004745
Total Users : 4745
Charbak magazine logo
sorolrekha logo

লেখক তালিকা

জন্ম. ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে। সম্পাদনা করছেন ‘চারবাক’ ও ‘সরলরেখা’। যুক্ত আছেন সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’র সাথে। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: মায়াহরিণ, কাব্যগ্রন্থ ২০০৮, চারবাক, বুদ্ধিজীবীর দায়ভার, সম্পাদনা ২০০৯, সংবেদ, পক্ষ—প্রতিপক্ষ অথবা শত্রু—মিত্র, প্রবন্ধ ২০১০, চারবাক, নির্বাচিত চারবাক, সম্পাদনা ২০১১, চারবাক, নাচঘর, কবিতা, ২০১২, চারবাক, ভাষা সাম্প্রদায়িকতা অথবা সাম্রাজ্যবাদি খপ্পর, প্রবন্ধ, ২০১৩, চারবাক এবং মুখোশ, কবিতা, ২০১৬, চারবাক, করোনাকালে, কবিতা, ২০২২, চারবাক।
View Posts →
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
View Posts →
প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ
View Posts →
বাংলাদেশের উত্তরউপনিবেশি ভাবচর্চার পথিকৃৎ ফয়েজ আলম একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। উপনিবেশি শাসন-শোষণ আর তার পরিণাম, রাষ্ট্র ও সমধর্মী মেল কর্তৃক ব্যক্তির উপর শোষণ-নিপীড়ন ও ক্ষমতার নানামুখি প্রকাশ আর এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন তিনি। বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের নয়াউপনিবেশি আর্থ-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর রাষ্ট্র ও স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর শোষণচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার লেখা আমাদের উদ্দীপ্ত আর সাহসী করে তোলে। রুহানিয়াত সমৃদ্ধ দার্শনিক ভাবচর্চা আর সাহিত্যিক-রাজনৈতিক তত্ত্বচর্চাকে একসাথে কবিতার দেহে ধারণ করতে সক্ষম ফয়েজ আলমের সহজিয়া কবিতা। তার কবিতায় তিনি মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তার কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার যোগীরনগুয়া গ্রামে। বাবা মরহুম শেখ আবদুস সামাদ, মা সামসুন্নাহার খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ পাশ করার পর প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য এমফিল. ডিগ্রী লাভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ব্যক্তির মৃত্যু ও খাপ-খাওয়া মানুষ (কবিতা, ১৯৯৯); প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি ( গবেষণা, ২০০৪); এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজম (অনুবাদ, ২০০৫); উত্তর-উপনিবেশি মন (প্রবন্ধ, ২০০৬); কাভারিং ইসলাম (অনুবাদ, ২০০৬), ভাষা, ক্ষমতা ও আমাদের লড়াই প্রসঙ্গে (প্রবন্ধ, ২০০৮); বুদ্ধিজীবী, তার দায় ও বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব (প্রবন্ধ, ২০১২), জলছাপে লেখা (কবিতা, ২০২১), রাইতের আগে একটা গান (কবিতা, ২০২২); ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (প্রবন্ধ, ২০২২)।
View Posts →
কবি ও গল্পকার। যুক্ত আছেন চারবাক সম্পাদনা পরিবারের সাথে।
View Posts →
কবি। জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়।
View Posts →
জন্ম— জুন, ০৬, ১৯৭৭। জন্মস্থান— উত্তর গোবীন্দর খীল, হাঁদু চৌধুরী বাড়ী, পটিয়া, চট্টগ্রাম। (শৈশব কৈশোর ও তারুণ্যের সময়যাপন) বেড়ে ওঠা (পূর্ব্ব বালিয়াদী, মীরশ্বরাই, চট্টগ্রাম) নানার বাড়ীতে। প্রকাশিত কবিতার বই— ফুলেরা পোষাক পরে না (সাল: ২০১৮, প্রকাশক : মনফকিরা, কলিকেতা)। প্রকাশিতব্য বই— অর্দ্ধনারীশ্বরবাদ : প্রকৃতিপুরুষতত্ত্ব (নন্দনতত্ত্ব), বটতলার বয়ান (ভাষাতাত্ত্বিক গদ্য) ও উদ্ভিদপ্রতিভা (কবিতা)। সম্পাদক— চারবাক।
View Posts →

সম্পূর্ণ লেখক তালিকা

কাজুও ইশিগুরোর সাক্ষাৎকার : আমি স্মৃতিকাতরতায় ভুগি

গ্রহণ: মাইকেল স্কট মুর ও মাইকেল সনথেইমার

২০১৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কাজুও ইশিগুরোর জন্ম জাপানের নাগাসাকিতে। তার বয়স যখন পাঁচ তখন, ১৯৬০ সালে ইশিগুরোর পরিবার ইংল্যান্ডে চলে যায়। ১৯৫৪ সালের ৮ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ইশিগুরোর পিতা শিজুও ইশিগুরো ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওশেনোগ্রাফিতে গবেষণার আমন্ত্রণ পেলে তাদের ইংল্যান্ড যাওয়া হয়। জাপান থেকে ইংল্যান্ড যাওয়ার প্রায় ত্রিশ বছর পরে কাজুও ইশিগুরো নিজ দেশ জাপানে যান। তার প্রথম দুই উপন্যাসের ঘটনা ও সময় জাপান। ইংল্যান্ডে বসবাস করলেও নিজের ভেতর তিনি এক কল্পনার জাপান তৈরিতে সচেষ্ট থেকেছেন। দ্য রিমেইসন অব দ্য ডে উপন্যাসের জন্য ম্যান বুকার পুরস্কার লাভ করেন। টাইম পত্রিকা তার নেভার লেট মি গো উপন্যাসকে ২০০৫ সালের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং ১৯২৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত উপন্যাস থেকে ১০০ উপন্যাসের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে। ইশিগুরো ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার এবং সিনেমার কাহিনীকার। তার অন্যান্য আলোচিত উপন্যাস আ পেল ভিউ অব হিলস (১৯৮২), দ্য আনকনসোল্ড (১৯৯৫), দ্য বারিড জায়ান্ট (২০১৫)। উল্লেখযোগ্য স্ক্রিনপে দ্য স্যাডেস্ট মিউজিক ইন দ্য ওয়ার্ল্ড (২০০৩) ও দ্য হোয়াইট কাউন্টেস (২০০৫)।
“স্পাইজেল অনলাইন” পত্রিকার পক্ষ থেকে ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে এ সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

