004744
Total Users : 4744
Charbak magazine logo
sorolrekha logo

লেখক তালিকা

জন্ম. ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে। সম্পাদনা করছেন ‘চারবাক’ ও ‘সরলরেখা’। যুক্ত আছেন সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’র সাথে। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: মায়াহরিণ, কাব্যগ্রন্থ ২০০৮, চারবাক, বুদ্ধিজীবীর দায়ভার, সম্পাদনা ২০০৯, সংবেদ, পক্ষ—প্রতিপক্ষ অথবা শত্রু—মিত্র, প্রবন্ধ ২০১০, চারবাক, নির্বাচিত চারবাক, সম্পাদনা ২০১১, চারবাক, নাচঘর, কবিতা, ২০১২, চারবাক, ভাষা সাম্প্রদায়িকতা অথবা সাম্রাজ্যবাদি খপ্পর, প্রবন্ধ, ২০১৩, চারবাক এবং মুখোশ, কবিতা, ২০১৬, চারবাক, করোনাকালে, কবিতা, ২০২২, চারবাক।
View Posts →
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
View Posts →
প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ
View Posts →
বাংলাদেশের উত্তরউপনিবেশি ভাবচর্চার পথিকৃৎ ফয়েজ আলম একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। উপনিবেশি শাসন-শোষণ আর তার পরিণাম, রাষ্ট্র ও সমধর্মী মেল কর্তৃক ব্যক্তির উপর শোষণ-নিপীড়ন ও ক্ষমতার নানামুখি প্রকাশ আর এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন তিনি। বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের নয়াউপনিবেশি আর্থ-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর রাষ্ট্র ও স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর শোষণচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার লেখা আমাদের উদ্দীপ্ত আর সাহসী করে তোলে। রুহানিয়াত সমৃদ্ধ দার্শনিক ভাবচর্চা আর সাহিত্যিক-রাজনৈতিক তত্ত্বচর্চাকে একসাথে কবিতার দেহে ধারণ করতে সক্ষম ফয়েজ আলমের সহজিয়া কবিতা। তার কবিতায় তিনি মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তার কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার যোগীরনগুয়া গ্রামে। বাবা মরহুম শেখ আবদুস সামাদ, মা সামসুন্নাহার খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ পাশ করার পর প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য এমফিল. ডিগ্রী লাভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ব্যক্তির মৃত্যু ও খাপ-খাওয়া মানুষ (কবিতা, ১৯৯৯); প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি ( গবেষণা, ২০০৪); এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজম (অনুবাদ, ২০০৫); উত্তর-উপনিবেশি মন (প্রবন্ধ, ২০০৬); কাভারিং ইসলাম (অনুবাদ, ২০০৬), ভাষা, ক্ষমতা ও আমাদের লড়াই প্রসঙ্গে (প্রবন্ধ, ২০০৮); বুদ্ধিজীবী, তার দায় ও বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব (প্রবন্ধ, ২০১২), জলছাপে লেখা (কবিতা, ২০২১), রাইতের আগে একটা গান (কবিতা, ২০২২); ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (প্রবন্ধ, ২০২২)।
View Posts →
কবি ও গল্পকার। যুক্ত আছেন চারবাক সম্পাদনা পরিবারের সাথে।
View Posts →
কবি। জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়।
View Posts →
প্রাবন্ধিক। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। বর্তমানে প্রান্তীয় কৃষক-মধুচাষি, বেতবাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন নিয়ে কাজ করছেন।
View Posts →
জন্ম— জুন, ০৬, ১৯৭৭। জন্মস্থান— উত্তর গোবীন্দর খীল, হাঁদু চৌধুরী বাড়ী, পটিয়া, চট্টগ্রাম। (শৈশব কৈশোর ও তারুণ্যের সময়যাপন) বেড়ে ওঠা (পূর্ব্ব বালিয়াদী, মীরশ্বরাই, চট্টগ্রাম) নানার বাড়ীতে। প্রকাশিত কবিতার বই— ফুলেরা পোষাক পরে না (সাল: ২০১৮, প্রকাশক : মনফকিরা, কলিকেতা)। প্রকাশিতব্য বই— অর্দ্ধনারীশ্বরবাদ : প্রকৃতিপুরুষতত্ত্ব (নন্দনতত্ত্ব), বটতলার বয়ান (ভাষাতাত্ত্বিক গদ্য) ও উদ্ভিদপ্রতিভা (কবিতা)। সম্পাদক— চারবাক।
View Posts →

সম্পূর্ণ লেখক তালিকা

জুদাস ইস্কারিয়োৎ: কিরিয়তের মুক্তিদাতা অথবা গেৎশিমানি বাগানের বিশ্বাসঘাতক

পর্ব: এক- যারা চরায় তোমার ধেনু

Many arguments have been raised against the story of Judas, but they are unconvincing.-Durant, Will (Caesar and Christ), P 571

ইহুদি মহাসভা যিশুকে কেন মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল? তার জবাব খ্রিস্টান সুসমাচারগুলোতেই আছে: আমাদের জাতির বদলে তাকেই ঝুলতে হবে। এর প্রেক্ষিতে যিশুহত্যা একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছিল। এছাড়া মহাসভা কুফরির অভিযোগ এনেছিল যে, যিশু নিজেকে ঈশ্বরপুত্র বলে দাবি করেছেন এবং বায়তুল মোকাদ্দস ভেঙে ফেলতে চেয়েছেন।

কিন্তু খ্রিস্টান অ্যাপোক্রাইফাগুলোতে ভিন্ন ভাষ্যও রয়েছে এবং এই মতটিও প্রবল হয়ে ওঠে যে, প্রথম শতাব্দির প্রথমার্ধের ইহুদিরা এমন একজন অলৌকিক ত্রাণকর্তার জন্য অপেক্ষমান ছিল, যিনি তাদেরকে রোমান শাসন থেকে সামরিক বিজয় এনে দেবেন। কিন্তু গির্জার বাইবেল যিশুর প্রচারকে বেহেশতি রাজ্য প্রতিষ্ঠার দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে রোমানদের সঙ্গে আপস-রফার একটি পথ করে নেয়, কিংবা, হয়তো এই আপস-রফার পরই যিশুর দুনিয়াবি রাজ্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস বেহেশতি রাজ্যের দিকে মোড় নেয়।

একটি মাত্র চরিত্র, অথচ তাকে নিয়ে কাহিনির কি ভিন্নতা। এরকম প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্নটিও উঠতে পারে যে, বাস্তবে যিশু নামের কেউ থাকলেও তাকে প্রতিশ্র“ত মসিহ দেখাতে গিয়ে জুদাস নামের তারই একজন শিষ্যকে বিশ্বাসঘাতক বানানো হলো কি-না, যে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে তার নবি/রাব্বি/মসিহকে শত্র“দের হাতে ধরিয়ে দিলো।

জুদাসের সুসমাচার ও জুদাস
যিশুর জেরুশালেম উপস্থিতি কি সম্ভাব্য কোনও বিপ্লবের অনুঘটক হতো? এর জবাবে বেনইয়ামিনের নামে রচিত জুদাসের সুসমাচারে দেখতে পাওয়া যায় যে, জুদাস প্রথমে যিশুর জেরুশালেমে আগমন থেকে তাকে নিরত রাখতে চাইছিলেন, পরে তার নিরাপত্তা নিয়ে ভেবেছেন। তার মনে হয়েছে যে যিশুকে গালিলে ফিরিয়ে নিতে পারলেই তিনি রোমানদের চোখের আড়াল হয়ে যাবেন। তখন গালিল শাসন করছিলেন হেরোদ দ্য গ্রেটের পুত্র হেরোদ আন্তিপাস। এবং জেরুশালেমে ইহুদি ধর্মনেতাদের যে প্রভাব ছিল, গালিলে সেরকম ছিল না।১

জেরুশালেমে যিশুর ওপর বিপদ নেমে এলে তাকে কিভাবে রক্ষা করা যাবে, যিশু তা নিয়ে একজন আলেমের সঙ্গে আলাপ করে রাখেন, তাকে জুদাসের কাছে যিশুর প্রতি সহমর্মি বলে প্রতিভাত হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত মুহূর্তে এসে সেই ফরিশিই বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং যিশুকে ধরিয়ে দেন, কিন্তু তিনি এ কারণে জুদাসের ওপর দোষ চাপান। পিতরও কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাকে অপবাদ দেন।

জুদাস ও নতুন নিয়ম
মার্ক ও মথির বিবরণ মতে, জুদাস লোভ সামলাতে না পেরে মাত্র ত্রিশটি রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে যিশুকে শত্র“দের হাতে ধরিয়ে দেন। কিন্তু লুক ও যোহন জানান যে, শয়তানই জুদাসকে দিয়ে এ কাজ করিয়েছিল। এরপর যোহন যিশুর বরাত দিয়ে বলেন যে, ‘আমি তোমাদের বারোজনকে বেছে নিয়েছি। কিন্তু, তাসত্তে¡ও, তোমাদের একজন দুষ্ট’!’ সুসমাচার লেখকদের মতে, যিশু শিমন ইস্কারিয়োতের পুত্র জুদাসের কথাই বলছিলেন (যোহন ৬:৭০-৭১)।২ মথি, মার্ক ও লুক

সমান্তরাল বিবরণ হলো, বিশ্বাসঘাতকতা যে করা হবে, যিশু তা জানতেন। পুরাতন নিয়মের নবিরাই তা বলে গেছেন। তাছাড়া জুদাস একজন ‘চোর’ বলেও অভিযুক্ত হন।

জুদাসের মৃত্যু নিয়ে গির্জার সুসমাচারগুলোতে পরস্পরবিরোধি বিবরণ রয়েছে। মথির মতে, জুদাস যখন তার বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম দেখলেন, তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলেন। কিন্তু গ্রন্থ প্রেরিত জানাচ্ছে, জুদাস মাটিতে পড়ে গিয়ে নাড়িভূঁড়ি ফেটে মারা যান। মথির বিবরণ থেকে সৃষ্ট খ্রিস্টান ঐতিহ্য মতে, জুদাস ‘জুদাসের বৃক্ষ’ নামের একটি গাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন।… প্রেরিত (১:১৮) ‘এ কথা বলে যে, জুদাস দুর্ঘটনাবশত মারা যাননি, তিনি নিজেকে ফেলে দিয়েছিলেন। অ্যাপোক্রাইফিয় সুসমাচারগুলো প্রেরিতের বিবরণকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়ে তার মৃত্যুস্থানটিকে (মাঠ) রক্তের জায়গা (মাঠ) বলে অভিহিত করে। জুদাসের মৃত্যু নিয়ে প্রথম/দ্বিতীয় শতাব্দির অ্যাপোস্টলিক ফাদার পাপিয়াসের একটি ভয়াল বর্ণনা উদ্ধৃত করা হয়, যার মাধ্যমে এই ধারণা যৌক্তিক বলে দেখাতে চাওয়া হয় যে, সুসমাচারের ভবিষ্যদ্বাণিগুলো আক্ষরিকভাবেই পূর্ণতা পেয়েছে। পাপিয়াসের বিবরণ নানান কিংবদন্তিতে, বিশেষত কিবতি রচনাকর্ম এবং মধ্যযুগিয় সাহিত্যে পাওয়া যায়। দান্তের ইনফার্নোতে জুদাস কাইজার হত্যাকারি ব্র“টাস এবং ক্যাসিয়াসের সঙ্গে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরবাসি হয়ে দেখা দেন।৩

বহিষ্কার-কার কর্তৃত্বে?
এক. যিশুর ঊর্ধ্বারোহণের পর শিষ্যরা মিলে পিতরের নেতৃত্বে যে কাজটি প্রথম করলেন, সেটি হলো জুদাসকে প্রেরিতদের দল থেকে বহিষ্কার করে মত্তথিয় নামের একজনকে নিলেন (প্রেরিত ১:১২-২৬)। প্রশ্ন হচ্ছে যে, সেই এখতিয়ার কি পিতর বা অন্য প্রেরিতদের ছিল? কে তাদের তা দিয়েছিল? তাছাড়া যিশু আগাম জেনে থাকলেও সম্ভাব্য বিশ্বাসঘাতককে প্রেরিতদের দল থেকে বের করে দেননি, বা অন্য কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করারও ওসিয়ত করে যাননি এবং তার বিরুদ্ধে বিষোদ্গারও করেননি। যিশুর বাছাই যেখানে চূড়ান্ত তথা ঐশ্বরিক হওয়ার কথা, সেখানে জুদাসকে বহিষ্কার কিভাবে ঘটলো-এ প্রশ্নটিও কি অস্বাভাবিক?

দুই. প্রশ্ন আরেকটি দাঁড়ায় যে, মোরগ ডাকার আগে যে পিতর যিশুকে তিন-তিনবার অস্বিকার করেছিলেন, সেই পিতর কিভাবে প্রেরিত দলে থাকেন, আর জুদাস বহিষ্কৃত হন?

জুদাস কি ভবিষ্যদ্বাণির শিকার?
তাছাড়া বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়টি যদি পূর্বনির্ধারিতই হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তিটির কি অপরাধ যে, তার বেঘোরে প্রাণ যাবে, বা দল থেকে বহিষ্কার হবে? কারণ ঈশ্বর নিজেই তো তাকে একটি যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন, নয় কি?
বাইবেলের একটি কর্তৃপক্ষিয় ভাষ্য মতে-‘তার বাড়ি খালি থাকুক, কারণ তার কোনও বংশধর নাই। জবুর ৬৯:২৫ আয়াতে কথাটা বহুবচনে আছে; পিতর তা কেবল এহুদাকে নিয়েই ব্যবহার করেছেন এবং ১:২১-২৬ আয়াতের কথায় চলে যাওয়ার জন্য ১০৯:৮ আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়েছেন।’৪ প্রশ্ন হচ্ছে যে, পিতর তা শুধু এহুদার বেলায় ব্যবহার করবেন কেন এবং বহুবচনই বা কেন একবচনে রূপান্তরিত হবে?

এবার পিতরকে একটু বিশ্লেষণ করা যাক। এবং প্রথম উদ্ধৃতিটি এই:
তাদের জায়গা যেন পরিত্যক্ত থাকে;
একজনও কেউ যেন তাদের তাঁবুতে বাস না-করে। জবুর ৬৯:২৫

জবুরকে পরিভাষাগত দিক থেকে ‘কাওয়ালি’ বলে অভিহিত করা হয় এবং মূলপাঠ বিশ্লেষণে দেখা যাবে যে, দাউদ এই দুটি পঙ্ক্তি নিজ শত্র“দের বিরুদ্ধে গেয়েছেন, তার আল­াহকে উদ্দেশ্য করে। এখানে যিশু এবং জুদাস কি প্রাসঙ্গিক? বহুবচনও বা কেন একবচনে বিলিন হবে?
দ্বিতীয় উদ্ধৃতিটি হলো:
তার দিনগুলো যেন কমে আসে;
নেতৃত্বে যেন অন্য একজন তার স্থান নেয়।
এবং এই কথাগুলোকে পূর্ববর্তি পঙ্ক্তিগুলো-সহ নিলে এরকম দাঁড়ায়:
১আমার আল­াহ, যার আমি প্রশংসা গাই,
তুমি চুপ মেরে থেকো না,
২যেসব দুষ্ট এবং প্রবঞ্চক
আমার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে তাদের বিষয়ে;
তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলছে।
৩তারা ঘৃণার বাক্য নিয়ে আমাকে ঘিরে আছে;
তারা আমাকে আক্রমণ করছে কোনও কারণ ছাড়াই
৪আমার বন্ধুত্বের বিনিময়ে তারা আমাকে দোষ দিচ্ছে,
কিন্তু আমি মুনাজাতগুজার বান্দা।
৫তারা আমাকে ভালোর প্রতিদানে দিচ্ছে মন্দ,
আর আমার বন্ধুত্বকে করছে ঘৃণা।
৬আমার শত্র“র বিরোধিতায় কোনও দুষ্টকে নিয়োগ দাও;
তার ডানহাতে দাঁড় করাও একজন অভিযোগকারিকে।
৭যখন তার বিচার হবে সে যেন দোষি সাব্যস্ত হয়,
আর তার মুনাজাত যেন তাকে দোষি বানায়।
৮তার দিনগুলো কমে আসুক;
তার নেতৃত্বের স্থান যেন অন্য কেউ নিয়ে যায়।
৯তার সন্তানেরা হোক পিতৃহীন
এবং তার স্ত্রি হোক বিধবা।
১০তার সন্তানেরা ভিক্ষুক হয়ে ঘুরে বেড়াক;
তারা যেন তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি থেকে হয় বিতাড়িত।
-জবুর ১০৯:১-১০

প্রশ্ন যে, পিতর এখানে জুদাসকে কিভাবে পেলেন? তাছাড়া সুসমাচারিয় বিবরণ মতেই পিতর গালিল সাগরের একজন জেলে, যিশু তাকে গালিল সাগরপার থেকেই সঙ্গি করেন, যখন তিনি মাছ ধরছিলেন। তাছাড়া কফরনাহুমের একজন টোল আদায়কারি মথি, যাকে একজন রোমান কর্মচারি হওয়ায় একঘরে হয়ে থাকতে হতো, তিনিও জবুর থেকে হুবহু উদ্ধৃতি দিচ্ছেন?

জুদাস ও ইসলাম
কুরআনের বিবরণ মতে, যিশুর মূল শত্র“ ইহুদিরাই এবং তারা যখন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আঁটছিল, তখন আল­াহও একটা ব্যবস্থা নিয়ে রাখেন। তাছাড়া শিষ্যদের দলে কোনও বিশ্বাসঘাতক ছিল, কুরআন সেরকম কোনও ইঙ্গিতও নাই: শিষ্যরা সক্রিয়ভাবে যিশুর পক্ষ নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এরপর বিপদ আসন্ন দেখে আল­াহ যিশুকে নিজের কাছে তোলে নেন এবং ইহুদিরা তাকে না হত্যা, বা ক্রুশে চড়াতে পেরেছিল। এই পরিস্থিতিতে কুরআনে মূলপাঠ এরকম: ৫২কিন্তু যিশু যখন তাদের অবিশ্বাসের ব্যাপারে সতর্ক হলো, সে চিৎকার করে বললো: আল­াহর কারণে কে আমার সাহায্য হবে? শিষ্যরা বললো: আমরা আল­াহর সাহায্যকারি হবো, আমরা আল­াহতে বিশ্বাস করি এবং তুমি সাক্ষি থাকো যে, আমরা (তার কাছে) আত্মসমর্পণকারি (মুসলিম) হয়েছি। ৫৩আমাদের মাবুদ! আমরা তাতে বিশ্বাস করি যা তুমি প্রত্যাদেশ করেছো এবং আমরা তাকে অনুসরণ করি যাকে তুমি পাঠিয়েছো। আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করো যারা সাক্ষি (সত্যের)। ৫৪এবং তারা (অবিশ্বাসিগণ) একটি পরিকল্পনা নিলো এবং আল­াহও পরিকল্পনা নিলেন (তার বিরুদ্ধে): এবং আল­াহ পরিকল্পনাকারিদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। ৫৫(এবং স্মরণ করো) যখন আল­াহ বললেন: হে যিশু! আমি তোমাকে নিয়ে আসতে এবং আমার কাছে তোমাকে উঠিয়ে আনতে যাচ্ছি, এবং আমি তোমাকে তাদের হতে পবিত্র করছি যারা অবিশ্বাসি…১৫৭এবং তাদের এই কথার কারণে: আমরা আল­াহর বাণিবাহক মরিয়মপুত্র মসিহকে হত্যা করেছি-তারা তাকে না হত্যা করেছে, না ক্রুশবিদ্ধ করেছে, কিন্তু তাদের কাছে সেভাবেই দৃশ্যমান হয়েছে। হে তোমরা যারা ঈমান এনেছো! আল­াহর সাহায্যকারি হও, এমনকি যেভাবে মরিয়মপুত্র যিশু তার শিষ্যদের বলেছিল: আল­াহর জন্য কে আমার সাহায্যকারি হবে? তারা বললো: আমরা আল­াহর সাহায্যকারি। এবং বনি ইসরাইলের একদল বিশ্বাস করলো, কিন্তু অপর একটি দল করলো অবিশ্বাস। তখন আমরা তাদের শক্তিশালি করলাম যারা তাদের শত্র“দের বিরুদ্ধে বিশ্বাস করেছিল। এবং তারাই উপরে উঠলো।’৫ এ থেকে স্পষ্ট যে, এখানে জুদাস চরিত্রটি নাই, কিন্তু, তাসত্তে¡ও, ইসলামি ঐতিহ্যে জুদাস একজন বিশ্বাসঘাতক: সময়কালে জুদাসের চেহারা যিশুর চেহারায় রূপ নেয় এবং যিশুর বদলে তাকেই ক্রুশে ঝুলতে হয়। এবং সেই সূত্রে, মথির সুসমাচারে বর্ণিত ‘ইলি ইলি লামা শবাক্তানি’ যিনি বলেছিলেন, তিনি যিশু নন, হয়তোবা অন্য কেউ। তবে আমরা নিশ্চিত না, তিনি কে এবং ইহুদিদের কেন ভ্রম হয়েছিল যে, তারা যিশুকেই ক্রুশে দিয়েছে।

