জন্মান্ধ ঘোড়া
কেমন ছিল আমাদের দুঃখ ভরা রাত কিংবা দিন
দূরে কোথাও মায়ের হৃদপিন্ডে- জন্মান্ধ ঘোড়া
ছড়িয়ে দিল- ধর্মের দ্রোহী বিষ, ব্লু-ফিল্ম, নাগরিক কলহ
রাষ্ট্রের ঘাপটি মারা রাজনীতি- আড়ালে গণিকা পোষে।
ঘোড়া প্রতিনিয়ত দাপিয়ে ফেলে- উন্নয়ন স্বদেশে-
এ প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে।
জনগণ: দ্রব্যমূল্যের লাগাম ধরে খেয়ে যায় বিস্বাদী মুখে…
গলি পথে অচেনা পথিক
খুঁজে ফেরে হারানো দীর্ঘশ্বাস…
শরৎ
তোমার অপেক্ষায় আছি- অনেকদিন হল
শ্মশানচারী যে সব মানুষেরা- আমাদের পাগল ভেবে ছিল
তারা- দূরে হেঁটে চলে রাজহাঁস কিংবা ঠোঁট বাকানো-
বকছানাদের প্রতিদিন ডুবে যাওয়া দেখতে দেখতে…
জলমগ্ন যেসব হাওয়া উড়ে যায়- মাথার উপর দিয়ে-
তাদের বাড়িতেও নিঃসঙ্গতায় মরে কালাবুড়ির মন
এখন কালাবুড়ির মাথায় সাদা চুল- সময়টা শরৎ
মায়ের আসা আর যাওয়ার মাঝে
পাড়া বেড়ায় বর্ষা দেবী- মানে মাসীর ছোট বোন
হিজল বৃক্ষে হেলান দিয়ে নামে অন্ধকার- তবু
সময়টা ব্রাশ করে মুখ ধোয়ার- এতদিনে মন্দিরে হাঁটুমুড়ে বসেছি-
ভাবনার ধারাপাতে ভাঙা ভাঙা স্মৃতি-
গ্রামে নরম বাতাসে দোল খায় কাশফুল
জন্মের সাথে কাশফুলের নরম ছোয়ায় হেসে ওঠে কলাবউ…
দাঁড়িয়ে আছি নয়টি মাস
পরিত্যক্ত বাড়িটির উঠানে দাঁড়িয়ে আছে- অদ্ভুত নিমগাছ। পাতায় মুড়িয়ে ছোট লাল ফিঙে- কোন কিছু হারানোর ভয় নেয়- বাসা ছাড়া। আজকাল সেটাও বাতাসে দোলে- বৃষ্টি বন্দনায় আমি সকাল দেখি- সামনে পুরোহিত বাইরে মোয়াজ্জিন…জন্মের সময় হাড়-হাভাতে বাবা চলে গেছে নিজের ভাগ্যকে সঙ্গে নিয়ে…অনেক দূরে বিশম্ব বাবুর বাড়িতে অষ্টগানের ছন্দে নাচে নাজিরের ছোট মেয়ে করিমন। আমাদের অতিক্রান্ত সময় এখন থমকে গেছে- উবে গেছে সকালের রোদ- তবু নির্মমতার ঘুম আমাদের চোখের পাতায়…
একদিন এই বাড়ির আঙিনায় তুমি ছড়িয়ে ছিলে কত আবেগ- বুকের মধ্যে তুফান তুলে পাখির খাতায় লেখালে নাম- অথচ অসভ্য উজবুকেরা তোমায় বানালো এ্যাদ্দিনে যুদ্ধের পরাস্ত ঘোড়া। কান্না তোমার জীবনের সাথী আর নদীকে বানালে চোখের জল- ধান ক্ষেত ধরে বাবাদের বাড়ির কাছে লুকালে দ্বিধা- তবু আজ দাঁড়িয়ে আছি নয়টি মাস গন্ধ মেখে শরীরে…
চন্দ্রবেড়ের মাঠ
নিঃশ্বাস হাতের তালুতে রেখে সমুদ্দুরে যাব বলে- নিঃসঙ্গতার কথা লেখি
স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে বুকের ভেতরে বারুদ জ্বলে ওঠে- মুগ্ধতা
এই গভীর রাত- দরজার পাশে ঘাপটি মেরে ঘুমায়
নদীর উৎকণ্ঠিত চোখ- আগুনে পুড়িয়ে লেপ
বন্ধুর নিউজে ভাসে- স্বামীবটির বাজার ভাল
মা চন্দ্রবেড়ের মাঠ থেকে তুলে আনেন- উৎসবে পর্ণশালার বই।
নিরব অন্ধকারে- বেশ্যা অথবা তুমি
চোখে তুলে দিলে মাটির বিরাট আঁধার।
রক্তচন্দন
রক্তের সাথে মিশে আছে তোমার হতাশা আর কামের ইচ্ছা। জানি এই বিদ্যুৎপ্রবাহিতা ইস্পাতের মত তোমাকে আকড়ে ধরে আছে। তুষারের কণায় জমে আছে সকাল, গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে বন্ধুগণ নিজেদের মিলিয়ে দিল স্ব স্ব স্ত্রীদের বুকে… কত পিরামিডের গল্প লেখা যেত এসময় কিংবা এদেশের নাটক, সিনেমা ইতিহাস। থাক সে সব কথা- মানুষের বাসায় কাজ নাই- চায়ের দোকানে বসে বাহারী গল্প ফাঁদে আর ভাবে কাদের ঘরে কয়টা মেয়ে বাড়ন্ত, কতজন রক্তচন্দনের বন পেরিয়ে ভালোবাসা আনতে চেয়েছিল। যে সব প্রেমিক-তাদের নামের আড়ালে লুকিয়েছিল- চন্দন হননের কিচ্ছা… এই বাড়িটা সাক্ষী- সেই কালের… সুগন্ধি মেখে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছে স্বয়ং রাজেস্বর…
শয়তানের নিঃশ্বাস
চোখের পলকেই লোকটি হনহন করে আমাকে নিয়ে গেলেন নিজের দিকে- দৈবাৎ এক মাদকতায় দুলছি- খুলে দিচ্ছি নিজের শরীর অজান্তেই… বিষয়টা ভাবনার। কাজটা জটিল। আতংকে নিজের ভেতরে আমি ক্রিয়াশীল… ঘটনাটা অন্য… ফিসফিসানির মাসি অদ্ভুত বিস্ফোরণে ভুগছেন।
বোকা
চলো হেঁটে আসি- নিঃসঙ্গ নদীর কাছে
শাখা-প্রশাখা ছুঁটেছে অজানা পথে- বোকা দিগন্তে…
ফিউজ একটি বাল্ব কি দাম আছে তার
দূরে কিংবা কাছে ফেললে বা রাখলে।
ফোঁস-ফোঁস করে অনেকদিন বসে আছি
কেউ একজনকে বলিনি শালাটাও…
এমন বোকা আমি ছুরি বসিয়েও বুকে
আছি মহাসুখে- গ্রহণযোগ্যতা পাব বলে।
ভবিষ্যতের গল্প
আমার কবিতারা এখন চিরশয্যাশায়ী
আকাশকুসুম গল্পের ধোয়া ছড়ায়।
পিতা হয়েও বসন্তের রাতে আমি
শুনিয়েছি স্বৈরাচারী দিবসের গল্প…
গল্প মানে বেঁচে থাকার অজস্র মানুষ
হাত পা নেড়েচেড়ে চলতে জানে-অবিরাম
দুঃসাহসিক কাজেও যাদের রয়েছে স্ফালিত জোয়ানি-
তাদের নেই মৃত্যু ভয়।
যারা মৃত্তিকার পাদতলে লুকিয়ে রাখে
নিজেদের বিলুপ্ত জীবনের গল্প
তারা খ্যাপা রৌদ্রের মুখে মুখ রেখে
পা বাড়ায়- ফেলে আসা কবিতার যাত্রাপথে…
গল্প মানে জীবনের অতীত বা বর্তমান
ভবিষ্যত ঢের দেরি…
ন্যাতিয়ে পড়া শীত
১.
আমি এখন ন্যাতিয়ে পড়া শরীর নিয়ে তোমার অপেক্ষায় থাকি
মনে রেখ-প্রার্থনার আড়ালেও প্রার্থনা থাকে- নিষ্ঠুর থাবার ভয়ে আমি
কাটা ত্বকের ব্যথায় বদলে হয়ে উঠি নেকড়ে কিংবা রক্তপিপাসু হায়েনা
জীবিতকালেও চেঁচিয়ে উঠে তোমাকে জড়িয়ে ধরি- ঠান্ডায়।
ক্রমাগত গড়াতে গড়াতে মাথায়- জেকে বসেছে ঠান্ডার শুভ্রতা
২.
আমাদের বলতে তুষার মামাই ভাঙা নদীর বুক- চোখে ভাবুকতার গগজ
এই মাটিতে ঝাপিয়ে পড়ে- হৃদয়ে পাই সুখ। সুখের অসুখ কেনো হল-
পেছনমুখো সব- ভালো যাকে ভালো বলে- থাকতে দিলাম ঘরে
সেই এখন উল্টো বেশে- কুয়াশা মেখে; শরীর দিল ছেড়ে
৩.
শরীর এখন আমার মুখো আস্তে দিল ছেড়ে- সামনে মৃত লাশ
গান গেয়ে আজ লাশের শরীর করব আবিষ্কার
অপেক্ষা এক ছোট্রমেয়ের- বাবার শরীর ভাঙা
শীত এসেছে নেচে বাবু- সংগীতে তাল তুলে…
মদ্দ তোষক
শীতের ভেলায় ভাসতে ভাসতে তোমার নদীতে শরীর রাখি
আচমকা চমকে উঠি আমি; তবে আমি কিংবা তুমি
রোদের আলোয় পুলকিত হই- ইলশেগুড়ি বৃষ্টির বাতাস
রুগ্নতার হিমেল হাওয়া বিষাদের চ্যালাক জ্বালে নিজেই নিজের বুকে…
ধরে নেও তুমি আর আমি নিঃসঙ্গ এক মানুষ
এলোমেলো জীবনের সাথে গড়ি- তীব্রতার নিঃস্ব ঘর
খোলা জানালায় দুলিয়ে রাখা লতার শরীরে হাত রেখে
আমিও তোমার শরীর ছুয়ে হয়ে উঠি পুরুষ…
পুরুষের ভারী দরকার সমাজে- এখন আর পুরুষ দেখিনা
সবাই এক একটা মদ্দ তোষক- নিজের অন্ডকোষ ঝুলিয়ে-
অন্যের পায়ে লেহনের জিহবা লিক লিক করে…