004745
Total Users : 4745
Charbak magazine logo
sorolrekha logo

লেখক তালিকা

জন্ম. ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে। সম্পাদনা করছেন ‘চারবাক’ ও ‘সরলরেখা’। যুক্ত আছেন সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’র সাথে। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: মায়াহরিণ, কাব্যগ্রন্থ ২০০৮, চারবাক, বুদ্ধিজীবীর দায়ভার, সম্পাদনা ২০০৯, সংবেদ, পক্ষ—প্রতিপক্ষ অথবা শত্রু—মিত্র, প্রবন্ধ ২০১০, চারবাক, নির্বাচিত চারবাক, সম্পাদনা ২০১১, চারবাক, নাচঘর, কবিতা, ২০১২, চারবাক, ভাষা সাম্প্রদায়িকতা অথবা সাম্রাজ্যবাদি খপ্পর, প্রবন্ধ, ২০১৩, চারবাক এবং মুখোশ, কবিতা, ২০১৬, চারবাক, করোনাকালে, কবিতা, ২০২২, চারবাক।
View Posts →
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
View Posts →
প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ
View Posts →
বাংলাদেশের উত্তরউপনিবেশি ভাবচর্চার পথিকৃৎ ফয়েজ আলম একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। উপনিবেশি শাসন-শোষণ আর তার পরিণাম, রাষ্ট্র ও সমধর্মী মেল কর্তৃক ব্যক্তির উপর শোষণ-নিপীড়ন ও ক্ষমতার নানামুখি প্রকাশ আর এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন তিনি। বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের নয়াউপনিবেশি আর্থ-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর রাষ্ট্র ও স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর শোষণচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার লেখা আমাদের উদ্দীপ্ত আর সাহসী করে তোলে। রুহানিয়াত সমৃদ্ধ দার্শনিক ভাবচর্চা আর সাহিত্যিক-রাজনৈতিক তত্ত্বচর্চাকে একসাথে কবিতার দেহে ধারণ করতে সক্ষম ফয়েজ আলমের সহজিয়া কবিতা। তার কবিতায় তিনি মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তার কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার যোগীরনগুয়া গ্রামে। বাবা মরহুম শেখ আবদুস সামাদ, মা সামসুন্নাহার খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ পাশ করার পর প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য এমফিল. ডিগ্রী লাভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ব্যক্তির মৃত্যু ও খাপ-খাওয়া মানুষ (কবিতা, ১৯৯৯); প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি ( গবেষণা, ২০০৪); এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজম (অনুবাদ, ২০০৫); উত্তর-উপনিবেশি মন (প্রবন্ধ, ২০০৬); কাভারিং ইসলাম (অনুবাদ, ২০০৬), ভাষা, ক্ষমতা ও আমাদের লড়াই প্রসঙ্গে (প্রবন্ধ, ২০০৮); বুদ্ধিজীবী, তার দায় ও বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব (প্রবন্ধ, ২০১২), জলছাপে লেখা (কবিতা, ২০২১), রাইতের আগে একটা গান (কবিতা, ২০২২); ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (প্রবন্ধ, ২০২২)।
View Posts →
কবি ও গল্পকার। যুক্ত আছেন চারবাক সম্পাদনা পরিবারের সাথে।
View Posts →
কবি। জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়।
View Posts →
প্রাবন্ধিক। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। বর্তমানে প্রান্তীয় কৃষক-মধুচাষি, বেতবাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন নিয়ে কাজ করছেন।
View Posts →

সম্পূর্ণ লেখক তালিকা

টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ স্থগিত রাখুন

মুতাসিম আলি, সুব্রত কুমার দাস, রিসি দলাই, রাশিদা আখতার
আলতাফ পারভেজ, এম এম আলী, শামসুদ্দোহা শোয়েব