বার্নাবাসের সুসমাচার ও জুদাস
বিশেষজ্ঞদের মতে, যিশু ও জুদাস সম্পর্কিত ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি বার্নাবাসের সুসমাচার থেকে প্রভাবিত হয়ে থাকবে। মুসলিম ভাষ্যকারদের কেউ কেউ বার্নাবার সুসমাচারকে বার্নাবার নিজের লেখা বলেও মনে করেন। নতুন নিয়মের বিবরণ মতে, বার্নাবা আদি খ্রিস্টান সমাজের, দ্বিতীয় প্রজন্মের, একজন প্রথম সারির প্রচারক ছিলেন, একজন সাইপ্রাসিয় ইহুদি। নবগঠিত খ্রিস্টান স¤প্রদায় তাকে ‘উৎসাহদাতা’ বলে সম্বোধন করতো। বার্নাবা সাইপ্রাসিয় চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি পল তার্শুসকে জেরুশালেমের খ্রিস্টান নেতাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা দেন, পরে পলের সঙ্গি হয়ে প্রচার কাজ চালান এবং মার্কেরও সঙ্গি হন। বার্নাবার সুসমাচারে দেখা যায় যে, জুদাস যখন যিশুকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য রোমান সৈন্যদের নিয়ে আসছিলেন, আল­াহ তখন যিশুর কাছে জিব্রাইলের নেতৃত্বে একদল ফেরেশতাকে পাঠান। এরপর ‘জুদাস দ্রুতবেগে এসে যিশুকে যে-ঘর থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল সেখানে সবার আগে ঢোকেন, শিষ্যরা ঘুমোচ্ছিলেন। তখন বিস্ময়কর আল­াহ বিস্ময়করভাবে কাজ করেন: জুদাস তার জবানে এবং চেহারায় যিশুর মতো এতো বদলে যায় যে, আমরা তাকে যিশু বলে বিশ্বাস করি। এবং সে, আমাদের জাগিয়ে দিয়ে রাব্বির খোঁজ জানতে চায়। তখন আমরা বিস্মিত হয়ে উত্তর দিলাম: ‘রাব্বি, আপনি কি আমাদের ভুলে গেছেন?’ সে মুচকি হেসে বললো: ‘তোমরা তো দেখি এখন বোকা হয়ে গেছো, আমি জুদাস ইস্কারিয়োতকেও তোমরা চিনতে পারছো না!’ সে যখন কথা বলছিল তখন সৈন্যরা এসে সেখানে ঢুকে, তারা জুদাসের ওপরই হাত রাখে। কারণ সবদিক থেকে তাকে যিশুর মতো দেখাচ্ছিল। জুদাসের এই রূপান্তর কেউই ধরতে পারেনি: বার্নাবাস-সহ তার ঘনিষ্ঠ শিষ্যবৃন্দ, সাধারণ জনতা, পন্টিয়াস পিলাত হেরোদ বা মহাসভার কেউ, এমনকি স্বয়ং মা মরিয়মও যিশুরূপি জুদাসকে পুত্র না-ভেবে পারেন না। এরপর জুদাসকেই ক্রুশবিদ্ধ করা হলো। এর তিনদিন পর যিশুর একদল বেপরোয়া শিষ্য কবর থেকে তার লাশ চুরি করে নিয়ে গেলে গুজব ছড়ালো যে, যিশু আবার জীবিত হয়ে উঠেছেন। সে-কথা নাসরতে কুমারি মরিয়মের কানেও পৌঁছে যায়। তিনি তখন পুত্রকে দেখার আকুল বাসনায় কাঁদতে থাকেন এবং জেরুশালেমে আসেন। মায়ের খবর তৃতীয় আকাশে ফেরেশতাদের সঙ্গে অবস্থানরত যিশু শুনতে পেয়ে আল­াহর কাছে মুনাজাত করেন। এরপর ফেরেশতারা তাকে নিয়ে জেরুশালেমে মা মরিয়মের ঘরে নেমে আসেন, যেখানে তখন মা মরিয়ম, দুই বোন, মার্থা এবং মরিয়ম মগদলিনি, লাসার, বার্নাবাস নিজে এবং যোহন, ইয়াকুব ও পিতর ছিলেন। যিশু তাদের কাছে সত্য প্রকাশ করে, তাদের সঙ্গে তিনদিন কাটিয়ে আবার আকাশলোকে ফিরে যান।৬

নস্টিসিজম ও জুদাস
আদি খ্রিস্টান স¤প্রদায় দ্বিতীয় শতাব্দিতে বিকশিত খ্রিস্টিয় ফেরকা নস্টিসিজমকে মুরতাদপন্থা বলে ঘোষণা করেছিল। ১৯৭০ সালে মিশরে আবিষ্কৃত অ্যাপোক্রাইফা গসপেল অব জুদাস নস্টিকদেরই রচনা বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করে থাকেন। এটির গ্রিক মূলপাঠে দেখা যায় যে, জুদাস যিশুর একজন সহযোগি ও আস্থাভাজন শিষ্য। এবং তিনিই একমাত্র প্রেরিত যিনি যিশুর বার্তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। এবং যিশুর নির্দেশ মতোই কাজ করছেন। যিশু জানতেন যে, তার জন্য ক্রুশবিদ্ধ মৃত্যু নির্ধারিত হয়ে আছে, তারপর পুনরুত্থিত হবেন। তাই ঘনিষ্ঠ শিষ্য ও বন্ধু জুদাসকে বললেন, তাকে বিশ্বাসঘাতকতার মধ্য দিয়ে কর্তৃপক্ষের হাতে তোলে দিতে। এ কারণে তিনি অন্য শিষ্যসঙ্গিদের ‘ছাড়িয়ে’ যাবেন।’

নস্টিক বিবরণ মতে, উদ্ধার-ঈদ উদ্যাপন উপলক্ষে যিশু জুদাসকে একপাশে ডেকে নেন এবং তার কাছে ঈশ্বর ও সৃষ্টি বিষয়ে গোপন জ্ঞান প্রকাশ করেন। এবং ঘোষণা দেন যে, জুদাস অন্য প্রেরিতদের চাইতে বড়। এবং ভাষ্য মতে, ‘জুদাসের সুসমাচারের জুদাস ইস্কারিয়োৎ যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতক, তবে তিনি একইসঙ্গে সুসমাচারটির নায়কও। তিনি যিশুকে বলেন, ‘আমি জানি, আপনি কে এবং আপনি কোথা হতে এসেছেন। আপনি বারবেলোর চিরন্তন রাজ্য হতে এসেছেন। এবং আমি তার যোগ্য নই যে, আপনাকে যিনি পাঠিয়েছেন তার নাম উচ্চারণ করবো।’ জুদাসের সুসমাচারের আধ্যাত্মিক দুনিয়ায়, স্বিকারোক্তি করা যে ‘যিশু বারবেলোর চিরন্তন রাজ্য’ থেকে এসেছেন তার মানে স্বিকার করা যে তিনি একজন স্বর্গিয় সত্তা, এবং সেই একজনের অবর্ণনিয় নামের ঘোষণা দেয়া যিনি যিশুকে স্বিকারোক্তি দিতে পাঠিয়েছেন যে সত্য-ঈশ্বর মহাজগতের অসিম আত্মা। অপর শিষ্য, যারা যিশুকে ভুল বুঝেছিলেন এবং তার সামনে দাঁড়ানো সহ্য করতে পারেননি, সেক্ষেত্রে জুদাস বুঝতে পেরেছিলেন যে যিশু কে, তিনি তার সামনে স্থান নিলেন এবং তার কাছ থেকে শিক্ষা নিলেন। জুদাসের সুসমাচারে জুদাস শেষ পর্যন্ত যিশুর সঙ্গে বেঈমানি করলেন, কিন্ত তা করলেন তার জ্ঞাতসারে এবং আন্তরিক অনুরোধ থেকে। যিশু অন্য শিষ্যদের দেখিয়েই জুদাসকে বললেন, ‘তুমি তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ তুমি সেই মানুষটিকে কুরবানি করবে যে আমাকে আবৃত করে রাখে।’ জুদাসের সুসমাচার অনুসারে, যিশু ত্রাণকর্তা কিন্তু তা তার মানবিক সত্তার হওয়ার কারণে নয়, যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে ঢেকে রেখেছেন, তার কারণ তিনি আত্মা বা আধ্যাত্মিক মানুষকে প্রদর্শিত করতে পারেন যে তার অন্তর্গত আছে, এবং যিশুর সত্যিকার গৃহ এই নিম্নস্থ অসম্পূর্ণ পৃথিবীতে নয়, কিন্তু সেটি আলোকের স্বর্গিয় পৃথিবীতে এবং জীবনে। কারণ জুদাসের সুসমাচারে মৃত্যু কোনও ট্র্যাজেডি বা মানবজাতির উদ্ধারকারিকে নিয়ে আসার জন্য একটি প্রয়োজনিয় শয়তান বলে দেখা হয়নি।

নতুন নিয়মের সুসমাচারের বিপরিতে, জুদাসের সুসমাচারে যিশুর হাস্য একটি বড় বিষয়। তিনি শিষ্যদের মিথ্যা গর্ব এবং মানবজীবনের অর্থহীনতা দেখে হাসেন। মৃত্যু, এই অর্থহীন শরিরি অস্তিত্ব থেকে প্রস্থান করা, ভয়ের বা আতংকের কিছু না। দুঃখের উপলক্ষ্য থেকে অনেক দূরে থেকে মৃত্যু হচ্ছে একটা উপায় যার দ্বারা যিশু দেহকাঠামো থেকে মুক্ত হবেন যাতে তিনি তার বেহেশতি মোকামে ফিরে যেতে পারেন, এবং যিশুর সঙ্গে বেঈমানি করে জুদাস তার বন্ধুকে সাহায্য করেন তার দেহকে ছুঁড়ে ফেলে এবং তার ভিতরের আমি, স্বর্গিয় আমিত্বকে মুক্ত করতে।’৭

জুদাসের সুসমাচার চামড়ায় বাঁধাই-করা একটি প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপি, তবে ৭০ সালে আবিষ্কৃত হলেও ২০০০ সালের আগে পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের কাছেও সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি, এ সময় এটি গ্রিক থেকে একটি মিশরিয় ভাষায় (কপ্টিক) অনূদিত দ্বিতীয় শতাব্দির একটি রচনাকর্ম হিসেবে প্রমাণিত হয়। ২০০৬ সালে প্রথম ইংরেজি অনুবাদে সাধারণ পাঠকের নাগালে আসে। জুদাসের সুসমাচারের বর্তমান পুনর্লেখকদ্বয়-জেফরি আর্চার এবং ফ্রান্সিস জে. মলোনি-বলেছেন যে, ‘জুদাস বর্ণিত সুসমাচার এখানে সেই মূলপাঠ উদ্দিপ্ত হয়ে বিবরণবদ্ধ হয়নি, কিন্তু এটি জুদাসের চোখ দিয়ে খ্রিস্টান গল্প হাজির করার প্রচেষ্টা।’

জুদাস ও অন্তর্কোন্দল
প্রশ্ন হচ্ছে যে, জুদাস কি সঙ্গিশিষ্যদের অন্তর্কোন্দল, ঈর্ষা বা প্রাদেশিকতার শিকার? এ প্রশ্ন, কারণ, সুসমাচারগুলোর বিবরণ থেকেই দেখা যায় যে, যিশুর শিষ্যদের মধ্যে একমাত্র জুদাসই এহুদা প্রদেশের কিরিয়ৎ থেকে এসেছিলেন, বাকি সবাই ছিলেন গালিলবাসি। দ্বিতীয়ত, জুদাস মূলত যোহন দ্য ব্যাপ্টিস্টের শিষ্য ছিলেন, তিনি তার নবির কথায় যিশুর সঙ্গ নেন এবং একজন আস্থাভাজনে পরিণত হন, যা যিশুর মূল শিষ্যদের সেভাবে পছন্দ না-ও হতে পারে। তাছাড়া নবি ইয়াহিয়া যিশুকে সরাসরি ‘মসিহ’ বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সেরকম বিবরণ নাই। চতুর্থত, দেখতে পাওয়া যায় যে, যোহন কোনও প্রমাণ ছাড়াই জুদাসকে চোর বলে সাব্যস্ত করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে যে, জুদাসের চোর হওয়ার স্বপক্ষে যোহনের কাছে কি প্রমাণ ছিল? এ প্রশ্ন, কারণ যোহনেরই বিবরণ: ১পাসওভারের ছয়দিন আগে যিশু লাসারের বাড়ি বেথানিয়াতে যান যে লাসারকে যিশু মৃত্যু থেকে জীবন দিয়েছিলেন। ২তারা যখন দুপুরের খাবার তৈরি করছিলেন তখন মার্থা তাদেরকে খাবার পরিবেশনায় সাহায্য করছিলেন। যিশুর সঙ্গে যারা টেবিলে বসা ছিল লাসারও তাদের একজন ছিলেন। ৩তখন মরিয়ম বিশুদ্ধ সুগন্ধিবৃক্ষ থেকে বানানো এক শিশি খুবই দামি সুগন্ধি নিয়ে যিশুর পায়ে ঢেলে দিয়ে তা আবার নিজের মাথার চুল দিয়ে মুছে দিলেন। সারা ঘর মিষ্টি গন্ধে ভরে গেলো, ৪যিশুর শিষ্যদের একজন, জুদাস ইস্কারিয়োৎ-সেই একজন যে তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে যাচ্ছিল-বললো, ৫‘এই সুগন্ধি কেন তিনশ’ রৌপ্যমুদ্রায় বিক্রি করে সেই টাকা গরিবদের দেয়া হলো না?’ ৬সে এ কথা বলেছিল এ কারণে নয় যে, সে দরিদ্রদের প্রতি দয়ালু, সে এ কথা বলেছিল, কারণ সে একটা চোর ছিল। তার কাছে টাকার তহবিল থাকতো, সে সেখান থেকে নিজের কাজে লাগাতো (যোহন ১২:১-৬)।

উপর্যুক্ত পঙ্ক্তিগুলোতে জুদাসের চোর হওয়ার কোনও প্রমাণ মিলে? বরং জুদাসের প্রেক্ষাপট বলে দিচ্ছে যে, তিনি যে যোহন দ্য ব্যাপ্টিস্টের শিষ্য, ব্যাপ্টিস্ট বলতেন, কারও দুটি জামা থাকলে সে যেন যার নাই, তাকে একটি বিলিয়ে দেয়। বপ্তিস্মদাতার জীবনযাপনও ছিল সহজ-সরল: মার্ক ও লুকের বিবরণ মতে, ইয়াহিয়া উটের লোমের তৈরি পোশাক পরতেন, তার কোমর ঘিরে থাকতো একটি চামড়ার বাঁধনি এবং তিনি কিটপতঙ্গ ও বনমধু খেতেন। প্রশ্ন হচ্ছে যে, জুদাসের মনে যদি শিক্ষক নবির সারল্য না থাকতো তাহলে তিনি কেন তার সঙ্গ নেবেন? বা জুদাস যদি ব্যাপ্টিস্টের সামাজিক ন্যায়পন্থি হওয়ার বিবেচনাবোধ থেকে তার শিষ্য হয়ে থাকেন তাহলে সুগন্ধি ব্যবহারের বিপক্ষে তার অবস্থান কি তার চোর হওয়ার সাক্ষ্য দেয়?
প্রশ্ন যে, যোহন কি আগে থেকেই জুদাসের ওপর বিরূপ হয়ে ছিলেন, যা হঠাৎ করেই সুগন্ধি ঘটনায় বিস্ফোরিত হয়? এবং জুদাস চুরি-করা অর্থ কোথায় রেখেছিলেন, সেই প্রশ্নও ওঠে। কারণ, এরপর, তিনি যখন আত্মহত্যা করেন তখন তার কাছে ত্রিশটি রৌপ্যমুদ্রাই পাওয়া গেলো।-‘শিষ্য যিনি যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন, বলা হলো যে তিনি একটা চোর। কিন্তু জুদাস কি বিশ্বাসঘাতকতা করলেন আর কেনই-বা তা করতে যাবেন? তিনি কি আশা করছিলেন যে গ্রেপ্তার যিশুর হাতকে শক্তিশালি করবে এবং তাকে দিয়ে বিপ্লবের ঘোষণা দেবে? জুদাস দক্ষিণ এহুদার কিরিয়ৎ থেকে এসেছিলেন, যেখানে বেশিরভাগ শিষ্য ছিলেন গালিলিয়, এবং সেখানে রেষারেষি এবং ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। জুদাস একটি রহস্য হয়ে আছেন। তার আত্মহত্যার দু’ধরনের কাহিনি রয়েছে।’

পর্ব-দুই: ইতিহাসপাঠ ও
যিশুর সঙ্গি-চরিত্র

সম্রাট টাইবেরিয়াস
যিশু যখন জন্ম নিয়েছিলেন তখন রোমসম্রাট ছিলেন অগাস্টাস কাইজার, তবে তার কথিত ক্রুশবিদ্ধকালে সম্রাট তখন টাইবেরিয়াস (শা. ১৪-৩৭)-পন্টিয়াস পিলাতকে জবাব দিতে গিয়ে প্রধান ইমামেরা যিশুর বদলে তাকেই ইহুদিদের বাদশাহ বলে দাবি করেছিলেন (যোহন ১৯:১৫)।

পন্টিয়াস পিলাত
এহুদার রোমান গভর্নর
যিশুর ঐতিহাসিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকলেও পন্টিয়াস পিলাত একটি ঐতিহাসিক চরিত্র এবং ফিলিস্তিনের রাজকিয় এহুদা/জুদিয়া প্রদেশে নিয়োজিত রোমান সামরিক গভর্নর বা প্রকিওরেটর (২৬-৩৬) ছিলেন। তবে, মূলত, যিশুর কারণেই বিখ্যাত হয়ে আছেন। পিলাত প্রকিওরেটর হিসেবে অ-রোমান নাগরিকদের ওপর সর্বোচ্চ বিচারিক কর্তৃত্ব রাখতেন। নতুন নিয়মের বিবরণ মতে, তিনি ইহুদিদের দাবির মুখে যিশুকে ক্রুশবিদ্ধের আদেশ দিয়েছিলেন। অবশ্য এ ব্যাপারে পিলাত কতটুকু দায়ি, তা নিয়ে ঐতিহাসিকরা একমত হতে পারেননি।

পিলাত ও ইহুদি
পিলাত খ্রিস্টানদের কাছে যেখানে একজন শহিদ, সেখানে তিনি ইহুদি ইতিহাসে একজন জাতিয় শত্র“। ইহুদিরা তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল, কারণ, তিনি তাদের ধর্মিয় সংবেদনশিলতাকে গুরুত্ব দিতেন না বলে তারা মনে করতো। ইহুদি ঐতিহাসিক ফ্লাবিয়াস যোশেফাস তাকে একজন ‘রূঢ় প্রশাসক হিসেবে চিত্রিত করেছেন। যোশেফাসের মতে, পিলাত ইহুদিদের ধর্মনিষ্ঠা এবং জাতিয় অহমিকা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি সমগ্র জেরুশালেমে সম্রাটের পূজ্যপ্রতিকৃতি টাঙিয়ে দেন এবং প্যাগান ধর্মিয় প্রতিকসংবলিত মুদ্রা চালু করেন। ফিলোর বিবরণ মতে, পিলাতের প্রশাসন দুর্নীতি, সহিংসতা, দস্যুতা, নাগরিক হেনস্তা এবং মানুষকে বিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ডদানের কারণে বিশিষ্ট হয়ে আছে। তার আচরণ প্রায়-বিদ্রোহের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। পূর্বসুরি ভ্যালেরিয়াস গ্রাটাস যেখানে ইহুদিদের ধর্মানুভূতির প্রতি সম্মান জানাতেন, তিনি জেরুশালেমে ঢোকার পর সেখানে থেকে কুশপুত্তলি (বভভরমরবং) এবং প্রতিকৃতি (রসধমবং) সরিয়ে ফেলেন, কিন্তু পিলাত সেগুলো রাতের আঁধারে পুনর্বহালের অনুমতি দেন। সেই খবর পিলাতের সরকারি আবাস কায়সারিয়ায় পৌঁছুলে ইহুদিরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায় এবং রোমান কুশপুত্তলি-প্রতিকৃতি সরিয়ে নেয়ার দাবি তোলে। এই পরিস্থিতিতে পিলাত ইহুদিদের সঙ্গে পাঁচদিন ধরে আপস-আলোচনা চালিয়ে যান, তবে তা ফলোৎপাদক না-হওয়ায় ইহুদিদের ঘেরাও করতে সৈন্যদের নির্দেশ দেন। সৈন্যরা তখন ইহুদিদেরকে দুটি বিকল্পের যেকোনও একটি বেছে নিতে বলে যে, তারা হয় বিক্ষোভ দেখানো থেকে বিরত হবে, নয়তো সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। তাসত্তে¡ও ইহুদিরা প্রতিবাদ চালিয়ে গেলে সৈন্যরা পিছু হটে। যোশেফাসের বিবরণ মতে, পিলাত ‘তাদের দৃঢ়তা দেখে গভীরভাবে আহত’ হন, যা ছিল তার নিজস্ব চরিত্রবৈশিষ্ট্যেরই পরিচায়ক।

এছাড়া পিলাত জেরুশালেমে পানি সরবরাহের জন্য সুলাইমানের ডোবা থেকে শহর পর্যন্ত একটি খাল খননের জন্য বায়তুল মোকাদ্দসের পবিত্র তহবিলকে কাজে লাগান। এ কারণেও ইহুদিরা উত্তেজিত হয় এবং শহরে দাঙ্গা শুরু করে। পিলাত তা দমন করতে একদল সৈন্য নিয়োগ করেন যারা ছদ্মবেশে জনতার সঙ্গে মিশে গিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটায়, এবং ছদ্মবেশধারি সৈন্যরা যে কেবল দাঙ্গাকারি ইহুদিদের হত্যা করে তা নয়, তারা রাস্তার সাধারণ লোকজন বা দর্শকদের ওপরও ছোরা হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

পিলাত হেরোদের প্রাসাদে সম্রাট টাইবেরিয়াসকে উৎসর্গিকৃত একটি স্বর্ণপ্রলেপযুক্ত ঢাল ঝুলিয়ে দেন এবং ইহুদিরা তারও প্রতিবাদ জানায়। এরপর স্বয়ং টাইবেরিয়াস সেটি নামিয়ে ফেলার জন্য বিশেষ নির্দেশ দেন। পিলাতের সর্বশেষ নিষ্ঠুরতা ছিল সামেরিয়দের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো, যা তার চূড়ান্ত পতন ডেকে আনে বলে বলা হয়। ফিলোর বিবরণ মতে, একদল সামেরি গরিশিম পাহাড়ে একটি গর্ত খোঁড়ার জন্য জড়ো হয়। কারণ কোনও একজন মিথ্যাবাদি তাদেরকে এ কথা বোঝাতে পেরেছিল যে, সেখানেই মুসার কবর রয়েছে এবং কবরের ভিতর কয়েকটি পবিত্র পাত্র রয়েছে। পিলাত জড়ো হওয়া সামেরিদের হত্যা করলে পর অন্য সামেরিরা তার বিরুদ্ধে সিরিয়ার লিগেট ভিটেলিয়াসের কাছে অভিযোগ করে। তারপর ভিটেলাস তাকে রোমে ফিরে গিয়ে সেনেটের মুখোমুখি হতে বলেন। কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করে বলেন যে, রোমে পিলাতের পৃষ্ঠপোষক সেজানাসের পতনের (৩১) পর ইহুদিরা তার বিরুদ্ধে সমালোচনার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, কারণ পিলাত টাইবেরিয়াসের প্রিয়পাত্র সেজানাসের হস্তক্ষেপের কারণেই এহুদার প্রকিওরেট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। সেজানাস-পরবর্তি রোমান রাজদরবারে কোনও সহায় না-থাকায়, পিলাত, সম্ভবত, ইহুদিদের সন্তুষ্ট করার মানসে যিশুর আইনি মৃত্যুদণ্ড বাস্তবায়নকে পুঁজি বানিয়েছিলেন।

যোশেফাসের মতে ‘ইহুদি শরিয়তকে বিলুপ্ত করে দেয়ার উদ্দেশ্যে’ এবং ইহুদিরা তখন যে সুবিধাভোগ করতো সেসব কমিয়ে আনার ইচ্ছা নিয়ে পিলাত তার সৈন্যদলকে জেরুশালেমে শিবির গাড়তে আদেশ দিয়েছিলেন। সম্রাট তখন রোমান বিশ্বে দেবতা হিসেবে পূজিত হতেন এবং রোমান সৈন্যরা তাদের ব্যাজে সম্রাটের প্রতিকৃতি সংযুক্ত করে পবিত্র শহরে ঘুরে বেড়াতো।

মহাসভা ও গভর্নর সম্পর্ক
ওই সময়কালে ইহুদিরা রোমান প্রজা হলেও তাদের ধর্মিয় ও সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে মহাসভা সিদ্ধান্ত নিতো এবং রোমান প্রশাসনকে তা কার্যকর করতে হতো, যেভাবে যিশুর ক্ষেত্রে ঘটেছিল। মহাসভা ইহুদিদের সর্বোচ্চ পরিষদ ও আদালতের এখতিয়ার রাখতো, তা রোমান রাষ্ট্রের অনুমোদনের ভিতর থেকেই। যোহনের (১৮:৩১) বিবরণ মোতাবেক: মহাসভায় যিশুকে কুফরির অভিযোগে দোষি সাব্যস্ত করার পর দণ্ড বাস্তবায়নের জন্য পিলাতের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু পিলাত যিশুর কোনও দোষ না-পাওয়ায় তাকে শাস্তি দিতে অনিহা দেখান, তখন জবাবে প্রধান ইমাম বলেছিলেন: ‘কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ক্ষমতা আমরা রাখি না।’ এ থেকে মহাসভা-প্রকিওরেটর সম্পর্কটি বোঝা যায়।
নতুন নিয়ম ও পিলাত

চারটি খ্রিস্টান সুসমাচারের (মথি ২৭, মার্ক ১৫, লুক ২৩ এবং যোহন ১৮) একটি অভিন্ন বিবরণ যে, পিলাত যিশুর কোনও দোষ খুঁজে পাননি এবং এ কারণে তাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন। মথির বিবরণ মতে, পিলাতের স্ত্রিও যিশুর ক্রুশবিদ্ধতার বিপক্ষে ছিলেন। লুক একটি অতিরিক্ত বিবরণ সংযোজিত করে যে, যিশুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পিলাত তাকে হেরোদের কাছে পাঠান, হেরোদ তখন জেরুশালেমে ছিলেন। কিন্তু হেরোদ তাকে আবার পিলাতের কাছে পাঠিয়ে দেন। যোহনের সুসমাচারে দৃশ্য হলো যে, পিলাত যিশুর সঙ্গে একান্তে কথা বলছেন, বেশ দির্ঘ সময় নিয়ে এবং পিলাত যিশুকে ইহুদিদের বাদশাহ বলে স্বিকার করে নিয়েছেন। যোহন ১৯:১৯

দুর্বল ও সিদ্ধান্তহীন চরিত্র
সুসমাচারগুলোর বিবরণ থেকে কয়েকটি বিষয় বেরিয়ে আসে যে, প্রথমত, পিলাত দুর্বল প্রকৃতির এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগ থাকতেন। এ কারণে দেখা যায়, যোহন যেভাবে বিবরণ দিয়েছেন, তিনি একবার যিশুর সঙ্গে কথা বলছেন তো বাইরে বেরিয়ে উপস্থিত ইহুদি জনতা, প্রধান ইমাম ও ধর্মনেতাদের মনোভাব যাচাই করে দেখছেন। এবং বারবারই মত পাল্টাচ্ছেন এবং ‘তিনি (পিলাত) ভালোমতোই জানতে যে ইহুদি নেতারা যিশুকে তার হাতে তুলে দিয়েছে, কারণ তারা তাকে ঈর্ষা করতো (মথি ২৭:১৮)। দ্বিতীয়ত, পিলাতকে সহজেই ব্ল্যাকমেইলিং করা যেতো: ‘যদি আপনি তাকে ছেড়ে দেন তার মানে হবে আপনি সম্রাটের বন্ধু না (যোহন ১৯:১২)। এবং তৃতীয়ত, বিদ্রোহের ভয় থেকে ‘পিলাত জনতাকে সন্তুষ্ট করতে চাইলেন, সেকারণে তিনি বারাব্বাসকে ছেড়ে দিলেন (মথি ১৫:১৫)। তবে যোহনের বিবরণকে (১৯:১৩) প্রামাণ্য বলে ধরে নিলে, যেখানে পিলাতকে রায়দানের আগে তার বিচারকের আসনে বসতে দেখা যায়, এটিকে তার ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রবৈশিষ্ট্য বলেও বিবেচনা করা যায়।

পিলাতের পরিণতি
পিলাতের মৃত্যু কিভাবে ঘটেছিল, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক বিবরণ মিলে না এবং তা রহস্যময়তায় ঢেকে আছ। পিলাতকে রোমে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছিল ৩৬ সালে এবং রোমান সেনেট তার বিরুদ্ধে যথাযথ বিচার ছাড়াই মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার অভিযোগ গঠন করে। তাছাড়া তিনি সামারিতান এবং ইহুদি এই উভয় জাতিগোষ্ঠিকে দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়তে প্ররোচিত করার দায়েও অভিযুক্ত হন। খ্রিস্টান ঐতিহ্য মতে, পিলাত এবং তার স্ত্রি দু’জনের গোপনে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, রোমান সেনেট পিলাতকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সেজন্য পিলাত কপ্টিক চার্চের কাছে একজন শহিদ হিসাবে গণ্য হন এবং বছরের ২৫শে জুন তার সম্মানে ভোজ দিবস উদযাপিত হয়। চতুর্থ শতাব্দির ধর্মতাত্তি¡ক এবং চার্চ ঐতিহাসিক ইউসেবিয়াস জানান যে, পিলাতকে গলের ভিয়েনায় নির্বাসিত করা হয়েছিল। সেখানে দুর্ভাগ্য তাকে পিছু ছাড়ছিল না বলে তিনি আত্মহত্যা করেন। ষষ্ঠ শতাব্দির সিরিয় বিবরণ লেখক মালালাসের বিবরণ অনুসারে, নিরো তার শিরচ্ছেদ করেছিলেন। পরবর্তি একটি কিংবদন্তি মতে, পিলাত ক্যালিগুলার নির্দেশেই আত্মহত্যা করেন; তার মৃত্যুদেহ টাইবার নদিতে ফেলে দেয়া হয়, সে কারণে একটি বিপর্যয়কর ঝড় এবং বন্যা দেখা দেয়, পরে সেই ঝড় ও প্লাবন ভিয়েনার রোন নদিতেও ঘটে; এবং সবশেষে সেটি আল্পসে একটি গভীর ডোবা সৃষ্টি করে। সেই অনুসারে পিলাতের আত্মহত্যা এবং টাইবার-রোনের ঝড়-বিপর্যয় ৩৯ সালের ঘটনা।

টিকাসমূহ
১. সূত্র: The Gospel According to Judas/By Benjamin Iscariot/

  1. Jesus replied, “I chose the twelve of you, didn’t I? Yet one of you is a devil!’’ He was talking about Judas, the son of Simon Iscariot. For Judas, even though he was one of the twelve disciples, was going to betray him. John 6:70-71/Source: Good News New Testament 2 কারণ জবুর কিতাবে এ কথা লিখিত আছে যে, ‘তার ঘর শূন্য পড়ে থাকুক; সেখানে যেন কেউ বাস না করে।’ এ কথাও লিখিত আছে যে, ‘দাওয়াতের কাজে তার স্থলে যেন অন্য কাউকে নেয়া হয়।’ প্রেরিত ১:২০

৩. Britannica, Ency./Judas Iscariot

৪. তফসিরুল ইঞ্জিল (তার বাড়ি খালি থাকুক…), পৃ ৪১৫/বিবিএস
৫. সূত্র: Pickthall, M.M. (The Meaning of the Glorious Qur’an)\Surah III (The Family of Imran) 52-55; Surah IV (Women)157; Surah LXI (The Ranks) 14
৬. বিস্তা. দেখুন, Barnabas, The Gospel of  by Lonsdale and Laura Ragg (OXFORD at the Clarendon Press, sixth edition, 1977), p 262-73

  1.  Judas, the Gospel of/edited by Rodolphe Kasser, Marvin Meyer and Gregor Wurst (National Geographic, 2006), p 3-5
  2.  Parrinder, Geoffrey (A Concise Encyclopedia of Christianity)/Judas Iscariot
শেয়ার করুন: