প্রাককথন
আপাতদৃষ্টিতে নৈরাষ্ট্র-নৈরাজ্যের ধারণাটি চিত্তচাঞ্চল্যকর, চমকপ্রদ, আলোড়িত, আলোচিত, এবং তাত্ত্বিক দিক থেকে সম্ভবপরও বটে। কিন্তু আদতে রাষ্ট্রবিহীন রাজ্য সম্ভব কি-না সেটি নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধাদ্বন্দ্ব, সংশয়, সন্দেহ আছে। আমাদের ভাষ্য এই রাষ্ট্রবিহীন রাজ্য আদতেই সম্ভবপর নয়, তেমনি সরকারবিহীন সুশীল সমাজ। রাষ্ট্র একটি দৈবিপ্রতিষ্ঠান— আধিদৈবিক (সরলা, মগজে যার অবস্থিতি), সরকার প্রত্যক্ষ ক্রিয়ায় কর্মে এবং কার্যে। সরকারের মাধ্যমেই আধিদৈবিক রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড সমাধা হয় সুচারুভাবে। সরকার পরিচালিত হয় নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারা, (গণতন্ত্র মতে)। এতএব, গণতন্ত্র-সরকার-রাষ্ট্র ত্রয়ির মেলবন্ধন একটি কার্যকরি সুতোয় গাঁথা। প্রেসার গ্রুপ বা চাপ সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত কতিপয় পর্ষদ উন্নত দেশে বিরাজে, যারা সরকারের ওপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাষ্ট্রস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দেনদরবার করেন এবং সরকারকে চাপ প্রয়োগে বাধ্য করেন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে। ব্রাহ্মণ্যবাদী শ্রেণী অবস্থান থেকে (নব্বই দশকে যার শুরু) কয়েকটি শব্দ এনজিও মদদে বেশ প্রসার লাভ করেছে, তন্মধ্যে সুশীল সমাজ একটি। সুশীল সমাজকে প্রকারান্তরে সরকারের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেবার একটি অপচেষ্টাও লক্ষণীয়।
সুশীল সমাজের অন্যতম নেতা নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস গ্রামীণ ফোনের মালিক বহুজাতিক কোম্পানি টেলনরের বিরুদ্ধে মামলা করবার হুমকি দিয়েছেন এই বলে যে, গ্রামীণ ফোন এদেশের লক্ষকোটি মেহনতি মানুষের বৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। (খবরটি দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে) দেরিতে বোধোদয়ের জন্য হলেও ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ, কারণ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনিই গ্রামীণ ফোনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারে সহায়তা করেছেন, এখন মালিকানা দ্বন্দ্বে টেলনরের কাছে ধরনা দিচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষের দোহাই দিয়ে। টেলনর দীর্ঘদিন ধরে সুশীল সমাজের এইসব নেতাদের দিয়ে সাহায্য সহযোগিতার নামে প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে নিয়েছে নামমাত্র এইডের বিনিময়ে, অর্থনীতিবিদ ইউনূস সাহেবের তখন একবারও মনে হয়নি বহুজাতিক বিপণনসন্দেশে তিনি এমনই মজেছিলেন, দেশের স্বার্থরক্ষার প্রসঙ্গটিও গুরুত্ব পায়নি তখন তার কাছে। বলা যায়, প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আমাদের দেশে পরিচালিত এনজিও কর্মকাণ্ডের কথা। বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে ঢিল ছুঁড়লে কোনো-না-কোনো এনজিওর মাথায় তা পড়বে না (সহায়তাভোগী অর্থে)। দুঃখজনক সত্য হল এইসব এনজিওর মাধ্যমে বাংলাদেশের বাস্তবে কোনো উন্নয়নই হয়নি, হয়েছে বহুজাতিক আগ্রাসন, সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার। উত্তর-ঔপনিবেশিক জমানায় সাম্রাজ্যবাদী থাবা প্রসারিত হয়েছে এইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। বর্তমান সুশীল সমাজ বিকাশের উৎস না-কি পূর্ব-ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকা, যার সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ পোল্যান্ডের সলিডারিটি। খেয়াল রাখা দরকার তখন পূর্ব-ইউরোপের এই দেশগুলো ছিল একদলের দখলে, বিরোধী রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতি ছিল না। সুশীল সমাজের অন্তরালে তখন এই দল পরিচালিত হয়েছে এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংগঠনে রূপান্তর লাভ করেছে।

০১
সুশীল সমাজের ধারণাটি দার্শনিক ও সমাজতত্ত্ববিদরা নানা সময়ে নানা অর্থে ব্যবহার করেছেন। হেগেল যে অর্থে সিভিল সোসাইটি কথাটা ব্যবহার করেছেন, লক বা হবস সে অর্থে করেননি। গ্রামসির আলোচনায় এর অর্থ ও ব্যঞ্জনা ভিন্ন। আবার বিংশ শতাব্দির সত্তর-আশির দশকের আন্দ্রে দোর্জের মতো অ্যানার্কিস্ট ঘরানার তাত্ত্বিকদের আলোচনার সঙ্গে পূর্বসূরিদের ফারাক বিস্তর।
বিশ্বব্যাংক বা ইউএসএইড-এর মতো সংস্থা উন্নয়নের প্রসঙ্গে কথাটি প্রায়ই ব্যবহার করে থাকে। বিশ্বায়নপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর ব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের বয়ানে সুশীল সমাজ এখন একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ। এর তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে যতটা না মাথা ঘামানো হয় তার চেয়ে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ব্যবহারযোগ্য একটি সংগঠন হিসেবেই দেখা হয় একে। ধারণাটি পুঁজিবাদী আধুনিকতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পুঁজিবাদ-পূর্ব সমাজে সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক সমাজের মধ্যে পার্থক্য করা যায় না। পুঁজির উত্থানের পর বুর্জোয়া সমাজই সুশীল সমাজকে আলাদা করে দেয়। কারণ, বুর্জোয়া রাষ্ট্র সুশীল সমাজ থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে ও সুশীল সমাজের ঊর্ধ্বে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসাবে তুলে ধরে।
হেগেলের তত্ত্বায়নে নাগরিক সমাজ পরিবার থেকে পৃথক এক পরিসর যেখানে অধিকার সচেতন ব্যক্তিমানুষেরা, যারা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক, পরস্পরের সঙ্গে স্বেচ্ছায় চুক্তি করে। ব্যক্তিমানুষের এই পারস্পরিক অধিকারের স্বীকৃতিকেই হেগেল ‘নৈতিক জীবন’ নাম দেন। এই নৈতিক জীবনই প্রতিফলিত হয় বুর্জোয়া রাষ্ট্রে, যা ‘অধিকার’ ধারণাটির মাধ্যমে পায় মূর্ত রূপ। রাষ্ট্র সার্বজনীন বা ইউনিভার্সাল, সুশীল সমাজের ব্যক্তি নাগরিক যারা বিশেষ বা পারটিকুলার।
মার্কস হেগেলের এই তত্ত্বকে খারিজ করেছেন এই যুক্তিতে যে বুর্জোয়া সুশীল সমাজে শ্রেণিবিভাজন আছে, অতএব বুর্জোয়া রাষ্ট্রের সার্বজনীনতার দাবি মিথ্যা। শ্রেণিদ্বন্দ্বকে সামনে এনে বুর্জোয়া রাষ্ট্রের নিরপেক্ষতার দাবি ও অধিকারের ধারণা ভিত্তিহীন। রাষ্ট্রের আপাত এই নিরপেক্ষতা ও সার্বজনীনতার দাবি বুর্জোয়া সমাজের শ্রেণিদ্বন্দ্বকে আড়াল করে সত্যি, কিন্তু দৈন্য ঘোচে না।
বুর্জোয়া ব্যবস্থার রাষ্ট্র ও সুশীল সমাজের সম্পর্ক নিয়ে মার্কস কিছু গভীর মন্তব্য করেছেন যা অনুধাবনযোগ্য। যেকোনও উদারনৈতিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কিছু অধিকারের প্রতিশ্রুতি দেয়। যতই অসাম্য থাকুক না কেন, রাষ্ট্র ক্ষুদ্র পরিসরে ওই অসাম্যকে স্বীকার করে না। সেখানে বিত্তবান-বিত্তহীন, ব্রাহ্মণ-দলিত, নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান আইনের চোখে সকলেই সমান (এ যেন মানুষের স্বর্গকল্পনা— যেখানে দারিদ্র্য, অসাম্য, অবিচার, ব্যাধি, জরা, এমনকি মৃত্যু কিছুই নেই।) একইভাবে উদারনৈতিক বুর্জোয়া রাষ্ট্র সমাজের অসাম্যকে রাষ্ট্রিয় পরিসরে অস্বীকার করে। অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে সে প্রকৃত প্রস্তাবে অসাম্যের অস্তিত্বকে স্বীকৃত দেয়। কাল্পনিক স্বর্গের আশ্বাস— মানুষ যেমন মর্ত্য-জীবনের দুঃখকষ্টকে মেনে নেয়, ঠিক তেমনই সে সমাজের অন্যায়কে মেনে নেয় এই ভেবে যে রাষ্ট্রের চোখে সবাই সমান (না বৃহত্তর ব্যবস্থার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে বলবার মতো কিছু থাকে না বলে। মার্কসের এই বিশ্লেষণে রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকারের অন্তঃসারশূন্যতা ধরা পড়ে)।
মার্কস যেভাবে দেখেছেন বিষয়টি গ্রামসি ঠিক বিপরীত প্রান্ত থেকে বিচার করেছেন একে। গ্রামসির প্রশ্ন যদি বুর্জোয়া রাষ্ট্রের সার্বজনীনতার দাবি মিথ্যা হয়, তাহলে কোন প্রক্রিয়ায় শ্রেণিবিভাজিত সমাজে রাষ্ট্র তার সার্বজনীনতাকে আপাতগ্রাহ্য করে তোলে? গ্রামসি একে নাম দেন হেজিমনি। তিনি দেখান কিভাবে শাসক বুর্জোয়াশ্রেণী শাসিত প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর কাছ থেকে শ্রেণীশাসনের স্বপক্ষে একধরনের সম্মতি আদায় করে নেয়। আর কিভাবে সম্মতি আদায়ের এই প্রক্রিয়াটি চালু থাকে রাষ্ট্রের বাইরে সুশীল সমাজের নানান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে।
মার্কস ও গ্রামসি দুজনের ক্ষেত্রেই তত্ত্বায়নের কেন্দ্রে রয়েছে সমাজ পরিবর্তনের প্রকল্প। তাঁদের সুশীল সমাজের আলোচনাও সে কারণে কখনোই শ্রেণী- বিভাজনকে বাদ দিয়ে নয়। গ্রামসি বুর্জোয়া ব্যবস্থায় সুশীল সমাজকে এমন একটি এলাকা হিসেবে দেখেন যেখানে সাবঅলটার্ন (প্রলেতারিয়েত শ্রেণী) শাসকশ্রেণীর হেজিমনির বিরুদ্ধে নিজস্ব মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালানো যায়। দেখা যায়, সুশীল সমাজ একাধারে মতাদর্শগত প্রভুত্ব ও তার বিরোধিতার পরিসর।
অ্যারিস্টটল ধারণাটি প্রথম ব্যবহার করেছেন রাষ্ট্র পরিচালনায় নাগরিকদের সক্রিয় পরামর্শ ও অংশগ্রহণ অর্থে। তবে, সিভিল সোসাইটি কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন স্কটিশ দার্শনিক অ্যাডাম ফার্গুসন অষ্টাদশ শতাব্দিতে। ফার্গুসনের মতে, একজন নাগরিক তিনি কেবল নিজস্ব আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানোর কাজের মধ্যে থাকবেন না, তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের বিষয়েই সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন। অর্থনৈতিক কার্যকলাপের বাইরে মানুষের একটি সামাজিক অস্তিত্বের কথা বলেন তিনি। স্কটিশ নবজাগরণের অনন্য ব্যক্তিত্ব অ্যাডাম স্মিথ এবং ডেভিড হিউমের লেখাতেও ফার্গুসনের ধারণার ছায়া মেলে। হেগেল তাঁর ‘এলিমেন্টস অব ফিলোজফি অব রাইটস’-এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন। আবার ফরাসি বিপ্লবের বিপ্লবী জ্যাকেবিয়ানরা সুশীল সমাজের অস্তিত্বই স্বীকার করেননি। তারা মনে করেন, রাষ্ট্রই হল জনগণের স্বার্থের প্রকৃত প্রতিনিধি। এখানে সুশীল সমাজ রাষ্ট্রের ভূমিকায় হস্তক্ষেপ করবে। এর পর সুশীল সমাজের আলোচনা প্রায় হারিয়ে যায়। ফ্যাসিস্ত জেলে বন্দী ইতালীয় কমিউনিস্ট আন্তোনিও গ্রামসির হাত ধরে বিষয়টি আবার আলোচনায় আসে। সুশীল সমাজের সর্বশেষ পুনরাবিষ্কারটি ঘটে নব্বই দশকে এবং এই ধারণাটিকে নিজেদের মতো করে বিশ্বব্যাপী প্রসারের চেষ্টা করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জাতিসংঘ, আইএমএফ, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাখ্যা হাজির করে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস-এর সেন্টার ফর সিভিল সোসাইটি। তারা সুশীল সমাজকে একটি তৃতীয় ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করে, যেখানে রাষ্ট্র ও সরকার একটি ক্ষেত্র, অর্থনীতি আর একটি ক্ষেত্র এবং সুশীল সমাজ হল তৃতীয় ক্ষেত্র। কারা সুশীল সমাজ এই তালিকার লক্ষণীয় সংযোজন এনজিও। (রাজনৈতিক দল এই গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ক্ষেত্রের কোনটিতেই নেই। Civil Society refers to the arena of uncovered collective action around shared interests, purposes and values. In theory, its institutional forms are distinct from those of the State, family and market, though in practice, the boundaries between State, civil society, family and market are often complex, blurred and negotiated. Civil society commonly embraces a diversity of spaces, actors and institutional forms, varying in their degree of formality, autonomy and power. Civil societies are often populated by organisation such as registered charities, development nongovernment organisations, community groups, womens organisations, faith-based organisations, professional associations, trade unions, self-help groups, social movements, business associations, coalitions and advocacy group.)

০২
বিশ্বায়নের প্রধান কারিগরদের কাছে সুশীল সমাজ এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন? কেন বিশ্বায়ন ও সুশীল সমাজের অগ্রগতি হাত ধরাধরি করে চলে? সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পতন এবং সুশীল সমাজের উত্থান সমসাময়িক ও জরুরী কেন? বিশ্বায়ন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা একেবারেই নতুন। সম্পূর্ণ নতুন এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রয়োজন নতুন একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, জাতিসংঘ, আইএমএফ স্পনসর্ড বিশ্বায়নের প্রয়োজন স্পনসর্ড রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান— এটিই সুশীল সমাজ। দুর্মুখরা বলেন, প্রচলিত রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে পড়লে বিশ্বায়ন অবশ্যই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। কিন্তু এটাকে যদি বেঁধে ফেলা যায় সুশীল সমাজের চৌহদ্দিতে, তবে সাপও মরবে, লাঠিও ভাঙ্গবে না।
অর্থনীতিতে একটি নতুন ব্যবস্থা খুবই জনপ্রিয়, স্পেশাল পারপাস ভেহিকল (এসপিভি) যেখানে কোনো একটি বিশেষ অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে একাধিক সংস্থা একটি অস্থায়ী জোট তৈরি করে। সুশীল সমাজ হল রাজনৈতিক স্পেশাল পারপাস ভেহিকল। স্বীকার করতেই হবে মানুষের প্রয়োজনে যতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তা হয়েছে রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতির জন্যই। আয়ারল্যান্ডের রাজনৈতিক নেতা ও লেখক ইভন ডোহার্টি’র নিবন্ধ ‘ডেমোক্রাসি আউট অব ব্যালান্স’-এ দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক ম্যাক্স ওয়েবারের বিখ্যাত উক্তি ‘রাজনৈতিক দল হচ্ছে গণতন্ত্রের সন্তান’ উদ্ধৃত করে দেখান, সুস্থ স্বাভাবিক রাজনৈতিক বিকাশের প্রক্রিয়ায় কিভাবে বিকৃতি আনছে এই তথাকথিত সুশীল সমাজ। পৃথিবীর নানা দেশের উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। দুঃখজনকভাবে তিনি আমাদের বাংলাদেশের উদাহরণ প্রসঙ্গক্রমে টেনে আনেন। ডোহার্টের প্রশ্ন, তথাকথিত সুশীল সমাজ যদি গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রশ্নে একটি হাতিয়ার হয় তবে বাংলাদেশের এই হাল কেন? সুশীল সমাজের মৃগয়াক্ষেত্র বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকার তার বাজেটে গ্রামোন্নয়নের জন্য যে টাকা খরচ করে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এনজিও-কে এর থেকে বহুগুণ বেশি দেয়।
আরেকটি দিক হচ্ছে সুশীল সমাজ গঠনের পক্ষে মিডিয়ার ওকালতি। এক্ষেত্রে মিডিয়ার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে মিডিয়া বলতে ছাপার কাগজ, রেডিও এবং টেলিভিশন (প্রতিটির জন্য প্রয়োজন হত বিপুল পরিমাণ আর্থিক সম্পদ)। ইন্টারনেট, মোবাইল এসএমএস এক্ষেত্রে যোগ করেছে নতুন হাতিয়ার, যাতে কারো একচেটিয়া অধিকার নেই।

০৩
ওয়েলথ অব নেশনস প্রবক্তা এডাম স্মিথ দেখান অর্থনৈতিক লেনদেন প্রতিষ্ঠিত হয় নৈর্ব্যক্তিক সম্পর্কের ভিত্তিতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩০-র দশকে ইউরোপে মহামন্দা দেখা দেয়। পশ্চিমা দেশে বেকারত্ব ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। ১৯৩৯ সালে বৃটিশ অর্থনীতিবিদ লর্ড কেইনস ‘জেনারেল থিউরি অফ আউটপুট, ইনকাম এন্ড এমপ্লয়মেন্ট’ প্রকাশ করেন। স্মিথের চিন্তা থেকে খানিকটা সরে আসেন তিনি। ৮০’র দশকে কেনিসিয় অর্থনীতিতে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। বাজার অর্থনীতির সাথে যুক্ত হয় বিশ্বায়ন ধারণাও। বাজার অর্থনীতিতে প্রবেশের অধিকার আছে তার যার মূল্য পরিশোধ ক্ষমতা আছে। বাজার জন্ম দিয়েছে কর্পোরেট কালচার। গড়ে ওঠেছে বহুজাতিক কর্পোরেশন, বহুজাতিক বিপণনসন্দেশ।
উদারিকরণ ও বেসরকারিকরণ শব্দদ্বয় বিশ্বায়নের দু’টি শর্ত। বিশ্বায়ন বিশ্ব অর্থনীতির কাঠামোগত উদার সংস্কার প্রক্রিয়া যেখানে দেশের গণ্ডী পেরিয়ে সবদেশের পুঁজিলগ্নি, আমদানি-রপ্তানি বাজার প্রভৃতির অবাধ ক্রিয়াকলাপও বোঝায়। বিশ্ববাণিজ্য এক প্রাচীন প্রথা, সাম্রাজ্যবাদী উপনিবেশের যুগে এর সঙ্গে যুক্ত হয় বাণিজ্যিক শোষণ। সদ্য-স্বাধীনতাপ্রাপ্ত উপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলো রাতারাতি পরিণত হল তৃতীয় বিশ্ব এবং অনুন্নত দেশে।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে বাড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং ভোগ্যবস্তুর চাহিদাও। নতুন ও দামি ভোগ্যদ্রব্যের স্রোতে ভাসছে বিশ্ব। মাস মিডিয়ার মনোলোভা বিজ্ঞাপন ক্যারিশমা, জোরালো প্রচারের ফলে বাড়ছে বিস্তৃতি, বিশ্বব্রান্ড-মাহাত্ম্য আকৃষ্ট করছে, আকৃষ্ট হচ্ছি আমরা প্রতিনিয়ত। অর্থবান লোকেরাতো বটেই, মধ্যবিত্ত মায় নিম্নবিত্তের লোকেরাও কনজিউমারিজমের শিকারে পরিণত হচ্ছে। ভাবার কারণ নেই, ক্রয়ক্ষমতায় দুর্বল নিম্নবিত্তের লোকেরা আওতার বাইরে থাকছে। কোকাকোলা, পেপসি, ভিডিও মিউজিক সিস্টেম, জুতা, টি-শার্ট, জিনস, ফাস্টফুড, মোবাইল কালচার কৌশলে গড়ে তোলা হচ্ছে। বহুদ্রব্যের অবাধ ব্যবহার যদিও পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে যাচ্ছে। কৃষি উপকরণ যেমন কীট ও পোকামারা ঔষধে যে বিষাক্ত উপাদান তা খাদ্যশস্যের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। অধিকাংশ ক্রেতাই জানে না বাজারের বহু-দ্রব্য মানসম্মত নয়, স্রেফ বিজ্ঞাপন প্রলোভনে প্রতারিত হচ্ছে তারা।
বিশ্বায়ন প্রবক্তা উন্নত দেশ এবং বহুজাতিক কোম্পানীর প্রধান লক্ষ্য উন্নয়নশীল তৃতীয়বিশ্বের দেশগুলোর বাজার দখল। বাধা জনসাধারণের সীমিত ক্রয়ক্ষমতা। মাত্র ৫-১০ শতাংশ বাজার অর্থনীতির আওতায় আসে; বাকীদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা না গেলে উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। এক. উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলে আনা, দুই. স্বাক্ষরজ্ঞান দান, বিজ্ঞাপন পড়ে যাতে পণ্য কিনতে পারে।
বিশ্বায়নের অন্যদিক বেসরকারিকরণ হুজুগ। প্রভুদের নিয়মিত প্রেসক্রিপশান, মনে হচ্ছে এখানেই আটকে আছে সব। আদমজীর মতো প্রতিষ্ঠানও ক্ষতির মুলো দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া যায়।
বলা হয়, ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি তুলে দিয়েছে রাষ্ট্রিক ভৌগোলিক সীমা। কম্পিউটার দিয়েছে ভাষাগতসাম্য, বিশ্বব্যাপী একই কমান্ডে কাজের অপূর্ব সেবা (না-কি বহুজাতিক কোম্পানীর কর্তৃত্ব!)। রাষ্ট্রের চাইতেও শক্তিশালি বহুজাতিক পুঁজি, বহুজাতিক ক্ষমতা। অর্থনীতিবিদদের আনুমানিক হিসাব বর্তমানে ৩০০ বহুজাতিক সংস্থা গোটা পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশ উৎপাদনশীল সম্পদের মালিক, টাকার অংকে সম্পদের মূল্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ ১০০ হাজার কোটি ডলার। সুইজারল্যান্ডের নেসলে কোম্পানীর এক বছরের বিক্রি হল ৩৮ বিলিয়ন ডলার আর নাইজেরিয়ার জাতিয় আয় ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বায়ন ঔপনিবেশিক অর্থনীতির যোগ্য উত্তরসূরী, উপনিবেশবাদের সাথে যার বিস্তর ফারাক। উপনিবেশবাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল উপনিবেশগুলো থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজেদের দেশে কারখানায় ভোগ্যপণ্য তৈরী; বিশ্বায়নে কারখানাটিও তথাকথিত অনুন্নত দেশে। উপনিবেশবাদের সঙ্গে ছিল প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক প্রভুত্ব, বিশ্বায়নের বাজিকররা বেশিরভাগ সময়ই থাকেন পর্দার আড়ালে। বিশ্বায়নের বাজিকরদের নতুন নতুন বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এর একটি হল পরিবেশবাদ। একে কব্জা করার জন্য তারা নিজেরাই হয়ে যায় মস্ত বড় পরিবেশবাদী। (ব্রিটিশ-আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানির বৃক্ষরোপণ এবং মস্ত মস্ত বিজ্ঞাপনধান্ধা স্মরণীয়) বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ জেড গ্রির এবং কেনি ব্রুনো এই অপূর্ব কৌশলের নাম দিয়েছেন সবুজ ধোঁকা বা Green Wash। বিশ্বায়নকে তাই শুধু নয়া-সাম্রাজ্যবাদ বললে পুরোটা বলা হয় না এটা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটা শক্তি, একটা দৈত্য।
তথ্যস্রোত বিজ্ঞাপনের এক মায়া তৈরি করছে, যে মায়াজগৎ থেকে নিস্তার মিলছে না কারোরই, বিজ্ঞাপন হাতিয়ারে মজছে সবাই শিশু-বৃদ্ধ মায় নারী-পুরুষ। বিজ্ঞাপন কেবল নারী অথবা পুরুষকেই পণ্য করছে না, করছে শিশু অল্পবয়সীকেও। বৈশ্বিক অর্থনীতি, বিশ্বায়নের ধনতান্ত্রিক শিল্পসমাজের আত্ম-বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন অভিজ্ঞান তৈরি হচ্ছে, তার আবাসস্থল আর জাতীয় রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক পরিবেশে নেই। বহুজাতিক সংস্থাগুলো যে ভাবে তাদের দাবা-বোর্ডের গুটি সাজিয়েছে তাতে পারিবারিক অভিজ্ঞান ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শুরুতেই ছিল। বিশ্বায়ন চায় পরিবার থেকে শুরু করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে শিকড়হীন ব্যক্তিত্ব।

০৪
তথাকথিত সুশীল সমাজ কি রাজনৈতিক দলের বিকল্প, অথবা রাষ্ট্র অথবা সরকারের? ইউরোপীয় পুঁজিবাদী দেশে, বুর্জোয়াশ্রেণিস্বার্থ সংরক্ষণ, বুর্জোয়া মতাদর্শগত পরিমণ্ডল গড়ে তোলা, এবং ব্যাপক সাধারণ মানুষের সম্মতি ও স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যেই নেয়া হয়েছিল উদ্যোগ। একই প্রক্রিয়া চালায় সাম্রাজ্যবাদ তৃতীয়বিশ্বের ঔপনিবেশিক এবং আধা-ঔপনিবেশিক নির্ভর দেশগুলোতে। ভারতে উপনিবেশ স্থাপনের পর এই দেশকে শাসন করার জন্য ব্রিটিশরা এদেশেরই তাঁবেদার পুঁজিপতি-ব্যবসাদার ও জমিদারদের সহায়তায় যে ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, তারা ক্রমান্বয়ে, সীমিতভাবে, জনসাধারণের বিশেষত দেশীয় বুর্জোয়া ও পেটিবুর্জোয়াদের স্বীকৃতি অর্জনের উদ্দেশ্যে সুশীল সমাজের কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালায়। ঊনবিংশ শতাব্দিতে বিশেষত ইংরেজিশিক্ষিত নব্যবাবু সম্প্রদায় এবং জমিদার-ব্যবসাদারদের মধ্যে তা অনেকাংশে সফল হয়েছিল। কিন্তু বিংশ শতকের শুরু থেকেই একদিকে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট এবং অন্যদিকে বিদেশী শাসক থেকে মুক্তির ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষা জনগণকে বিশেষভাবে আন্দোলিত ও বিক্ষুদ্ধ করে। ব্রিটিশরাও সুশীল সমাজ এবং তাকে প্রসারিত করে বুর্জোয়া ঔপনিবেশিক মতাদর্শগত পরিমণ্ডল প্রসারিত করে। ইউরোপে রেনেসাঁসের আগে ছিল প্রথাসাপেক্ষ সমাজ। সেই সমাজেও শ্রেণী বিভাজন ছিল, সেই শোষিত শ্রেণীর মাথায় বসত করত জমিদার ও গির্জা, রাজতন্ত্র বা যাজকতন্ত্র। সম্রাট শক্তি ও ধর্মশক্তি। রাজরাজড়া-যাজকসম্প্রদায়-ধর্মগুরু পোপের ধর্মীয় কেরামতির সঙ্গী সম্রাট, এরাই গড়ে তুলেছিলেন ‘ভদ্র’জনদের যৌথসভ্যতা বা তথাকথিত সুশীল সমাজ। মধ্যযুগের পতন এসেছিল ঐ যৌথ ও নিম্নসমাজের মানুষের একতাকে ভেঙে দিয়ে। ব্যক্তি ও উচ্চবিত্ত সমাজের ঘটেছিল শ্রেণীগত বিকাশ, ভূসামন্ত সমাজকে গুঁড়িয়ে দিয়ে উল্লম্ব সমাজ গড়ে তুলেছিল। ফিউডাল রাজতন্ত্র ও ধর্মতন্ত্রের কেস্টবিস্টুদের প্রতিপক্ষ হয়ে গড়ে উঠেছিল বিস্তৃত সুশীল সমাজ বা সিভিল সোসাইটি।

০৫
সুশীল সমাজ নিয়ে তত্ত্ব, ইতিহাস, রাজনীতি, মিডিয়া, বহুজাতিক আগ্রাসন, সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে কপচানির উদ্দেশ্য হল পরোক্ষভাবে এই বিষয়গুলো এর সাথে যুক্ত। মুক্তবাজার অর্থনীতি উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর চাপিয়ে দেবার পাঁয়তারা চালালেও নিজেদের দেশকে তারা সযতনে রেখেছে এর বাইরে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর এই লোকদেখানো দরদ কেন? কারণ সরল, ভোক্তাশ্রেণী। উন্নতদেশের মোট জনসংখ্যার কয়েকগুণ বেশির বাস এইসব উন্নয়নশীল দেশগুলিতে। ফলে উর্বরা বিশাল মার্কেট থাবা উঁচিয়ে প্রতিনিয়ত তাদের ডাকছে। এর বাজার দখল করতে দরকার দেশীয় এজেন্ট দালালশ্রেণী, সুশীল সমাজের নামে এই দালালশ্রেণী সৃষ্টি করাটা সহজ কারবার, যারা তাদের হয়ে এখানে বাঁদর নাচ নাচবে। সুশীল সমাজের সাথে জনমুক্তির প্রসঙ্গটি অনেকেই জুড়ে দিতে চান, কিন্তু তারা বুঝতেই চান না আদতে কতটা এখানে জনমুক্তির প্রসঙ্গ জড়িত? শুরুতেই ড. ইউনূস এবং টেলনরের গল্প বলেছিলাম, একই গল্প ফিরে আসে কাফকো, নাইকো, অক্সিডেন্টাল, ইউনোকল, এশিয়া এনার্জি, টাটা, ইউনিলিভার কিংবা বহুজাতিক যেকোনো কোম্পানির ক্ষেত্রেই। তৃতীয়বিশ্বের লুণ্ঠনের শিকার অধিকাংশ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির, অথবা অস্থির করে ফেলাই যেন এদের নিয়তি। প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসন এখন নেই, কিন্তু নতুন কায়দায় শুরু হয়েছে সাম্রাজ্যবাদ বিস্তার। বিদেশী স্বার্থে একের পর এক দেশী বস্ত্রকল, পাটকল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, সবুজ বিপ্লবের নামে আমদানি হচ্ছে হাইব্রিড-টার্মিনেটর বীজ, কিটনাশক, সার, সেচের বহুজাতিক ব্যবসা। আমদানিনির্ভর অর্থনীতির কারণে প্রতিদিন দেশের টাকা বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে। কাজ না থাকায় বিদেশে যেতে হচ্ছে সস্তা শ্রমের শ্রমিক হয়ে। আসছে রেমিট্যান্স নামের বাইরের টাকা, কিন্তু তা আবার হাত ঘুরে চলে যাচ্ছে ইউনিলিভার, গ্রামীণ ফোন বা অন্য কোনো বহুজাতিক কোম্পানির মাধ্যমে। ভালবাসা দিবস, বন্ধু দিবস, বাবা দিবস, মা দিবসের নামে চলে চক্রবর্তী খেইল, মোবাইল কারিশমা। আমাদের পরিচয় হয়ে যায় সম্মানিত ভোক্তাশ্রেণী, এত সহজে এতবড় ভোক্তা আর পাওয়া যাবে কোথায়? (উন্নয়নশিল দেশ ছাড়া!) জাতিয় স্বার্থে ফুলবাড়ি, কানসার্ট, লাউয়াছড়া কিংবা তেল-গ্যাস রক্ষা আন্দোলনের ডাক যখন দেয়া হয় তখন অদ্ভুতভাবে নিরব থাকে সুশীল সমাজ, তাদের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে যায় তখন। আমরা কি ধরেই নেব সুশীল সমাজের নামে নব্য-ঔপনিবেশিক প্রভুদের দালালিই এদের কর্ম?

বর্ষ ৮, সংখ্যা ১২, ফেব্রুয়ারি ২০০৯