উত্তরপূর্ব ভারতের মণিপুর রাজ্যে ভারত সরকার পানিবিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য টিপাইমুখ ড্যাম নির্মাণ কাজ নিয়ে এগিয়ে গেলেও, খোদ মণিপুর-সহ উত্তরপূর্ব অঞ্চলে অসনত্দোষ ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের জলবিদু্যৎ নিগম যতই যুক্তি দেখিয়ে বলুক না কেন যে, টিপাইমুখ প্রকল্পটি দিয়ে জলবিদু্যৎ উৎপাদনের সঙ্গে বরাক নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণও করা যাবে, তাসত্ত্বেও উত্তরপূর্ব ভারতে বাঁধটির বিরুদ্ধে জনমত প্রবল। কারণ এই ড্যাম ২৯১৫০ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে দেবে। এর ফলে পশ্চিম মণিপুরের হমার ও জেলিয়াংগ্রং নাগা এবং উত্তর মিজোরামের কুকি-সহ বিপুল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস্তুচু্যতি ঘটবে। পানিতে ডুবে যাওয়ায় গাছবৃক্ষ-সহ প্রাণী ও পরিবেশের নিদারুণ ক্ষতি হবে এবং এ আশংকা থেকেই মণিপুর, মিজোরাম ও কাছাড়ের সাধারণ মানুষ, মানবাধিকার ও পরিবেশ কর্মী ও বিজ্ঞানীরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তারা বলছেন যে, টিপাইমুখ ড্যাম প্রকল্পে ওয়ার্ল্ড কমিশন অন ড্যামস্-এর নীতিমালা মানা হচ্ছে না, যে নীতিমালায় ড্যাম নির্মাণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাধীন মতামত নেয়ার কথা বলা আছে। তাছাড়া এনএইচপিসি মধ্যপ্রদেশের ইন্দিরাসাগর ও ওমকারেশ্বর, হিমাচল প্রদেশের চামেরা ১ ও ২, মণিপুরের লোকতাক, ঝাড়খন্ডের কোয়েল কারো, অরুণাচলের নিম্ন সুবনসিঁড়ি ইত্যাদি প্রকল্পে বাস্তুচ্যুত মানুষের যথাযথ পুনর্বাসন করেনি; বরং পরিবেশ ধবংস ও দুর্ভোগ বাড়িয়েছে।

ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন টিপাইমুখ অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যদি বাঁধ নির্মাণের পরে সেখানে ভূমিকম্প ঘটে তাহলে ভাটি অঞ্চলের আসাম ও বাংলাদেশে দুর্যোগ ঘটে যাবে। তাছাড়া ড্যাম নির্মাণের সম্ভাব্য সামাজিক ক্ষতিও হিসাবে আনা হয়নি। গত ৩  ডিসেম্বর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মণিপুরের জনসভায় টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিবেশ সংক্রানত্দ ছাড়পত্র দেয়ার কথা বললেও বাঁধবিরোধী আন্দোলনের নেতারা তার এই ঘোষণাকে ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, পরিবেশ সংক্রানত্দ ছাড়পত্র দেওয়ার আগে স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদ নথিভুক্ত করা হয়নি, নিরাপত্তা বাহিনীকে দিয়ে মানুষের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তাছাড়া পরিবেশের ওপর ওই বাঁধের কি প্রভাব পড়বে তা বিশ্লেষণ করার জন্য আগে থেকেই প্রাপ্ত কিছু তথ্যের ওপরে নির্ভর করা হয়েছে_যার অনেকাংশই ভুল তথ্য।

টিপাইমুখ নিয়ে আমাদের দেশেও উদ্বেগ কম নয়। আলোচনা-সমালোচনা আরও গতি পেয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সামপ্রতিক একটি নিবন্ধকে (প্রথম আলো, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১১) কেন্দ্র করে। ড. রিজভী তার নিবন্ধে বাংলাদেশের লাভই দেখেছেন এবং বলেছেন ক্ষতি যা হবে তা ওপারে তথা উত্তরপূর্ব ভারতে। তার ভাষায়, ”প্রতীয়মান হচ্ছে যে এর কারণে পরিবেশগত প্রভাব যেমন_বন্যা ভূমির জলমগ্নতা মানুষের বসতি স্থানানত্দর, জীবন-জীবিকার পরিবর্তন এবং বন্য প্রাণীকুলের আবাসস্থলের ধবংস ইত্যাদি ঘটলে তা ঘটবে প্রধানত ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে। এক্ষেত্রে দূরত্বের কারণে বাংলাদেশের আক্রানত্দ হওয়ার আশংকা তুলনামূলকভাবে অনেক কম।” কিন্তু তার এ ধরনের বক্তব্যের সঙ্গে যারা একমত হতে পারছেন না তারা বলছেন, ‘প্রসত্দাবিত প্রকল্প বাংলাদেশ সীমানত্দ থেকে ১৪০ মাইল’ দূরে হলেও পরিবেশ বিপর্যয় কোনও রাষ্ট্রীয় মানচিত্রের সীমানা মানে না। এ কারণেই পরিবেশ সংরক্ষণে আজ বিশ্বব্যাপী সমন্বিত উদ্যোগ। তাছাড়া পড়শীর ঘরে আগুন লাগলে নিরাপদ থাকা যায় না।

বাংলাদেশের দুটি বড় নদীর সরাসরি উৎস হচ্ছে বরাক নদ, যার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে টিপাইমুখ ড্যাম। বরাক নদ সিলেট সীমানত্দের অমলশিদে এসে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি ধারায় বিভক্ত হযে একটি নাম নিয়েছে সুরমা, অপরটি কুশিয়ারা। সুরমা ও কুশিয়ারা বৃহত্তর সিলেটের প্রাণ, এ দুটি নদী নানা শাখা নদী দিয়েও সিলেটের হাওড়গুলোতে পানির যোগান দিয়ে যাচ্ছে। এসব বড় হাওড় আবার অনেক ছোট হাওড় ও বিল-বাওড়ে পানি যুগিয়ে থাকে এবং ছোট-বড় এই হাওড়-বিলই জীববৈচিত্র্যের উৎস ও শস্যভাণ্ডার, যেমন হাকালুকি, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর ইত্যাদি। তাছাড়া সুরমা-কুশিয়ারা ভৈরবে এসে মেঘনা নামে বিশাল জলধারা হয়ে পানির যোগান দিচ্ছে কিশোরগঞ্জ-সহ বিসত্দীর্ণ এলাকায়। মেঘনার সঙ্গে সম্পর্কিত কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওর-বাওড়, নদীনালা। বলতে হয়, বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চল তথা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এই ৭টি জেলা তার হাওরগুলোর জন্যই অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। হাওর এই অঞ্চলকে জীবিকা ও প্রাণবৈচিত্র্যের সেেঙ্গ দিয়েছে সংস্কৃতি ও সাহিত্য। রাধারমণ, শাহ আবদুল করিম, জালাল-সহ অনেক নামকরা গায়ক-শিল্পী তৈরি হয়েছে হাওরের জনপদে। তাই টিপাাইমুখ ড্যাম হয়ে ওঠতে পারে একটি বিশাল অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য সম্পদ. নৌচলাচল ও জীববৈচিত্র্য হত্যার মতো একটি সাংস্কৃতিক হত্যাকাণ্ডেরও নামানত্দর।

আমরা উদ্বিগ্ন এ কারণেও যে, টিপাইমুখ ড্যাম কাজ শুরু করার পর এর একশ কিলোমিটার নিম্নে তৈরি করা হবে ফুলেরতল ব্যারেজ। ড্যাম নির্মাণ সম্পন্নের পর বরাকে ৩১ শতাংশ পানি আটকে রাখা হবে বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য এবং টিপাইমুখের ১০০ মাইল ভাটিতে ফুলেরতল ব্যারেজ নির্মিত হওয়ার পর বরাক প্রবাহের ১০০ ভাগ পানির নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে ভারত সরকারের হাতে। ফুলেরতলে যে ব্যারেজ নির্মিত হবে সেই কথা দিবালোকের মতোই সত্য। কারণ টিপাইমুখ ড্যামে বিনিয়োগকৃত হাজার হাজার কোটি রুপি তুলতে গেলে ফুলেরতলে ব্যারেজ বানিয়ে তার সেচ সুবিধা থেকেই তা গুণতে হবে। ফল হবে ফারাক্কার মতো বিপর্যয়কর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরাকের বাংলাদেশ অংশ তথা সুরমা-কুশিয়ারার স্রোতের গতি ও বালু বহনের ক্ষমতা পদ্মার চাইতেও বেশি। টিপাইমুখ ড্যাম হলে নদীগর্ভে বালি কিংবা পলি সঞ্চালনের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে করে বছর কয়েকের মধ্যেই বালুসত্দর জমে সিলেট অঞ্চলের হাওড়-বাওড়, নদীনালা ভরাট হয়ে যাবে। এতে করে ধবংস হবে কৃষি। সুরমা-কুশিয়ারা ভরাট হলে টান পড়বে মেঘনার অসত্দিত্ব নিয়েও।

আমরা জানি, শুকনো মওসুমে নদীকেন্দ্রিক জনপদ এবং হাওড়কেন্দ্রিক জনপদের অবস্থা ভিন্ন থাকে। রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের নদীগুলোতে শুকনো মওসুমে পানি ছাড়লে সেটিতে লাভ এবং তা প্রয়োজন। কিন্তু হাওড় অঞ্চলের নদীগুলোতে তা হবে আত্মঘাতী। কারণ শুকনো মওসুম তথা হেমনত্দ, শীত ও বসনত্দের মাঝামাঝি পর্যনত্দ সময়ে টিপাইমুখ ড্যাম থেকে জল ছাড়া হবে আর ওই সময়ে হাওড়গুলো জেগে ওঠে ও ফসল ফলে। এসময় প্রথমে হাওড়ের জেগে ওঠা উঁচু ভূমিতে বীজ বপন করা হয়, সেগুলো দুই তিনমাস পরে চারা তথা জালা হয় এবং জালা হওয়ার পরে নিম্নভূমি ততদিনে জেগে ওঠলে সেখানে রোপণ করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার সময় হাওড়গুলোর পানি নদীর মাধ্যমে নিষ্কাষিত হয়। কিন্তু টিপাইমুখ থেকে ওই সময়ে যখন পানি ছাড়া হবে তখন হাওড়গুলো জেগে ওঠতে পারবে না। ফলে বোরো ধান ফলানোও অসম্ভব হয়ে পড়বে। তথা ওই দিনগুলোতে টিপাইমুখ থেকে পানি ছাড়ার ফলে নদীর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদী আর হাওড়ের পানি নিষ্কাশন করতে পারবে না, উল্টো এমনও হতে পারে যে, নদীর পানি হাওড়ে গিয়ে ঢুকবে। তার প্রতিক্রিয়া কী হবে, আশা করি, তা আর বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।

টিপাইমুখ ড্যাম দিয়ে আগাম বন্যানিরোধের কথা আমরা শুনছি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদু্যৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে গিয়ে ড্যাম সবসময় পূর্ণ করে রাখতে হয়। ড্যামের গঠন অনুযায়ী অতি বৃষ্টিতে পানি কেবল স্পিলওয়ে দিয়ে উপচেপড়ে ভাটিতে যায়। যেমন হচ্ছে কাপ্তাই জলবিদু্যৎ কেন্দ্রে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে বর্ষার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বরাক অববাহিকায় অতিবৃষ্টিপাত ঘটলে সেক্ষেত্রে বিদু্যৎ উৎপাদন হবে ঠিকই, তবে অতিরিক্ত পানি আটকে না রেখে বিকল্প পথে তা নিকাশ করতে হবে। এ কারণে নিম্নাঞ্চলে বন্যারোধ করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসাবে ভারতের ভকরা বাঁধকে দেখানো হয়। ১৯৭৮ সালে বাঁধটি থেকে জরুরিভিত্তিতে পানি ছেড়ে দিলে পাঞ্জাবের প্রায় ৬৫ হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। তাছাড়া বন্যার তোড়ে বাঁধটির ভেঙ্গে পড়ার আশংকাও দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞরা এ কথাও বলছেন যে, টিপাইমুখ বিশ্বের একটি বৃহৎ ভূমিকম্প এলাকা। ভূমিকম্প যদি বাঁধ ভেঙ্গে দেয় তাহলে এই বিলিয়ন বিলিয়ন ঘন মিটার পানি শুধু মণিপুর বা কাছাড়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা এতটুকু জানতে পেরেছি যে, বছরের অন্যান্য সময়ে শানত্দ থাকলেও বরাক ও এর শাখা নদীগুলো মৌসুমী বৃষ্টিপাতের সময় স্রোতস্বী হয়ে ওঠে। ভূপ্রকৃতিগত কারণেই বাংলাদেশের সিলেট ও পাশর্্ববর্তী মণিপুর অঞ্চলে বর্ষাকালজুড়ে অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। সাধারণভাবে এই বৃষ্টিপাতের ৬০-৭০ ভাগ হয় জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে। বিপরীতে বছরজুড়ে কার্যকর রাখতে জলবিদু্যৎকেন্দ্রকে মে-জুনের ভেতরে পূর্ণ পানি ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বাঁধের ভাটি অঞ্চল তথা মণিপুর ও বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেবে।

টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে শুষ্ক মওসুমে পানিপ্রবাহ বাড়ানো প্রসঙ্গটি সমালোচিত হচ্ছে এই বলে যে, ফ্যাপ-৬ রিপোর্টে নাকি আছে, ড্যাম নির্মিত হলে অমলশিদে পানির সর্বোচ্চ প্রবাহ শতকরা ১০০ ভাগ থেকে ২০০ ভাগ বাড়বে এবং পানির পরিমাণ বাড়বে শতকরা ৬০ ভাগ। অন্যদিকে টিপাইমুখ প্রকল্পের ইআইএ রিপোর্টেও বলা হয়েছে, বাঁধের কারণে শুষ্ক মওসুমে পানি প্রবাহ ১১০ ভাগ বেড়ে যাবে। ফ্যাপ-৬ এর রিপোর্টমতে, এই বর্ধিত প্রবাহ নৌ চলাচল, সেচ ও মৎস্য চাষে বৃদ্ধি ঘটবে। এখানেও আমাদেরকে নদী অঞ্চল ও হাওড় অঞ্চলের ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কথা বলতে হচ্ছে। বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলে ওই সময় পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে ফসল ফলবে কি করে? হাওড় শুকিয়ে গেলে মানুষ যেমন বোরো ধান রোপণ করে, তেমনি হাওড় শুকনো থাকতে থাকতেই বোরো ফসল ঘরে তোলে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে ঘরে ঘরে মাতম শুরু হয়।

আমরা যতটুকু বুঝতে পারছি, টিপাইমুখ ড্যাম নিয়ে ভারত সরকার একটি পক্ষ, কারণ ভারত সরকার এটিতে লাভই দেখতে পাচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ সরকারও ভারত সরকারের ওপর আস্থাশীল যে, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় ভারত সরকার এমন কিছু করবে না এবং টিপাইমুখ ড্যামে বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হবে না। তাছাড়া বাংলাদেশের সরকার পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে টিপাইমুখে উৎপাদিত বিদু্যৎ থেকে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। এদিকে এই ড্যাম নিয়ে এখনও পর্যনত্দ নিরপেক্ষ কোনও স্টাডি হয়নি। তাছাড়া ফারাক্কা অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তাই আমাদের বক্তব্য হলো, ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের কৃষি, অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কি ক্ষতি ঘটেছে এবং বাংলাদেশে পরিবেশ উদ্বাস্তু কত সংখ্যায় দাঁড়িয়েছে আগে তা নিরূপণ ও প্রশমিত করুন। পরে আসবে টিপাইমুখ প্রসঙ্গ। আর যতদিন না ফারাক্কার ক্ষতি নিরূপিত এবং প্রশমিত না হচ্ছে, ততদিন পর্যনত্দ টিপাইমুখ ড্যামের কাজ স্থগিত রাখা হোক।

শেয়ার করুন: