় না। সে সতর্ক মানুষ, হুশিয়ার থাকে। রাত হলে শুধু মাত্র এই সহকারীটাই থাকে তার নিরাপত্তার জন্য। এই গোলাম সব জানে আর জানে তার বিশ্বস্ত ড্রাইভার। বিন্তু এদের মুখ কুলুপের দিয়ে বন্ধ করা। তাদের কোনো সাহসই নেই মুখ খোলে সহকারী তাঁর সাথে টেবিলে বসেনি, বসেও না। সে ডাকতে পারে। কিন্তু ওই বিনয়ের ডিব্বা হারামজাদা তার সামনে বসবে না, বসলেও খেতে পারবে না।
টেবিলের খাবার দেখে তার নস্টালজিয়া হয়। বাতাসে বহু আগের কোনো একটা ভেজা গন্ধ ভেসে আসে। গন্ধটা কলতাপুর গ্রামের নাকি এই রহস্যময় গাছগুলোর সে বুঝে উঠতে পারে না। তার কাছে আবার মনে হয় গন্ধটা যেন রোদের। রোদের মধ্যে পাতাগুলো যখন বাতাসে দোল দিতো তখন আসতো এই গন্ধটা। সে বুঝতে চায় গন্ধটা রোদ না ভেজা বাতাসের, তারপর সে তাকায় মুখোমুখি বসা নারীর মুখের দিকে। আশ্চর্য! সে দেখতে পায় নিজের তরুণ কালের মুখ। তার আরেকবার মনে হয় আজ কি সে তরল বেশি ঢেলেছে!
সামনের নারী প্লেটে খাবার তুলে দেয়। মৃদু স্বরে বলে- এই বাড়িটার কথাই বলেছিলাম।
হ্যাঁ একটা বাড়ির কথা বলতে গত একমাসে এই নারী তার সাথে চারবার দেখা করেছে। গত পরশুদিন সে অনেক কথা বলেছে তার মধ্যে বাড়ি শব্দটা ািছলো। সে ব্যস্ত মানুষ। লোকজন তাকে ঘিরে রাখে সারাক্ষণ। কোনো কথাই মন দিয়ে শোনা হয় না। এই সবকিছুর মধ্যে মানুষের সমস্যা আর তদবির শুনতে হয়। সমস্যা ছাড়া কোনো মানুষের সাথে কথা হয় না।
মধ্যরাতে এই নারীর কাছেও এখন আর কোনো গল্প নেই, শুধু সমস্যার গল্প। করুণ বেহালার সুর। সে একটু ধ্যানমগ্ন হয়। ধ্যানটা ভেঙ্গে যায় রাস্তার কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে। হঠাৎ তার মনে হয় পুরো সমাজেই যেন সমস্যার একটা ঘেউ ঘেউ আওয়াজ। একটানা ডেকে চলছে একপাল কুকুর। তারপর সে আবার দেখে গ্রামের মেঠো পথ। সেখানে হেঁটে যাচ্ছে ছালওঠা নেড়ী কুকুর। কাটা মানদাইলের গাছ। নারিকেল পাতার ভেতর বাতানের শনশন শব্দ। স্কুল মাঠ। চৌধুরি বাড়ির পুকুর, দুই বেনীর কিশোরী, সড়কের পাশে বইন্যা গাছ, পাকা কদবেলের গন্ধ। বাইরের ঘোলা আলোয় বাড়িটার দিকে তাকায় সে। রাতের ঝিম ধরা শব্দ হিসহিস করে। নিঃসন্দেহে বড় বাড়ি। চারপাশেখোলা জায়গা । বড় বড় গাছের ডালে বাতাসের মৃদু গুঞ্জন। এই বাড়িটাই তাহলে গল্প হয়েছিলো কলতাপুর গ্রামে। বড়বাড়ির ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে রহমান চৌধুরির মেয়ে নিশিতা চৌধুরির।
কলতাপুর গ্রামের হারিকেনের আলোয় সামনে বসে পড়া করার সময় যেমন মাঝে মাঝে একটা দুলুনি উঠতো, শরীরে তেমনি একটা দুলুনি অনুভব করে সে। না, দুলুনির কোনো কারণ নেই। এই নারী বা এই বাড়ি কোনটার প্রতিই সে এখন আর কোনো ধরনের আর্কষণ অনুভব করে না। নিশিতার শরীরের গড়ন এই বয়সেও বেশ ভালো। নিজেকে ভালোই ধরে রেখেছে। রূপও সবটুকু খসে পড়েনি। আজকাল নারী আর কুড়িতে বুড়ি হয় না। বরং বয়সে তার ভিন্ন ভিন্ন রূপ খোলে। রসনার জায়গা থেকে তাই নানা বয়সী নারীর নানা স্বাদ।
কিন্তু এসব কিছুই এখন ভাবছে না সে। এই বাড়ি, যেখানে গ্রীলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে নিশুতি রাত আর রাতের একটা একটা শব্দ এবং একটু আগেই যখন রাতের শব্দ খানখান করে ডেকে উঠেছিলো রাস্তার কয়েকটি কুকুর এবং তার চোখের সামনে আরো একবার কলতাপুর গ্রাম জ্যান্ত হয়ে উঠেছিলো তখনও তার মনে হয়নি এই নারী বা বাড়ির জন্য সে অতিরিক্ত কোনো মায়া অনুভব করে।
সে চামচের টুংটাং শব্দ তোলে। তার চোখে হঠাৎ ঢুলুঢুলু ঘুম আসে। মনে হয় সে এই টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়বে। ঘোলা চোখে সে তাকায়। সামনের নারীকে তার হঠাৎ জেগে ওঠা চরের মতো মনে হয়। যখন চর জাগতো হৈ হৈ করে লোকজগন টেটা, দা বডি নিয়ে বেরিয়ে যেত। এই নারী যেন তেমনি জেগে উঠেছে, যে নারী ডুবে গেছে তার স্মৃতির চোরাবালিতে। কিন্তু এখন যে দখলের জন্য কোনো তাগিদ অনুভব করে না, না তার কোনো অস্ত্রেরও দরকার নেই। সে কি কোনো আফসোস রাখে?
নিশিতা দাঁড়ায়। সে এখনো যথেষ্ট স্লিম। লম্বা ছড়ানো সোজা চুলগুলো কোমর ছোঁয়া। শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে পুর্ণিমার চাঁদ শরীর। মুখে সামান্য মেদের আঁচ, আরো পূর্ণতা এনেছে চেহারায়। ঠোটগুলো সজীব। নিশিতা কি ন্যাচরাল কালার লিপস্টিক মেখেছে? চোখে হালকা কাজল। রাত বেয়ারা বেড়ে গেছে। তার চোখ একঝলক তরুণী নিশিতাকে দেখে। হ্যাঁ এই নারীর সাথে তার একটা গল্প ছিলো। মন দেয়-নেয়ার রসঘন কাহিনী সেটা। সেদিন চাষা কলিমুদ্দিনের ছেলের নিশিতাকে পাবার মুরোদ ছিলো না। কলিমুদ্দির ঘর ছিলো টিনের, নড়বড়ে। ঢাকায় খুব বড়বাড়িতে আত্মীয় বানিয়েছিলেন চৌধুরি সাহেব। ঠিক সেজন্যই কি এহসান পাটোয়ারি এতো রাতে এই দাওয়াতে। না, ঠিক সেরকম মনে করে না সে। হ্যাঁ, এই নারীই তার জীবনের প্রথম নায়িকা। কিন্তু এখন… এখন এই রাতে তাকে দেখে জেগে উঠেছে কি এহসান পাটোযারি? হ্যাঁ, না পাওয়া এই নারীর জন্য তাঁর খুব সূক্ষè নরম একটা জায়গা থাকতেই পারে। কিন্তু নারী বা বাড়ি পাটোয়ারির জন্য এখন কি ? সে মনে মনেই হা হা করে হাসে, তারপর আবার ঠা ঠা করে হাসে, না কিছুই না। তবে যদি একদিন……। সেটা তো হতেই পারে। কিন্তু মনের নরম পলিতে মন্ত্রী মহোদয়ের বৃক্ষ রোপনের কোনো সময় নেই। তাকে এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়।
এখন এই মধ্য রাতে সে এসেছে নিশিতা নয় এক বিধবা মহিলার স্বার্থ রক্ষায়। তার এলাকার বিধবা নারীর সংকট উদ্ধারে। সংকটের মূল হচ্ছে বাড়ি। মৃত স্বামীর সম্পত্তি এটি। বঞ্চিত করতে চায় স্বজন আর দুর্জনেরা। বিধবা পুত্র সন্তানহীন। একমাত্র কণ্যা সন্তান তাঁর। তাকে বঞ্চিত করার কঠিন যুক্তি আছে, যাকে বঞ্চিত করেছে স্বয়ং খোদা তাকে মানুষ কেন বঞ্চিত করবে না!
সে প্লেট সরিয়ে উঠে। লম্বা করিডোরের পাশে রাখা সোফায় বসে। তার এখন আবার একটু তরল ঢালতে ইচ্ছে হচ্ছে। নিশিতার বাড়িতে কি আর ঐসব আছে! তার বোধহয় বলা উচিৎ ছিলো। মন্ত্রী মহোদয়কে দাওয়াত দেবে আর ওটা থাকবে না তা কি করে! তবে বিধবা মানুষ, মেয়ে নিয়ে এই শূন্য বাড়িতে থাকে! তার ওপর বাড়ি দখলের সমস্যা। তার কাছে পানীয় কি করে চায় মন্ত্রী মহোদয়। এলাকার মানুষের প্রতি তার কড়া নজর, খুব দরদ! এই বাড়ি সমস্যা অবশ্য এহসান পাটোয়ারীর জন্য ওয়ান-টু ব্যাপার। এগুলো তো আর বড় কিছু না এই একটু দখল দখল খেলা। দল চালাতে কিছু টু-পাইস লাগে। উঠতিদের কিছু খাদ্য-খোরাক দিতে হয়। এগুলোর দিকে মন্ত্রী মহোদয়দের চোখ দিলে চলে না। কিন্তু খোদ মন্ত্রী মহোদয় চান তাহলে একটা হাত ইশারা করলেই থেমে যাবে সব। আসল বাঁশি তো ওনাদের হাতেই। ফু দেবেন কি দেবেন না এটা তো উনাদের ইচ্ছা। সে একজন পাওয়ার ফুল মন্ত্রী, আর তার কাছে কত রকম কাজে আসতে হয় এই সব উঠতি নেতাদের।
এহসানের হাতে একটা পান তুলে দেয় নিশিতা।
আসতে তোমার অনেক দেরি হলো। মেয়েটা অপেক্ষা করে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। এখন ঘুম থেকে জাগিয়েছি। চলো, পরিচয় করিয়ে দেই।
করিডোর পেরিয়ে বেডরুম। প্রশস্ত কক্ষ। প্রশস্ত খাট। ঘরের আসবার খুব সাধারণ তবে বেশ পরিপাটি। ঘরের ভেতর উজ্জ্ল আলো। জানালার কাছে বুক সেলফ তার পাশে সোফা। সে বসে। মেয়েটা এসে দাঁড়ায়। সদ্য ঘুম থেকে জাগায় চোখ দুটো সামান্য ফোলা। সিলকি চুল মাথার দুপাশে ছড়িয়ে আছে। পরণে একটু ঢোলাঢালা রাতের পোশাক গলা থেকে দুপাশে একটা দোপাট্টা ঝোলানো। ভরন্ত দেহ। রক্তিম ঠোঁট। গোলাপী গাল। মুখের গড়ন আর পুরো শরীর থেকে চুইয়ে নামছে তারুণ্য আর যৌবন।
মেয়েটা হাত তুলে সালাম দেয়-
আমার মেয়ে মৌ-মিতা।
বাহ্ অপূর্ব !
নিশিতা গর্বের সাথে হাসে- বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে ইকোনমিক্স নিয়ে। অনেক কষ্টে পড়াটা চালিয়ে যাচ্ছি। ফাইনাল ইয়ারে আছে। ওর জন্য কিন্তু একটা চাকুরি লাগবে।
হবে, হবে।
তাঁর চোখ দুটোতে আবার ঘোরটা ফিরে আসে। প্রচন্ড তৃষ্ণা জাগে তরলের। কি একটা মাথায় দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে। ভেতরে একটা গোয়ার শুয়োরের তেজ অনুভব করে সে।
আমার কাজটা কিন্তু তোমাকে করে দিতেই হবে। এই বাড়িটা আমার মৃত স্বামীর সম্পদ। আমার আর আমার মেয়েটার বাঁচার একমাত্র সম্বল। আমাদের আর কিছু নেই।
মন্ত্রী মহোদয় ঘোর লাগা লাল চোখে তাকায়- হ্যাঁ কাজটা করে দেব, মেয়ের চাকরিও দেব।
নিশিতার মুখ উজ্জ্বল দেখা যায়- দেবে, সব করে দেবে?
দেব, করে দেব।
আমি জানতাম তোমাকে বললেই সব হবে।
সব হবে, তবে তোমাকেও কিছু দিতে হবে।
আমি ? আমি তোমাকে দেব?
হ্যাঁ
কি দেব? তোমার মতো পাওয়ারফুল মানুষকে আমার দেবার কি আছে, বল?
কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয় নিশিতা।
তুমি কি বলতে চাইছো? কি মীন করছো। তোমাকে আমার কিছু দিতে হবে? একদিন আমরা দুজন-দুজনকে মন দিয়েছিলাম।
হা হা করে হাসে মন্ত্রী- মন! ওগুলো তো ফালতু বিষয়। খুব বেশি কিছু দিতে হবে না তোমার। তোমার চাপ্টার তো কবেই খতম। তবে তোমার মেয়েটা….. সত্যি খুব ফুটন্ত আর টসটসে মেয়ে। সত্যি খুব মনে ধরেছে আমার।