জবাই, জবাই শুভ হোলিখেলা-লোহিত খুনের উৎসব
পিপাসার্ত তরবারি / করছে মিছিল / জবাই জবাই /
চুপ /
বলিস না / পারব না নিতে / রক্তাক্ত ফুলের ঘ্রাণ /
তরুণ খুনের জনপদে / ফলছে ফসল / সোনাঝরা / ….
শুভ কোরবানি /
কাজির দেউড়ি থেকে পালিয়েছে / কাহিনির গরু /
নন্দনের ষাঁড় /
চুপ /
চুপচাপ / শুয়ে পড় /
শুভ হোক কোরবানি / ……………….
শুভ হোলিখেলা / লোহিত খুনের উৎসব /
রক্তে
নিহিত রয়েছে / সম্ভাবনা / ……………
চক্রপাড়ার মানসি, চোরাবালিচোখ
চক্রপাড়ার মানসি তার চোরাবালিচোখ
সময়সৃজনে ভালবাসে শিল্পের যাতনা
কে যে বলে
চোখের ভ্রƒ যেন-বা ধনুক মণি হল তীর
কিবা
পাখির নীড়ের মতো চোখ-
ছাই
এসব কিছুনা
তার
চোরাবালিচোখ-চক্রপাড়া
খেলাঘর বাঁধা জীবনসৈকতে
চক্রবর্তী
চক্রে… চক্রে… ডাকে নন্দনকাননে
সময় কুড়ানো নীড়ে
আমূল জড়িয়ে নেয় চোরাবালিচোখে
দেয় আনন্দবেদনা-সময়সখ্যতা
বাঁশকাব্য
বাঁশ, কে কখন কাকে দেবে… এমন ভাবনা মুখরিত হলুদবেলায়
কীর্তিমান
দেখালেন, নানান জাতের বাঁশ;
বাঁশের বিবিধ ব্যবহার।
আমার
লেগেছে ভাল, গেঁথেছে পরাণে, বাঁশের বাঁশরি ।
বাঁশ না বাঁশির সহচর
সুন্দরের (!) পথে পথে বাজাই বাঁশরি,
ফেরি করি সুর।
কীর্তিত শিল্পের ভোরে বাজি, পৃথিবীতে-হ্যামিলনে,
বাঁশ না বাঁশির প্রয়োজনে ।
সখা,
কে তোমাকে দিল বাঁশ? বানাও তাহাকে বাঁশি,
যাও
যমুনার ক‚লে, ডাকছে রাধিকা,
আর সখিদল।
(বাঁশ, কে কখন কাকে দেবে… এমন ভাবনা মুখরিত হলুদবেলায়, এই কবিতা বাঁশ না,
বাঁশকাব্য! যেভাবে আমলে লাগে সেভাবে ভাবুন। তা, লাঠিও বানাতে পারেন।
দায় আমার না!)
কলার বাজার
কলা, বারমাস ফলে। কলা বেচে ভাত খাই। কোন কলা চাই,
কাঁচকলা?
…।
আপনি কৃষ্ণ না! কেন বলছেন-না, আমি কলা খাই না!
বেশি না, একটি খান।
জানেন তো, কলা ছাড়া পৃথিবী অচল। আমি না, বলেছে মহাশয়।
জনাব, কেন যে ভান করছেন?
আমি জানি,
আপনাদের বাগানে নানা রকমের কলাগাছ আছে।
এ-ও জানি,
জনাব কলার কারবারি। আছেন বলেই বেঁচে আছি!
খান, টাকা লাগবে না, মন থেকেই দিলাম, মনের মাধুরি মেখে খান।
তবে ধীরে, না হলে গলায় আটকাবে।
জনাব, আটকালে মরণ।
সাধের জীবন কুপোকাত। তা, কলাও যাবে, জীবনও যাবে।
বারটার দেয়ালিকা, সময়সংকলন
…! এইসব
আলোআঁধারির নগরায়নে
দেয়ালঘড়িতে
বারটার দিকদরশন।
সময়আবহ-
পটভূমি থেকে ঝরে পড়ে-আবাল্যশৈশব,
ছেঁড়া ঘুড়ির পেছনে দৌড়,
দক্ষিণভূর্ষির পথে পথে প্রজাপতি বালিকার রঙিন ডানায় চেপে ফেরা রং
Ñসময়সংকলন।
নঞর্থক ঘুমে লীন হ’তে হ’তে
চোখে
ভেসে ওঠে চালচিত্র-
উত্তরদুয়ারি বাড়ির কার্নিশে জোড়াশালিখের সংসার-
খড়কুটোর পাঁচালি-গলায় গলায় প্রেম।
সামন্ত আঁধারে
জীবনের ঘানি টেনে টেনে
কালচক্রে
বসুদার আত্মহননের পর কল্পনা বৌদির ল²ির সংসারে ভাঙনের লয়,
পায়ের সমান জীবনবিতান ছেড়ে শরীরসমান মাটির মরমে মেশা এমিলি আপুর
শবযাত্রা।
মধুর প্রচলে
আমাদের উদাসিন দেখে
প্রপিতামহরা
বলতেন-শোন,
অশথতলায়
মন্দিরের উলুধ্বনি, গিরজার ঢ ং ঢ ং,
মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা সুরেলা আযান…।-সবই তাহার, একই
সুখের আরাধনা!
নিখিল নাস্তির সঙ্ঘারামে
এইসব
অমৃতকথার গোপনদরোজা খুলে দেখি,
ইন্দ্র-জাল!
কত ধান আর কত চাল!
ঘুমঘোরে আরো দেখি, ভুবনপাড়ার জংশনে নওল দিনের সখা, কড়া হুইসেল,
চলে যাচ্ছে রেলগাড়ি…
উৎসর্গ- এমি। সবুজ আপুটি। হলুদশাসনে ঝরে গেছে পাতাঝরাকালে।
ক্রিড়া : বাঘ না শাপলা
এ হাতে ও হাতে ঘুরি চাঁদি, যখন যাহার হাতে থাকি তখন তাহার।
জুয়ার টেবিল। আঙুলের নিবিড় টোকায় ঘোরে শিল্পমুদ্রা… বাতাসে ভাসে জিজ্ঞাসা : কি নেবে হে? বাঘ না শাপলা? ঘেমে উঠা নাভিশ্বাস ভেঙে বললাম : শাপলার সখা আমি অরণ্যবিভূতি। বিদ্যুৎঘূর্ণন শেষে চোখের তারায় ধাঁধা, শেষ হাসির সমরে ক্রিড়াফল : বাঘ-ভয়ার্তসন্ধ্যায় নিয়ে যায় মূলধন রমণ কামড়ে!
খেলা শেষে-নিভে গেলে বেলা, গুটিয়ে রঙের মেলা, কড়ির শিকলে বাঁধা বামনপরাণ নিরব চরণে ফিরে এসে দেখি : বরষার দিঘিচোখে ফুটে আছে একটি শাপলা।
একবার ‘আপনা’কে চেনাকর্মে অচেনা আমাকে আপন ভাবে যে-তাকে
জলপাইপাতারকুটির
সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি
করে-মানুষ কর নি। রবীন্দ্রনাথ
বাঙালিমাতার শতছিন্ন শাড়ির আঁচল হাওয়ায়
এই বেলা আধাআধি বুজে আছি চোখ-কাকঘুম
ক্ষণপরে
সুবহে সাদেকে নূরানিবায়ুপ্রবাহে ফেরে মোয়াজ্জিন হাঁক
: আসসালাতু খায়রুম মিনান নাওম
অতঃপর
দিবস ও রজনির মধ্যচাপে পুবআকাশ ককায়
প্রসববেদনাভয়াতুরা একটি সকাল
তবু যাত্রারম্ভ…
মুখে পুরে পোড়ামরিচের ঘ্রাণভরা এক সানকি পান্তার
নুনহীন অমল গরাস
একঢোক পানি
অকস্মাৎ দরোজায় কড়ানাড়া, নিমাই পালারে, বর্গি এল দেশে, নাওয়া-খাওয়া ভুলে সহসা পালাতে গিয়ে মঞ্জুশ্রীর চরণতলে গোঙানো গনেশপরাণ (ট্রাইবাল) চোখ রাখি জানালায়-ভাসে দৃশ্যপট : ঘাসের সবুজ ত্বকে বাসর সাজানো কুয়াশায় উঁকি দিয়ে ঊষারানি সন্তর্পণে ঢোকে অন্য এক কুয়াশাভিরামপুরে।
পেরেস্ত্রোইকা : সময়-গোধূলি সন্ধির নৃত্য
মঙ্গল আলোকে দেখা!
লোহিত মাটির মেয়ে! দেখে-
দু’হাতে শিকল পরা কিশোরের-কুঁড়িগ্রামে-
বুড়োআঙুলের পেটে ঘোরে লাটিমপৃথিবী!
চোখ,
চল দেখে আসি সরিষাফুলের ক্যানভাস,
যাপিত জীবন বোঝাপড়াকাজে অবকাশ যাপনে কাটাব সঙিন সময়।
দিন যায়-
তিমির রজনি পটে-
দিগন্ত উজ্জ্বল গোধূলি মাড়ায় সূর্যশিশু লাল লাল আকুলিবিকুলি প্রাণে
পেলব আদরে হাতছানি দেয়
আঁধারধরণিমাতা।
এই ক্রান্তিকালে
হরহামেশা পরাণে লাগে
মৈত্রয়ির নীড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদে বিশ্ববাউলের একতারা!
চোখ,
যাবে না-কি?
: ‘কালের যাত্রা’র পথে প্ররোচনা দেয় যাপিত জীবন!
বাদলের উকুন কাহিনি
স্বর্ণালি পৃথিবী ভুলে যাব-ভেবে-একদিন, শ্যামলিমা, ললিত আঙুলে দীঘল পরিধিময় চুল থেকে তোলে এনে একটি উকুন আমার মাথায় ছেড়ে-বলেছিল : জেনো, আলতো কামড়ে আমাকে পড়বে মনে শ্রাবণ নিশিতে জানালায়। আমিও-বা কম কিসে? যেন দেবদাস-ভুলে গেছি চিরুনি চালনা, বাবরি দোলানো চুলের বাহার ও সেলুনে যাতায়াত-ভয়! পাছে ঝড়ে পড়ে প্রেমিকার সাধের উকুন, ভাবি : পোকামাকড়ের অধিবাসে কিবা আসে একটি উকুনে?
এখন মাথায় উকুনের রাজ্যপাট, কা-ম-ড়ে-কা-ম-ড়ে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি, শয়নে স্বপনে অভিসারে ডাকে ‘একগাছি দড়ি হাতে’ কলাতলে।