স্পাইজেল: মি. ইশিগুরো, গত ২৩ বছরে নেভার লেট মি গো আপনার ৬ নম্বর উপন্যাস। এ থেকে মনে হয় লেখালেখিতে আপনি বেশ ধীরে এগোচ্ছেন। এর কারণ কী?
ইশিগুরো: দ্রæত লেখার প্রয়োজন আমি কখনো বোধ করিনি। আমি কখনো মনে করি না বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোয় আমার অবদান রাখা উচিৎ। এর চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো এমন একটি বই লেখা যা আলাদা ধরনের হবে।
স্পাইজেল: আপনার এই উপন্যাস ইংরেজি ভাষায় প্রায় দশ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে এবং আপনার বই আঠাশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
ইশিগুরো: আমি এসব পরিসংখ্যান রাখতে পারি না। কিন্তু আমার মনে হয় বর্তমানে প্রচুর বই বিক্রি হয় এমন লেখকের সঙ্গে কম বিক্রি হয় এমন লেখকের বিশাল পার্থক্য রয়েছে। এমনকি অনেক বিখ্যাত লেখকের, নোবেলপ্রাপ্ত লেখকদেরও, বই খুব কম বিক্রি হয়। তাই একজন লেখক কেমন জীবনযাপন করছেন তা বোঝা খুব মুশকিল। তারা কেউ কোটিপতি হতে পারেন, আবার না খেয়ে থাকা লেখকও হতে পারেন। গত দশ বা পনেরো বছরে বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার লেখকদের জন্য বিশ^ বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
স্পাইজেল: জার্মান যুবারা ইদানীং বলে থাকে, জার্মানিতে সুনাম কামানোর সবচেয়ে ভালো পথ হলো সার্থক অ্যামেরিকান ঔপন্যাসিক হওয়া।
ইশিগুরো: আমার মনে হয় জার্মানিরা এখন যথেষ্ট বহির্মুখী। তাদের অ্যামেরিকান বা মূলত ব্রিটিশ লেখকদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু এটা, এই মনোভাব, আমাকে পীড়া দেয়। প্রত্যেক দেশের ভেতরে তাদের নিজস্ব শক্তিশালী সাহিত্য-ঐতিহ্য গড়ে ওঠা জরুরি। তবে অন্য দেশের সাহিত্য সম্পর্কে তাদের আগ্রহটা থাকতে হবে।
স্পাইজেল: আন্তর্জাতিক সাহিত্যিক বলতে কী বোঝায়?
ইশিগুরো: আচ্ছা, একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমি যদি জার্মানিতে অথবা অন্য কোথাও ব্যাখ্যা করে বোঝাই, কেন আমি কিছু অনুচ্ছেদ লিখেছি, আমি যখন বাড়িতে যাই এবং পরের বইটা লেখার চেষ্টা করি, আমার ভেতরে কোথাও কিন্তু এই ধারণা কাজ করে যে, আমার বইটা অনুবাদ হবে। ইংরেজি ভাষায় যা খুব ভালোভাবে পরিস্ফুটিত হলো তা কিন্তু অন্য ভাষায় না-ও হতে পারে। কারণ এটা তো পান (শব্দ নিয়ে খেলা), ব্র্যান্ড নাম আর সাংস্কৃতিক সূত্রগুলোর ওপর নির্ভর করে। আর আমি আমার লেখা থেকে এগুলো সরিয়ে ফেলবার তাড়না বোধ করি। এ কাজটি কিন্তু খুব বিপৎজনক।
স্পাইজেল: কিন্তু আপনি কি নিজেকে একজন বৈশি^ক লেখক হিসেবে মানিয়ে নিয়েছেন না? আপনার জন্ম জাপানে এবং আপনার পাঁচ বছর বয়সে আপনার পরিবার ইংল্যান্ডে চলে আসে। আপনার শেকড় কি এখনো জাপানি সংস্কৃতিতে প্রোত্থিত?
ইশিগুরো: অবশ্যই ইংল্যান্ড আমার ঘর। কিন্তু আমার পিতা-মাতা এখনো সমর্থ এবং জীবিত এবং ফোনে যখন আমি তাদের সঙ্গে কথা বলি আমি দুষ্টু জাপানি বালকের ভাষাই ব্যবহার করি। এই একটিমাত্র ভাষাতেই তাদের সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়। সবসময় জাপানে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা মাথায় কাজ করতো। আমার পিতা বিজ্ঞানী ছিলেন এবং ব্রিটিশ সরকারের হয়ে কাজ করেছেন-সাময়িকভাবে। এভাবে পঁয়তাল্লিশ বছর তিনি সেখানে আছেন। কিন্তু আমি জাপানে ফিরে যাওয়া এবং সেখানকার সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।
স্পাইজেল: একজন এশিয়ান বালক হিসেবে আপনি ইংল্যান্ডের উপশহরে নির্বান্ধব ছিলেন না?
ইশিগুরো : মোটেও তা নয়। আমি কিন্তু স্থানীয়ভাবে খুব জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলাম। আমি স্থানীয় চার্চের সংগীতবালকদের প্রধান ছিলাম এবং আমি সবাইকে চিনতাম। এদিক থেকে ব্রিটিশরা খুব মজার। একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় তাদেরকে বর্ণবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করা যায়, কিন্তু একজন ব্যক্তি ব্রিটিশ কিন্তু খুব খোলামেলা। বহু-সাংস্কৃতিক ইংল্যান্ড হয়ে ওঠার আগেই আমি সেখানে বড়ো হয়েছি। এসব কারণে হারিয়ে যাওয়া ইংল্যান্ডের জন্যও আমার স্মৃতিকাতরতা কাজ করে-আমার শৈশবের ইংল্যান্ড সত্যিই এখন অদৃশ্য। মধ্য ষাটের দশক থেকে পরের সময়ে অনেক ব্রিটিশ লোকজনই ভারতীয় উপমহাদেশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছে কিন্তু যেহেতু আমি ছোটো ছিলাম, আমার এসব নিয়ে ভাববার সে-রকম নির্দিষ্ট কিছু ছিল না।
স্পাইজেল: আপনার সর্বশেষ উপন্যাসের স্থান ও কাল ইংল্যান্ডে কিন্তু এটা খুব একটা ইংলিশ মনে হয় না।

ইশিগুরো: আমি কখনো এমন কোনো বই লিখতে চাইনি যা ইংল্যান্ডকে নিয়েই হবে। আমি জানি ব্রিটেনে অনেক ভালো লেখক আছেন যারা ব্রিটিশ সমাজব্যবস্থার উত্তাপ নিতে বেশি আগ্রহী, কিন্তু আমার জন্য-আপনারা জানেন, আমি কিন্তু একে বলছি-ইংল্যান্ড’; তবে এই সেটিং কিন্তু কাল্পনিক। আমি যখন দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে লিখি, অনেকেই এটাকে মনে করেছিলো একটা ইংলিশ উপন্যাস। এই ইংল্যান্ড কিন্তু একটা সাজানো ইংল্যান্ড।

স্পাইজেল: এই উপন্যাসটি মূলত অনেক জার্মানির ভেতরে থাকা ইংরেজত্ব সম্পর্কে ধারণা ও গৎবাঁধা বিশ^াস নিয়ে।
ইশিগুরো: হ্যাঁ, আমার মনে হয় পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যেই আসলে এ রকম ধারণা আছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এটি কিন্তু একঅর্থে আন্তর্জাতিক সেটিং। ইংল্যান্ড আসলে কী রকম এ নিয়ে খুদ ইংরেজদের মধ্যেও এক ধরনের মিথ আছে। আমার নতুন উপন্যাসের ইংল্যান্ড দ্য রিমেইনস অব দ্য ডে-এর ইংল্যান্ড থেকে খুবই আলাদা, কিন্তু এটা কিছুটা প্রথাগত।

স্পাইজেল: এটা কিছুটা গ্রামীণ ইংল্যান্ড, নরফোকের গ্রামীণ অঞ্চল…
ইশিগুরো: তবে এটা কিন্তু খুব একটা আনন্দদায়ক গ্রামাঞ্চল নয়, বিষণœ এবং শীতল ও ধূসর।
স্পাইজেল: নেভার লেট মি গো মোটের ওপর বিষণœতা নির্ভর। আপনি কিছু যুবক চরিত্র তৈরি করেছেন, এইসব ক্লোন, যারা ভয়ংকর পরিবেশে বাস করছে এবং যাদের সামনে ভয়ংকর ভবিষ্যৎ কিন্তু তারা কেউ প্রতিবাদ করছে না। কোনোভাবে এটাই কি মানুষের অবস্থা সম্পর্কে আপনার নিজের ধারণা?
ইশিগুরো: আমাকে স্বীকার করতে হবে যে, আমার সবগুলো বইয়ে এই বৈশিষ্ট্য আছে। আমরা দ্য রিমেইস অব দ্য ডে-এর খানসামা চরিত্রের কাছে ফিরতে পারি। সে দেখতে পায় না যে, পুরো বিষয়টা সে কোথায় খাপ খাবে-ইংল্যান্ড ও নাজি জার্মানির ইতিহাস। সে শুধু মেনে নেয়, এবং সামান্য কিছু সম্মান ও অহংকার পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে। শুরু থেকেই আমি জানি যে, নেভার লেট মি গো উপন্যাসে আমি এমন কোনো বন্দি ও শোষিত শ্রেণির কথা বলতে চাইনি যারা বিদ্রোহ করবে। আমার বিষয়বস্তু ছিলো মানুষের আত্মিক শক্তির ওপর ছড়ি না ঘোরানো। সীমাবদ্ধ ও নিষ্ঠুর ভাগ্য মেনে নেওয়া মানুষের সামর্থ্যরে বিষয়েই আমার আগ্রহ ছিলো।
স্পাইজেল: একজন অ্যামেরিকান সমালোচক আপনার নেভার লেট মি গো উপন্যাসটিকে কাফকা এবং বেকেটের কাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
ইশিগুরো: আমার মনে হয় তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, বেকেট বা কাফকার কাজের মতো আমার লেখাগুলো আরও অ্যাবস্ট্রাক্ট কাজ হিসেবে দেখা যুক্তিযুক্ত হবে। তিনি এ বিষয়টি ঠিক বলেছেন। আমার লেখক জীবনে আমার বইগুলো আরও মেটাফোরিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করেছি। সেটিং নিয়ে সওল বেলোর চেয়ে আমি বরং কম মনোযোগী। আমার কাছে মনে হয়, একটি উপন্যাসের সেটিং উপন্যাস লেখার টেকনিকের একটি অংশ। এ বিষয়টি আমি ঠিক করি সবশেষে।
স্পাইজেল: আপনি প্রথমে চরিত্র দিয়ে শুরু করেন?
ইশিগুরো: আমি অধিকাংশ সময়ে শুরু করি সম্পর্ক বা প্রশ্ন বা থিম দিয়ে। সেটিংটা আসে একেবারে শেষে। যখন আমি একটি উপন্যাস প্রস্তুত করি তখন এটা একটা বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশ সময় পুরো গল্পটাই আমার তৈরি হয়ে যায়, তারপর পুরো ইতিহাস ও চিন্তাভাবনার মধ্য দিয়ে জায়গা ও সময় খোঁজা শুরু করি, “আমি যদি এ ঘটনাকে কিউবান আন্দোলনের উপর স্থাপন করি, তাহলে খুব ভালো হবে।” আমার প্রথম উপন্যাস দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পরের নাগাসাকিতে শেষ হয়েছে। কিন্তু আমি যখন প্রথম শুরু করলাম তখন এটা স্থাপন করা হয়েছিল কর্নওয়ালে।
স্পাইজেল: অন্য যে ঔপন্যাসিককে আপনি স্মরণ করিয়ে দেন তিনি হলেন ডবিøউ জি সেবাল্ড। কারণ তার মধ্যেই এই সঠিকতা এবং একই সঙ্গে অসারতার বিষয়টি আছে এবং সেই কথক বা ন্যারেটর আছে যারা তাদের নিজেদের জীবন ও ইতিহাসের উপর আলোকপাত করে।
ইশিগুরো: অবশ্যই আমি সেবাল্ড পড়েছি এবং মারা যাওয়ার আগে বেশ কয়েকবার তার সাথে আমার দেখাও হয়েছিলো। কিন্তু এটা বলতে পারি না যে, তার দ্বারা আমি প্রভাবিত হয়েছিলাম। কয়েক বছর আগে প্রথম তার লেখা পড়ি। তিনি ব্রিটেনে অনেক বছর ধরে শিক্ষকতা করছিলেন কিন্তু তার লেখা দেখলাম কয়েক বছর আগে যখন দ্য ইমিগ্রান্টস অনূদিত হলো। তারপর সকলের আগ্রহ তৈরি হলো। তারপর ২০০১ সালে এক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেলেন। আমি ইস্ট ইংলিয়া বিশ^বিদ্যালয়ে ছিলাম। তিনি সেখানে পড়াতেন কিন্তু তখন কেউ তাকে দেখেনি। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য খুব পরিশ্রম করে যাচ্ছিলো অথচ সম্ভবত ওখান থেকে বের হবার মতো সবচেয়ে ভালো লেখকটি ওখানে নীরবে তুলনামূলক সাহিত্য পড়িয়ে যাচ্ছিলেন। আমার কাছে মনে হয় এটা হাস্যকর।

স্পাইজেল: সাহিত্যজগতে কোন লেখক আপনাকে প্রভাবিত করেছে?
ইশিগুরো: দস্তয়ভস্কি, টলস্টয় এবং চেখভ-আমার যুবক বয়সে পড়া। স্বাভাবিকভাবে কিছু ইংরেজ লেখকও আছেন। তবে কোনো জাপানি লেখক নেই। জাপানি চলচ্চিত্রকার যেমন ইয়াসুজিরো অথবা আকিরা কুরোসাওয়ার ব্যাপক প্রভাব আমার ওপর আছে, কিন্তু জাপানের কোনো বইয়ের প্রভাব নেই। জাপানি কোনো ইংরেজিতে অনুবাদ গ্রন্থ পড়ার সময় আমার কেমন গোলমেলে মনে হয়। তবে এখন একজন জাপানি লেখক হারুকি মোরাকামির গল্প আমি বুঝি এবং তার গল্পের সঙ্গে আমি যোগাযোগ ঘটাতে পারি। মোরাকামি ব্যাপকভাবে একজন আন্তর্জাতিক লেখক।
স্পাইজেল: মোরাকামি অ্যামেরিকান ও ব্রিটিশ পপ সংস্কৃতিকে কিছু বিশেষ জাপানি সাংস্কৃতিক উপাদানের সঙ্গে মিশিয়েছেন।
ইশিগুরো: তা করেছেন। কিন্তু আমি এটাও মনে করি জাপান এ রকম। আমি বিশ বছর আগে কুরোসাওয়ার বক্তৃতা শুনতে গিয়েছিলাম। তিনি ঠিক এই প্রসঙ্গটিই উত্থাপন করেছিলেন। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কেনো শেক্সপিয়ারকে অভিযোজিত করেছেন? আপনার জন্য এ কাজটি তো একটি আন্তর্জাতিক কাজ।” তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “না, এটা স্বাভাবিক একটি কাজ।” এর কারণ হলো তিনি বেড়ে উঠেছিলেন শেক্সপিয়ার, ফরাসি এবং রাশিয়ান লেখকদের মধ্যে। তিনি বলতেন, “একজন ট্রিপিক্যাল জাপানিজ এ রকমই।” আপনি যদি টোকিও যান, জনপ্রিয় সংস্কৃতির সঙ্গে জাপানি প্রথাগত সংস্কৃতির মিশেল দেখতে পাবেন।
স্পাইজেল: আপনার অধিকাংশ উপন্যাস একক ব্যক্তির জীবনের পশ্চাতে ফিরে তাকানো নিয়ে। আপনি কি কখনো অন্য কিছু লিখতে চেয়েছেন, যেমন কবিতা বা নাটক?
ইশিগুরো: কিছু সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখছি। এ কাজটি আমার জন্য আলাদা একটি কাজ। এখানে অন্যদের সঙ্গে একযোগে কাজ করা যায়। আমার মনে হয় এটি আমার ভেতরের অন্য কোনো অংশ থেকে এসেছে। এটা রিফ্রেশমেন্টের মতো। কিন্তু আমি স্মৃতিতাড়িত থাকি। এর পরে আমি যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে চাই তা হলো, কী করে একটি সমাজ বা পুরো একটি জাতি মনে রাখে অথবা ভুলে যায়। কখন মনে রাখা সুখকর এবং কখন ভুলে যাওয়া সুখকর?
স্পাইজেল: জার্মানিতে, নাজি অতীতের কারণে, ওপরে উল্লেখিত বিষয়টি ষাটের দশক থেকে একটি বড়ো ইস্যু হয়ে আছে।
ইশিগুরো: হ্যাঁ, জার্মানিই একমাত্র জায়গা যেখানে মনে রাখা বা ভুলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে খুব সতর্কতা ও সফলতার সাথে কাজ হয়েছে যা অন্য কোনো বড় বড় জাতিও পারেনি।
স্পাইজেল: বিশেষ করে যদি জাপানিদের সাথে তুলনা কর হয়।
ইশিগুরো: জাপানিদের সাথে তুলনা, হ্যাঁ। কিন্তু আমার তো মনে হয়, অ্যামেরিকনাদের ক্রীতদাস প্রথার অস্বস্তিকর স্মৃতি আছে। অনেকেই বলে, এই স্মৃতিকে কবর দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কালোদের জন্য এ স্মৃতি সুখকর নয়। আবার পেছন থেকে এই স্মৃতি টেনে আনা সাদাদের জন্যও সুখকর নয়। আবার কিছু লোক বলছে, এটা যদি না করা যায়, তাহলে সমাজ কখনো সামনে এগোবে না। নাজিদের দখল করা সব দেশের ক্ষেত্রেই এটা বলা যায়, ফ্রান্স বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো: আবার স্মৃতি খোঁড়া শুরু করা ঠিক হবে নাকি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া? প্রত্যেক জাতির ভেতর এই প্রশ্নটি আছে।
স্পাইজেল: নিটশে একবার বলেছিলেন, “ভুলে যেতে পারলে মুক্তি পাবে।”
ইশিগুরো: ঠিক আছে, এটা আসলে বিশাল একটা বিষয়। আমার মনে হয়, আমার বইগুলো একদিকে সামাজিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাওয়া দেশগুলোর উপর আবার অন্যদিকে ব্যক্তির স্মৃতি নিয়েও। কিন্তু এই দুটোকে আমি কখনো একসঙ্গে নিয়ে আসতে সক্ষম হইনি। এ কাজটি আসলেই একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ।

শেয়ার করুন: