004746
Total Users : 4746
Charbak magazine logo
sorolrekha logo

লেখক তালিকা

জন্ম. ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে। সম্পাদনা করছেন ‘চারবাক’ ও ‘সরলরেখা’। যুক্ত আছেন সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’র সাথে। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: মায়াহরিণ, কাব্যগ্রন্থ ২০০৮, চারবাক, বুদ্ধিজীবীর দায়ভার, সম্পাদনা ২০০৯, সংবেদ, পক্ষ—প্রতিপক্ষ অথবা শত্রু—মিত্র, প্রবন্ধ ২০১০, চারবাক, নির্বাচিত চারবাক, সম্পাদনা ২০১১, চারবাক, নাচঘর, কবিতা, ২০১২, চারবাক, ভাষা সাম্প্রদায়িকতা অথবা সাম্রাজ্যবাদি খপ্পর, প্রবন্ধ, ২০১৩, চারবাক এবং মুখোশ, কবিতা, ২০১৬, চারবাক, করোনাকালে, কবিতা, ২০২২, চারবাক।
View Posts →
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
View Posts →
প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ
View Posts →
বাংলাদেশের উত্তরউপনিবেশি ভাবচর্চার পথিকৃৎ ফয়েজ আলম একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। উপনিবেশি শাসন-শোষণ আর তার পরিণাম, রাষ্ট্র ও সমধর্মী মেল কর্তৃক ব্যক্তির উপর শোষণ-নিপীড়ন ও ক্ষমতার নানামুখি প্রকাশ আর এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন তিনি। বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের নয়াউপনিবেশি আর্থ-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর রাষ্ট্র ও স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর শোষণচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার লেখা আমাদের উদ্দীপ্ত আর সাহসী করে তোলে। রুহানিয়াত সমৃদ্ধ দার্শনিক ভাবচর্চা আর সাহিত্যিক-রাজনৈতিক তত্ত্বচর্চাকে একসাথে কবিতার দেহে ধারণ করতে সক্ষম ফয়েজ আলমের সহজিয়া কবিতা। তার কবিতায় তিনি মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তার কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার যোগীরনগুয়া গ্রামে। বাবা মরহুম শেখ আবদুস সামাদ, মা সামসুন্নাহার খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ পাশ করার পর প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য এমফিল. ডিগ্রী লাভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ব্যক্তির মৃত্যু ও খাপ-খাওয়া মানুষ (কবিতা, ১৯৯৯); প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি ( গবেষণা, ২০০৪); এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজম (অনুবাদ, ২০০৫); উত্তর-উপনিবেশি মন (প্রবন্ধ, ২০০৬); কাভারিং ইসলাম (অনুবাদ, ২০০৬), ভাষা, ক্ষমতা ও আমাদের লড়াই প্রসঙ্গে (প্রবন্ধ, ২০০৮); বুদ্ধিজীবী, তার দায় ও বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব (প্রবন্ধ, ২০১২), জলছাপে লেখা (কবিতা, ২০২১), রাইতের আগে একটা গান (কবিতা, ২০২২); ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (প্রবন্ধ, ২০২২)।
View Posts →
কবি ও গল্পকার। যুক্ত আছেন চারবাক সম্পাদনা পরিবারের সাথে।
View Posts →
কবি। জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়।
View Posts →
প্রাবন্ধিক। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। বর্তমানে প্রান্তীয় কৃষক-মধুচাষি, বেতবাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন নিয়ে কাজ করছেন।
View Posts →
জন্ম— জুন, ০৬, ১৯৭৭। জন্মস্থান— উত্তর গোবীন্দর খীল, হাঁদু চৌধুরী বাড়ী, পটিয়া, চট্টগ্রাম। (শৈশব কৈশোর ও তারুণ্যের সময়যাপন) বেড়ে ওঠা (পূর্ব্ব বালিয়াদী, মীরশ্বরাই, চট্টগ্রাম) নানার বাড়ীতে। প্রকাশিত কবিতার বই— ফুলেরা পোষাক পরে না (সাল: ২০১৮, প্রকাশক : মনফকিরা, কলিকেতা)। প্রকাশিতব্য বই— অর্দ্ধনারীশ্বরবাদ : প্রকৃতিপুরুষতত্ত্ব (নন্দনতত্ত্ব), বটতলার বয়ান (ভাষাতাত্ত্বিক গদ্য) ও উদ্ভিদপ্রতিভা (কবিতা)। সম্পাদক— চারবাক।
View Posts →

সম্পূর্ণ লেখক তালিকা

চারবাক: প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া আগ্রাসন
বিরোধিতার দশ বছর

ছোটকাগজ, পত্রিকা বা বড়কাগজ, সাহিত্য সাময়িকি অথবা প্রাতিষ্ঠানিক সাহিত্য পত্রিকার মধ্যে কতটুকু মিল বা অমিল দৃশ্যগত তা এই উত্তরসময়ে পর্বান্তরে এসে বিবেচ্য হওয়া উচিত নিজের আইডেনটিটি খুঁজে নেয়ার স্বার্থেই। কি চাই? কেনো চাই? কোথায় যাবো? কেনো যাবো? এসব খুঁজতে খুঁজতে তৈরি হয়ে যায় নিজের আস্থা, অবস্থা ও অবস্থান।
ছোটকাগজ কখনোই মনোভঙ্গি না, যদি ছোটকাগজ মনোভঙ্গি হয় তাহলে ছোটকাগজের যৌক্তিক অবস্থান নষ্ট হয়ে যায়। এ বচনটিকে অবলম্বন করে যে কেউ একটি কাগজ বের করে তাকে ছোটকাগজ বলার কিংবা ঘোষণা দেয়ার অধিকার রাখে। আবার প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার বিপরিতে অবস্থান করে লেখালেখি করেও কেউ বলতে পারবেন না তিনি ছোটকাগজের লেখক। এ ধারা অনেক পুরোনো। তবে সময়ের প্রেক্ষাপট যৌক্তিক বিবেচ্য বিষয় নিয়ে ছোটকাগজ তার প্যারডাইম পরিবর্তন করে নতুন নতুন ডিসকোর্স তৈরি করবে, বাতিল করবে প্রচল পুরাতন প্রথাকে। এজন্য লেখকের টেক্সটই বলে দেবে তিনি প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়াবিরোধি কি-না? চোখ রাখা যাক সমস্ত বাজারি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাগজে, মিলিয়ে দেখা যাক সমস্ত ছোটকাগজের লেখা। তাহলেই অনেকটা স্বচ্ছ ধারণা এসে যাবে, স্পষ্ট হবে অনেক কিছুই।
ছোটকাগজে অনেকদিন লিখছেন এমন কোনো ভবদিয় কিংবা শুভার্থি যদি দাবি করেন এটি ছোটকাগজ কিংবা ঐটি না, এর ভেতর দিয়ে কর্তৃত্ববোধ প্রকাশ পায় অবশ্য। একটি কাগজ ছোটকাগজ হয়ে ওঠার জন্য প্রেক্ষাপট অবশ্যই প্রয়োজন। একটি কাগজ ছোটকাগজ হয়ে উঠতে, তৈরি হতে সময় দিতে হবে যদিও প্রত্যেকটি কাগজের মধ্যেই একটি পার্থক্য থাকে যা চিহ্নিত জরুরি। কারণ তা করা না গেলে কাগজ হলেই হয়, সবাই একটি কাগজের মধ্যে লিখলেই চলে, কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়। প্রত্যেকটি ছোটকাগজের নিজস্ব রাজনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি আছে, নিজস্ব লক্ষ ও উদ্দেশ্য থাকে এবং সে কারণেই জন্ম নেয় কাগজ। শুভ্র নৈতিকতার পরিচয় বহন করে এ অমায়িক খচ্চরের দেশে, বদল হাওয়ার আলোকায়নে আজ খচ্চররাই আলোকিত। যে যায় সেই চলে যায়, এবং অবশ্যই মাতিয়ে যায় তার পূর্ববর্তি ভূগোল। জানা দরকার ফড়িয়া ও সুযোগ-সন্ধানিরা সর্বদা সুযোগের প্রতিক্ষায় থাকবে। নির্দিষ্ট কোনো বোধ, দর্শন বা আদর্শের কবিদের তালিকার সাথে কোনো মিডিম্যাগ কিংবা বাজারি পত্রিকা বা সাহিত্য সাময়িকির লেখকের নামের ক্যাটালগে সাজানো অমার্জনিয় অপরাধ অবশ্যই। গুরুত্বপূর্ণ কাউকে দূরে রেখে অগুরুত্বপূর্ণ কাউকে আলোচনার পেছনে পক্ষপাত কিংবা ক¤েপ্রামাইজসুলভ মনোভঙ্গিই প্রকাশ পায়।
ছোটকাগজ মূলত বোধের আলোড়ন, বিষয় যা মনকে রাঙাবে, মন ভাঙবে, আমূল বদলে দেবে সমস্ত প্রচলকে, বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে বুড়োবধদের, ভেঙে দেবে প্রাতিষ্ঠানিক চেতন কাঠামোর বিন্যাস এবং রচনা করবে প্রতিস্পর্ধার ডিসকোর্স। বারবার নিজেকে ভেঙে পাড়ি দেবেন স্বপ্ন বৈতরণি, প্রতিদিন ভাঙবেন নিজের নির্মাণ কাঠামো, ইতিহাস-ঐতিহ্য। এ প্রয়াস প্রচেষ্টা প্রচল মিডিয়া বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ প্রচলিত ও জনপ্রিয় কাঠামো নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য তথা বিক্রিবাট্টাই মূল কথা। সংঘর্ষ অনিবার্য তাই। অনেকের কাছে এই সংঘাত প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে যায়। ফলে সরে যায় মূল কাজ। প্রচলিত ছোটকাগজ কর্মিদের অনেকের মধ্যেই এক ধরনের উপনিবেশিক মানসিকতা দেখা যায়। যারা বলতে চায় পশ্চিমবঙ্গের হাত ধরে বাংলাদেশে ছোটকাগজের বিকাশ হয়। এই মানসিকতার ভেতর দিয়ে প্রকাশিত হয় দুর্বলতা, মোসাহেবি চরিত্র, যাদের জাত্যাভিমান নেই। দুই বাংলায় সাহিত্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কাছে নিজেকে মান্যবর ভাবার মানসিকতা পোষণ করে কেউ কেউ। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের ছোটকাগজ আন্দোলন এবং সাহিত্য কখনো এক নয় বরং পরস্পর সমভাষাভাষি সাহিত্যের শুভার্থি কিংবা পাঠক। কারণ অর্থনৈতিক কাঠামো ও সমাজবাস্তবতা আমাদের সাথে তাদের এক না। তাদের রয়েছে স্থির মধ্যবিত্ত সমাজ, কিন্তু আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজ ভাসমান। সর্বদা দোটানায় অস্থির। এমনকি বর্ণমালা, বানান, উচ্চারণ ও ব্যাকরণেও পার্থক্য রয়েছে। তাদের একমুখি জাতিয় শিক্ষাব্যবস্থা, এরই মধ্যে বিকশিত শিল্প। অপরদিকে আমাদের সংগ্রাম প্রতিদিনের নিজেকে টিকিয়ে ও বেঁচেবর্তে থাকার সংগ্রামে। ঢালাওভাবে বইপুস্তক ও লেখা আমদানি-রপ্তানির মধ্যে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। এ প্রেক্ষাপটে বিবেচ্য হতে পারে বহুকথিত ও পঠিত আহমেদ ছফা ভাষ্য, যা তারুণ্যের প্রতিস্পর্ধার বীজতলায় তৈরি হয়েছে ও হচ্ছে বাংলাদেশের ছোটকাগজ। বিকেন্দ্রিকরণের এ সময়ে এসে নিয়মিত ও অনিয়মিত দুই চারটি প্রতিষ্ঠানবিরোধি সাহিত্যসংকলন কেন্দ্রে বসে পয়দা করছেন কেউ কেউ। খবরদারি ফলাচ্ছেন এবং কোনো বিশেষ লেখকের তাবেদারি করছেন; আবার কেউ ছোটকাগজের শ্রীযুক্ত পীর হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, মনে মনে লালন করছেন। না আছে শিল্প না আছে মুভমেন্ট কিন্তু প্রাচিন একটি বটগাছকে আশ্রয় করে হাম্বা হাম্বা করাই সার। গত একদশকে এমন কিছু কাগজ বের হয়েছে যেগুলো আসলে কারো ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে কিংবা বালক বয়সের উত্তেজনার বশে একটি দুটি সংখ্যা, যা স্ফিনিক পাখির মতো…। এসব নির্দিষ্ট কিছু লেখক ও গোষ্ঠির ঢোল পেটানো, যা উত্তর প্রজন্মে হতাশার কারণ হয়ে যেতে পারে। স্বপ্নবান তারুণ্য মৃত্তিকার স্বপ্নালু বিশ্বাসে বুক বেঁধেছে গাঙ্গেয় বদ্বীপের সবুজ ক্যানভাস বিনির্মাণে বিদ্যমান বাস্তবতায় এসে এই বহুরৈখিক ক্রাইসিস থেকে মুক্তির বারতায় বদলে নিতে হবে নিজেকে পুরোনো ডিসকোর্সকে সংশোধন করতে হবে পর্ব পর্বান্তরে এবং এই প্রচেষ্টা অব্যাহত ভাটির দেশে। ঈষড়ংবফ জবধফরহম’র মাধ্যমে বিশ্লেষণ করতে হবে বিশ্বসাহিত্য ও অর্থনীতিকে। ইশতেহার যদিও ধ্র“ব সত্য নয় কখনোই, কিন্তু আপাতত সত্য। এই আপাতত সত্যকে ভিত্তি করেই ন্যূনতম ঐক্যের ভিত্তিতে প্রপঞ্চগুলোর যুথবদ্ধ মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে বিকশিত হতে হবে বৃহৎ ঐক্যের সন্ধানে। বাস্তবতার প্রয়োজনেই অনিবার্য হয়ে ওঠে পৃথক পরিপ্রেক্ষিত। তাই পক্ষ-প্রতিপক্ষ চিহ্নায়ন জরুরি। শক্ত প্রতিপক্ষের সাথে দ্ব›দ্ব সংঘাতের ভিত্তিতেই সৃজন আরতিতে বেজে উঠবে শঙ্খের ধ্বনি। পক্ষ-প্রতিপক্ষের লড়াইয়ে ভাঙচুরের ভেতর দিয়ে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হবে সাহিত্য। প্রথা বিরোধিতার নামে নাচ গান করে চিন্তার দৈন্যতা তৈরি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তবে গোঁ ধরতে হবে ছোটকাগজের শব্দ সৈনিকদের। তারা কোনকিছুই স্পর্শ করে না কিন্তু সবকিছুই তাদের ছুঁয়ে যাবে, যেতে বাধ্য হবে। ছোটকাগজের লেখকদের প্রতিনিয়তই দ্ব›দ্ব নিজের সাথে নিজের। ক¤েপ্রামাইজ না করার দ্ব›দ্ব, নিজেকে ভাঙতে না পারার দ্ব›দ্ব। নিজের অবস্থান থেকে আরো সুদৃঢ় অবস্থানে যাওয়ার দ্ব›দ্ব।
মুভমেন্টের আদর্শ বা ইশতেহারকে কাঁধে নিয়ে লড়াই সংগ্রাম করা ও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের সাথে কাউন্টার ভাষ্য তৈরি ও সাম্রাজ্যবাদি আগ্রাসনের বিপরিতে দাঁড়িয়ে অবৈপনিক মুখপত্র হাতে নিয়ে আপামর জনসাধারণের সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতে ব্যাষ্টিক স্বরকে ধারণ করে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সামষ্টিক কণ্ঠে প্রতিরোধের সংস্কৃতির ভিত্তিতে প্রতিস্পর্ধার বীজতলা তৈরিই কমিটমেন্ট। সময়ের প্রয়োজনে আস্তিন ঘুটে রাজপথে আমজনতার সাথে মিশে যেতে কোন দ্বিধা নেই। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া জুড়ে আমাদের ঘর আর ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে প্রার্থনারত আমাদের মা। আমরা আমাদেরকে সংলগ্ন রাখি দ্ব›দ্ব-দ্বৈরথে নতুন প্যারাডাইম রচনার নিমিত্তে। আর এই সংলগ্নতার কারণেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে-পক্ষ ও প্রতিপক্ষ। শূন্য দশকের ঊষালগ্নে এক ঝাঁক তারুণ্য তরুণের সমন্বয়ে প্রকাশিত হয় ‘চারবাক’। প্রথম সংখ্যাতেই নিæবর্গের প্রতি পক্ষপাত ছিল, ‘বাংলাদেশের চা বাগান : জাত-পাত সমাজ ও সংস্কৃতি’, ‘নন্দিত এক জনগোষ্ঠি খাসিয়া’, ‘রাষ্ট্র কারাগার ও সাহিত্য’ প্রবন্ধে। ছাপা হয়েছে নিবন্ধ, গল্প ও কবিতা। মূলমন্ত্র ছিল উত্তর উপনিবেশিক চেতনায় আলোড়িত হওয়া। ২য় সংখ্যার বিষয় ‘বাইজি সংগীত : ক্লেদজ কুসুম’, ‘ভানুবিলের কৃষক বিদ্রোহ : একটি সমীক্ষা’ ও চিত্তরঞ্জন সাহা’র সাক্ষাৎকার। ৩য় সংখ্যায় বিশ্বায়ন নিয়ে সাফির সাফিনের প্রবন্ধ, ৪র্থ সংখ্যা ‘বালিশিয়ার কৃষক বিদ্রোহ’ ও ‘শাহ কলিমদ্দীন ফকিরের গান’ দিয়ে বিন্যাসিত। ৫ম সংখ্যা সাফির সাফিন-এর মুক্তবাজার অর্থনীতি নিয়ে বিশদ বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ ও বোর্হেসকে নিয়ে ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। ৬ষ্ঠ সংখ্যা মিডিয়া সন্ত্রাস নিয়ে সাফির সাফিন ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়ে আদনান-এর প্রবন্ধ এবং বিনোদবিহারী চৌধুরী’র সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। ৭ম সংখ্যা রাষ্ট্রের নৈতিকতা নির্ধারণ নিয়ে প্রবন্ধ বিশেষ আলোচ্য বিষয়। ৮ম সংখ্যা থেকে ‘চারবাক’ তার গতিধারা পরিবর্তন করে। নিয়মিত ক্রোড়পত্র প্রকাশ শুরু হয়। ‘আত্মা ও অস্তিত্ব সংকট’ এই সংখ্যার ক্রোড়পত্র। আরজ আলী মাতুব্বর-এর আত্মা বিষয়ক লেখা পুনর্মুদ্রণ হয় এ সংখ্যায়। নীরুকুমার চাকমা, রওশন আরা, সাফির সাফিন, আহমদ সিরাজ, আল গাযালী এ সংখ্যার লেখক। রিসি দলাই’র প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সময় সমগ্র অথবা আমরা যারা নিæবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উত্তরণের স্বপ্ন দেখি’ পাণ্ডুলিপি ছাপা হয় এ সংখ্যায়ই। আধুনিক দর্শনের প্রবর্তক রেনে দেকার্তের ‘ডিসকোর্স অন মেথড’র ভূমিকাংশের অনুবাদ ছাপা হয়। ৯ম সংখ্যার ক্রোড়পত্র ‘উত্তর-উপনিবেশিকতা : তত্ত¡ ও শৃঙ্খলমুক্তির দায়’। লিখেছেন ফয়েজ আলম, রাশিদ আসকারী। ‘সাব অলটার্ন কি বলতে পারে; গায়ত্রি চক্রবর্তীর অনুবাদ। সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মলয় রায়চৌধুরী’র লেখাও ছাপা হয় এসংখ্যায়। শহিদুল আলমের গল্প ‘বোবা চিৎকার’ এ সংখ্যার উপরি পাওনা। ১০ম সংখ্যা ক্রোড়পত্র ‘ইহুদি ও ইহুদিবাদ: ধর্ম ও নৈতিকতা’। শামসুদ্দোহা শোয়েব, মাহবুবা অজন্তা লিখেছেন এ সংখ্যায়। ধর্ম, ধর্ষণ ও যুদ্ধ নিয়ে আইরিস জে, স্টুয়ার্ট’র অনুবাদ ছাপা হয়। সংস্কৃতির আধিপত্য নিয়ে ফয়েজ আলম, আত্ম-পরিচয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে লিখেছেন সাফির সাফিন। ১১তম সংখ্যা ‘বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা, বুদ্ধিজীবী ও বুদ্ধিজীবীর দায়’ যা পরে ঢাকা থেকে ‘বুদ্ধিজীবীর দায়ভার’ নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়। দ্ব›দ্ব ও দ্বৈরথে মানবিক দায়বদ্ধতার সমিকরণ অব্যাহত। এই সংখ্যার ক্রোড়পত্রের ডিসকোর্সটি চারটি পর্বে বিন্যাসিত-তত্ত¡ ও সংজ্ঞায়ন পর্বে লিখেছেন ফয়েজ আলম, শহিদুল ইসলাম, শামীম আহমেদ, বিনয় ঘোষ ও এডওয়ার্ড সাইদ। ‘উদঘাটন ও বিচার’ পর্বে ছাপা হয় ফ্রানৎজ ফানোন ও আহমদ ছফা’র প্রবন্ধ, পুনর্বিন্যাস ও ঐতিহ্য পর্বে ছাপা হয়-সাফির সাফিন, ড. সেলু বাসিত, আহমদ সিরাজের প্রবন্ধ। পুনর্মুদ্রণ হয় গোপাল হালদারের প্রবন্ধ। আত্মবিশ্লেষণ ও দায় পর্বে লিখেছেন-বেনজিন খান ও অশোক মিত্র। ১২তম সংখ্যার ক্রোড়পত্র-‘রাষ্ট্র সরকার সুশীল সমাজ’। লিখেছেনÑ সাফির সাফিন, সুচরিতা সেন ও রতন খাসনবিশ। এ সংখ্যায় স্মরণ করা হয় অমল বন্দ্যোপাধ্যায় ও গোবিন্দচন্দ্র দেবকে। প্রবন্ধ ছাপা হয় আহমদ সিরাজ, শোয়াইব জিবরান ও আজিজুল রাসেল-এর। ১৩তম সংখ্যায় এসে চারবাক তার অবস্থান আরো সুদৃঢ় করে। প্রস্তুতি নেয় ইশতেহার রচনার। এই সংখ্যায় ছাপা হয় আশরাফুল আজাদ ও ড. সেলু বাসিতের প্রবন্ধ। এছাড়াও কয়েক সংখ্যায় পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত মজিব মহমমদকৃত অনুবাদ চর্যাপদ, যা পরে একটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয় সবগুলো কবিতা ‘চর্যাপদ’ নামে, উলে­খযোগ্য সংযোজন বাংলা সাহিত্যে। নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি চর্যাপদের নবরূপ দিয়েছেন যা সমালোচক ও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।
প্রকাশিত ১৩ সংখ্যাতেই ছিল উলে­খযোগ্য সংখ্যক কবির কবিতা, প্রচুর গল্প ও সাক্ষাৎকার। বাংলাদেশের ছোটকাগজ চর্চায় চারবাকই বেশি দর্শন ও রাজনীতি সচেতন কিংবা আশ্রিত বলা যায়। চারবাকের বাইরেও প্রতিদিনই ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’কে কেন্দ্র করে নিত্য নতুনের আগমন অব্যাহত রয়েছে, যাদেরকে ‘চারবাক’ চারবাকগোষ্ঠিরই মনে করে। রিসি দলাই’র ছোটকাগজ নিয়ে গ্রন্থ ‘পক্ষ-প্রতিপক্ষ অথবা শত্র“-মিত্র’ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ভাঙচুরের ভেতর দিয়ে দশ বছরের যাপন শেষে ইশতেহার কাঁধে নিয়ে, সমাজ বাস্তবতার দায়বদ্ধতায় নতুন দশক বিনির্মাণে প্রকাশিত হবে ‘চারবাক’। ভবিষ্যত ‘চারবাক’ কেমন হবে?-দর্শনে, চিন্তায়, যাপনে, মুভমেন্ট কিংবা ছোটকাগজ আন্দোলনে। মত ও পথ অনেক। পথিক আমরা, অবিরাম শ্রমে ও মেধায় শুভ অর্চনায় পৌঁছে যাব, সৌম্য সভ্যতায় প্রাজ্ঞ সংস্কৃতির উত্তরাধিকার হয়ে মাঙ্গলিক পৃথিবীর এই সবুজ গাঙ্গেয় ভাটির ব-দ্বীপে এই প্রত্যাশা বরাবর। ‘চারবাক ইশতেহার ২০১০’-এর শেষ বাক্য দিয়েই শেষ করি-‘দেয়ালের ওপারে আকাশই আমাদের অন্বিষ্ট’। মুক্ত অবারিত আকাশ সবসময়ই ‘চারবাক’ খোলা রাখে, সকলের জন্যই।

শেয়ার করুন: