005285
Total Users : 5285
Charbak magazine logo
sorolrekha logo

লেখক তালিকা

জন্ম. ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে। সম্পাদনা করছেন ‘চারবাক’ ও ‘সরলরেখা’। যুক্ত আছেন সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’র সাথে। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: মায়াহরিণ, কাব্যগ্রন্থ ২০০৮, চারবাক, বুদ্ধিজীবীর দায়ভার, সম্পাদনা ২০০৯, সংবেদ, পক্ষ—প্রতিপক্ষ অথবা শত্রু—মিত্র, প্রবন্ধ ২০১০, চারবাক, নির্বাচিত চারবাক, সম্পাদনা ২০১১, চারবাক, নাচঘর, কবিতা, ২০১২, চারবাক, ভাষা সাম্প্রদায়িকতা অথবা সাম্রাজ্যবাদি খপ্পর, প্রবন্ধ, ২০১৩, চারবাক এবং মুখোশ, কবিতা, ২০১৬, চারবাক, করোনাকালে, কবিতা, ২০২২, চারবাক।
View Posts →
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
View Posts →
প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ
View Posts →
বাংলাদেশের উত্তরউপনিবেশি ভাবচর্চার পথিকৃৎ ফয়েজ আলম একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। উপনিবেশি শাসন-শোষণ আর তার পরিণাম, রাষ্ট্র ও সমধর্মী মেল কর্তৃক ব্যক্তির উপর শোষণ-নিপীড়ন ও ক্ষমতার নানামুখি প্রকাশ আর এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন তিনি। বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের নয়াউপনিবেশি আর্থ-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর রাষ্ট্র ও স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর শোষণচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার লেখা আমাদের উদ্দীপ্ত আর সাহসী করে তোলে। রুহানিয়াত সমৃদ্ধ দার্শনিক ভাবচর্চা আর সাহিত্যিক-রাজনৈতিক তত্ত্বচর্চাকে একসাথে কবিতার দেহে ধারণ করতে সক্ষম ফয়েজ আলমের সহজিয়া কবিতা। তার কবিতায় তিনি মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তার কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার যোগীরনগুয়া গ্রামে। বাবা মরহুম শেখ আবদুস সামাদ, মা সামসুন্নাহার খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ পাশ করার পর প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য এমফিল. ডিগ্রী লাভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ব্যক্তির মৃত্যু ও খাপ-খাওয়া মানুষ (কবিতা, ১৯৯৯); প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি ( গবেষণা, ২০০৪); এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজম (অনুবাদ, ২০০৫); উত্তর-উপনিবেশি মন (প্রবন্ধ, ২০০৬); কাভারিং ইসলাম (অনুবাদ, ২০০৬), ভাষা, ক্ষমতা ও আমাদের লড়াই প্রসঙ্গে (প্রবন্ধ, ২০০৮); বুদ্ধিজীবী, তার দায় ও বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব (প্রবন্ধ, ২০১২), জলছাপে লেখা (কবিতা, ২০২১), রাইতের আগে একটা গান (কবিতা, ২০২২); ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (প্রবন্ধ, ২০২২)।
View Posts →
কবি ও গল্পকার। যুক্ত আছেন চারবাক সম্পাদনা পরিবারের সাথে।
View Posts →
কবি। জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়।
View Posts →

সম্পূর্ণ লেখক তালিকা

বাঁধের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে

ভারত উত্তরপূর্ব অঞ্চলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেগুলো ডিহিং বহুমুখি বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদির ওপর), সুবানসিঁড়ি বহুমুখি বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদির ওপর), লোহিত বহুমুখি বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদির ওপর), যাদুকাটা বহুমুখি বাঁধ প্রকল্প (মেঘনার শাখা নদির ওপর), সোমেশ্বরি বহুমুখি বাঁধ প্রকল্প (মেঘনার শাখা নদির ওপর), ভৈরবি বহুমুখি বাঁধ প্রকল্প (বরাক নদির শাখার ওপর), নোয়া ডিহিং বহুমুখি বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখার ওপর), কুলশি বহুমুখি বাঁধ প্রকল্প (ব্রহ্মপুত্রের শাখার ওপর) ইত্যাদি। একটা সময় ছিল যখন বাঁধকে আশির্বাদ হিসেবে দেখা হতো, কিন্তু বিজ্ঞানের ক্রমউন্নতি ও গবেষণায় আজ একথা দিবালোকের মতো সত্য ছোট-বড় যেকোনো বাঁধই মানবসভ্যতার জন্য অভিশাপ, বিপর্যয় সৃষ্টিকারি, শান্তি নাশক। বাঁধ যেমন প্রকৃতির উপর মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে তেমনি জীবনযাপন প্রণালিতেও অবিশ্বাস্য রকমের পরিবর্তন নিয়ে আসছে। টিপাইমুখসহ সব ধরনের বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আজ উচ্চকিত। ভারতের জলবিদ্যুৎ নিগম যতই যুক্তি দেখিয়ে বলুক, টিপাইমুখ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে বরাক নদের বন্যাও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, যুক্তি ধোপে টিকছে না। কারণ এই ড্যাম ২৯১৫০ হেক্টর আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে দেবে। ফলে পশ্চিম মণিপুরের হমার ও জেলিয়াংগ্রং নাগা এবং উত্তর মিজোরামের কুকি-সহ বিপুল আদিবাসি জনগোষ্ঠির বাস্তুচ্যুতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। পানিতে ডুবে যাওয়ায় গাছপালা বৃক্ষ-সহ প্রাণি ও পরিবেশের নিদারুণ ক্ষতি হবে। টিপাইমুখ ড্যাম প্রকল্পে ওয়ার্ল্ড কমিশন অন ড্যামস্-এর নীতিমালাও মানা হয়নি, যে নীতিমালায় ড্যাম নির্মাণে আদিবাসি জনগোষ্ঠির স্বাধিন মতামত নেয়ার কথা। এনএইচপিসি মধ্যপ্রদেশের ইন্দিরাসাগর ও ওমকারেশ্বর, হিমাচল প্রদেশের চামেরা ১ ও ২, মণিপুরের লোকতাক, ঝাড়খণ্ডের কোয়েল কারো, অরুণাচলের নিম্ন সুবানসিঁড়ি ইত্যাদি প্রকল্পে বাস্তুচ্যুত মানুষের যথাযথ পুনর্বাসন আজো হয়নি; বরং পরিবেশ ধ্বংস ও দুর্ভোগ বেড়েছে।

ভূ-বিজ্ঞানিরা মনে করেন টিপাইমুখ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বাঁধ নির্মাণের পর যদি সেখানে ভূমিকম্প ঘটে তাহলে ভাটি অঞ্চলের আসাম ও বাংলাদেশে দুর্যোগ ঘটবে। ড্যাম নির্মাণের সম্ভাব্য সামাজিক ক্ষতিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে না। পরিবেশের ওপর বাঁধের প্রভাব কি হবে তা বিশ্লেষণের জন্য আগে থেকেই প্রাপ্ত কিছু তথ্যের ওপরে নির্ভর করা হচ্ছে, হয়েছে-যার বেশির ভাগই ভুল তথ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।

বাংলাদেশের দুটি বড় নদির সরাসরি উৎস হচ্ছে বরাক নদ, যার ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে টিপাইমুখ ড্যাম। বরাক নদ সিলেট সিমান্তের অমলশিদে এসে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে একটি নাম নিয়েছে সুরমা, অপরটি কুশিয়ারা। সুরমা ও কুশিয়ারা বৃহত্তর সিলেটের প্রাণ, এ দুটি নদি নানা শাখা নদি দিয়েও সিলেটের হাওড়গুলোতে পানির যোগান দিয়ে যাচ্ছে। এসব বড় হাওড় আবার অনেক ছোট হাওড় ও বিল-বাঁওড়ে পানি যুগিয়ে থাকে এবং ছোট-বড় এই হাওড়-বিলই জীববৈচিত্র্যের উৎস ও শস্যভাণ্ডার। যেমন হাকালুকি, শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর ইত্যাদি। সুরমা-কুশিয়ারা ভৈরবে এসে মেঘনা নামে বিশাল জলধারা হয়ে পানির যোগান দিচ্ছে কিশোরগঞ্জ-সহ বিস্তির্ণ এলাকায়। মেঘনার সঙ্গে সম্পর্কিত কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওড়-বাঁওড়, নদিনালা। বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চল তথা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভিবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রা‏হ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এই ৭টি জেলা তার হাওড়গুলোর জন্যই অনন্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। হাওড় এই অঞ্চলকে জীবিকা ও প্রাণবৈচিত্র্যের সঙ্গে দিয়েছে সংস্কৃতি ও সাহিত্য।

টিপাইমুখ ড্যাম কাজ শুরু করার পর এর একশ কিলোমিটার নিম্নে তৈরি করা হবে ফুলেরতল ব্যারেজ। ড্যাম নির্মাণ সম্পন্নের পর বরাকে ৩১ শতাংশ পানি আটকে রাখা হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এবং ফুলেরতল ব্যারেজ নির্মিত হওয়ার পর বরাক প্রবাহের ১০০ ভাগ পানির নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে ভারত সরকারের হাতে। ফুলেরতলে যে ব্যারেজ নির্মিত হবে সেটি সাধারণ বিবেচনা শক্তি প্রয়োগেই বোঝা যায়। কারণ টিপাইমুখ ড্যামে বিনিয়োগকৃত অর্থ তুলতে গেলে ফুলেরতলে ব্যারেজ বানিয়ে তার সেচ সুবিধা থেকেই তা গুণতে হবে। ফল ফারাক্কার মতো বিপর্যয় সৃষ্টিকারি হবে আমাদের ধারণা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরাকের বাংলাদেশ অংশ তথা সুরমা-কুশিয়ারার স্রোতের গতি ও বালু বহনের ক্ষমতা পদ্মার চাইতেও বেশি। টিপাইমুখ ড্যাম হলে নদিগর্ভে বালি কিংবা পলি সঞ্চালনের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে করে কয়েক বছরের মধ্যেই বালুস্তর জমে সিলেট অঞ্চলের হাওড়-বাঁওড়, নদিনালা ভরাট হয়ে যাবে। ধ্বংস হবে কৃষি। সুরমা-কুশিয়ারা ভরাট হলে টান পড়বে মেঘনার অস্তিত্বেও।

শুকনো মওসুমে নদিকেন্দ্রিক জনপদ এবং হাওড়কেন্দ্রিক জনপদের অবস্থা ভিন্ন থাকে। রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের নদিগুলোতে শুকনো মওসুমে পানি ছাড়লে সেটিতে লাভ এবং তা প্রয়োজন। কিন্তু হাওড় অঞ্চলের নদিগুলোতে তা হবে আত্মঘাতি। কারণ শুকনো মওসুম তথা হেমন্ত, শিত ও বসন্তের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে টিপাইমুখ ড্যাম থেকে জল ছাড়া হবে আর ওই সময়ে হাওড়গুলো জেগে ওঠে ও ফসল ফলে। এসময় প্রথমে হাওড়ের জেগে ওঠা উঁচু ভূমিতে বিজ বপন করা হয়, সেগুলো দুই তিনমাস পরে চারা তথা জালা হয় এবং জালা হওয়ার পরে নিম্নভূমি ততোদিনে জেগে ওঠলে সেখানে রোপণ করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার সময় হাওড়গুলোর পানি নদির মাধ্যমে নিষ্কাষিত হয়। কিন্তু টিপাইমুখ থেকে ওই সময়ে যখন পানি ছাড়া হবে তখন হাওড়গুলো জেগে ওঠতে পারবে না। ফলে বোরো ধান ফলানোও অসম্ভব হয়ে পড়বে। তথা ওই দিনগুলোতে টিপাইমুখ থেকে পানি ছাড়ার ফলে নদির পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় নদি আর হাওড়ের পানি নিষ্কাশন করতে পারবে না, উল্টো এমনও হতে পারে যে, নদির পানি হাওড়ে গিয়ে ঢুকবে। ফল হবে ভয়াবহ।

টিপাইমুখ ড্যাম দিয়ে আগাম বন্যা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। সর্বোচ্চ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে গিয়ে ড্যাম সবসময় পূর্ণ রাখতে হবে। ড্যামের গঠন অনুযায়ি অতি বৃষ্টিতে পানি কেবল স্পিলওয়ে দিয়ে উপচে পড়ে ভাটিতে যায়। যেমন হচ্ছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে বর্ষার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। বরাক অববাহিকায় অতিবৃষ্টিপাত ঘটলে সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ঠিকই, তবে অতিরিক্ত পানি আটকে না রেখে বিকল্প পথে তা নিকাশ করতে হবে। এ কারণে নিম্নাঞ্চলে বন্যারোধ করা সম্ভব হবে না। উদাহরণ হিসেবে ভারতের ভকরা বাঁধকে আনা হয়। ১৯৭৮ সালে বাঁধটি থেকে জরুরি ভিত্তিতে পানি ছেড়ে দিলে পাঞ্জাবের প্রায় ৬৫ হাজার মানুষকে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হয়েছিল। তাছাড়া বন্যার তোড়ে বাঁধ ভেঙে পড়ার আশংকাও থাকে।

পূর্বেই বলা হয়েছে, টিপাইমুখ বিশ্বের একটি বৃহত্তম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্প যদি বাঁধ ভেঙে দেয় তাহলে এই বিলিয়ন বিলিয়ন ঘন মিটার পানি শুধু মণিপুর বা কাছাড়ে সিমাবদ্ধ থাকবে না। বছরের অন্যান্য সময় শান্ত থাকলেও বরাক ও এর শাখা নদিগুলো মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময় স্রোতস্বি হয়ে ওঠে। ভূ-প্রকৃতিগত কারণে বাংলাদেশের সিলেট ও পার্শ্ববর্তি মণিপুর অঞ্চলে বর্ষাকালজুড়ে অধিক পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। সাধারণভাবে এই বৃষ্টিপাতের ৬০-৭০ ভাগ হয় জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে। বিপরিতে বছরজুড়ে কার্যকর রাখতে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রকে মে-জুনের ভেতরে পূর্ণ পানি ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে বাঁধের ভাটি অঞ্চল তথা মণিপুর ও বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেবে।
টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে শুষ্ক মওসুমে পানিপ্রবাহ বাড়ানো প্রসঙ্গটি সমালোচিত হচ্ছে এই বলে যে, ফ্যাপ-৬ রিপোর্টে নাকি আছে, ড্যাম নির্মিত হলে অমলশিদে পানির সর্বোচ্চ প্রবাহ শতকরা ১০০ ভাগ থেকে ২০০ ভাগ বাড়বে এবং পানির পরিমাণ বাড়বে শতকরা ৬০ ভাগ। অন্যদিকে টিপাইমুখ প্রকল্পের পরিবেশগত রিপোর্টেও বলা হয়েছে, বাঁধের কারণে শুষ্ক মওসুমে পানি প্রবাহ ১১০ ভাগ বেড়ে যাবে। ফ্যাপ-৬ এর রিপোর্ট মতে, এই বর্ধিত প্রবাহ নৌ চলাচল, সেচ ও মৎস্য চাষ বৃদ্ধি ঘটাবে। এখানেও আমাদেরকে নদি অঞ্চল ও হাওড় অঞ্চলের ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কথা বলতে হচ্ছে। বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলে ওই সময় পানির প্রবাহ বেড়ে গেলে ফসল ফলবে কি করে? হাওড় শুকিয়ে গেলে মানুষ যেমন বোরো ধান রোপণ করে, তেমনি হাওড় শুকনো থাকতে থাকতেই বোরো ফসল ঘরে তোলে। টিপাইমুখ ড্যাম নিয়ে ভারত সরকার একটি পক্ষ, কারণ তারা এটিতে লাভই দেখতে পাচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ সরকারও ভারত সরকারের ওপর আস্থাশিল এই কারণে যে, বাংলাদেশের ক্ষতি হয় ভারত সরকার এমন কিছু করবে না এবং টিপাইমুখ ড্যামে বাংলাদেশের কোনও ক্ষতি হবে না। এমন প্রচারণাও চালানো হচ্ছে টিপাইমুখে উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে বাংলাদেশ লাভবান হবে। কার্যত এই ড্যাম নিয়ে এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ কোনও সমিক্ষা পর্যন্ত হয়নি। ফারাক্কা অভিজ্ঞতাও আমাদের জন্য সুখকর হয়নি। ফারাক্কার কারণে কৃষি, অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কি ক্ষতি ঘটেছে এবং বাংলাদেশে পরিবেশ উদ্বাস্তু কত দাঁড়িয়েছে তা নিরূপণ করা দরকার। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, ছোট বড় সকল বাঁধ এখনই বন্ধ করতে হবে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষের এই আত্মহনন, ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য কিছুতেই বিসর্জন দেয়া যায় না। উন্নত দেশগুলো যেখানে প্রকৃতির মুক্তপ্রবাহকে স্বিকার করে নিয়ে বাঁধ ভেঙে দিচ্ছে, সেখানে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো সাম্রাজ্যবাদি শক্তির প্ররোচনায় হীন স্বার্থে বাঁধ গড়ে তুলছে, যা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আত্মহনন প্রকল্প বন্ধ হউক এখনই এই কাম্য। আশার কথা জনমত সেদিকেই যাচ্ছে।

শেয়ার করুন: