আমি আর কবিতা লিখবো না
আমাকে কবিতা আচ্ছন্ন করে, তবু
আমি কবিতা লিখতে পারি না
আমার গুম হয়ে যাওয়ার ভয়-
আমাকে কবিতা ভালোবাসে, তবু
আমি কবিতা লিখতে পারি না
আমার সামনে হালাকুর তলোয়ারের মতো
উদ্যত ক্রসফায়ার-
আমি আর কবিতা লিখতে চাইনা, রাতে
দু’চোখ ভরে ঘুমোবে বলে
ভোরের সূর্যোদয় দেখবো বলে
আর মাঝ-নীশিথে যেন
আমার ঘরের দরজায়
ঠক ঠক শব্দ না ওঠে
অচেনা আগন্তুকদের,
আর আমি নিখোঁজ হয়ে যাই-
কবিতা লিখা ছাড়াও আমার বহুতর কাজ পড়ে আছে:
একটি বিহঙ্গগ্রাম, একটি বৃক্ষগ্রাম, একটি জোনাক-গ্রাম
গড়ে তুলবো বলে অনেক পথ হাঁটতে হবে আমাকে।
সে পথ ধরেআমি হেঁটে যাবো
বৃষ্টির কাছে, মেঘেদেরকাছে
দিগন্তের কাছে-দিগন্ত কত সুনিবিড়
আমি দেখবো
তাকে ছুঁবো, আর
সমুদ্র কী বিশাল আর নীল!
-আমি সেইনীলে ভেসে যাবো।
আমি অবারিত অরণ্যানীর কাছে ফিরে
যেয়ে বলবো, ‘এসে গেছি।’
জলাবিল ছেড়ে উড়ে আসবে
তখন ডাহুকের ঝাঁক
প্রান্তর ছেড়ে ছুটে আসবে হরিণীরা
নাম না-জানা সব বৃক্ষলতা, ঝিঁঝিঁরা
শুধাবে এসে, বলবে, ‘এসে গেছো!’
এত কিছু আমার আছে, তবু
আমি কবিতা লিখতে গিয়ে
গুম-খুন-ক্রসফায়ারে যাবো কেন?
কী আমারআসে যায় যে দেখাদেখি করি
কোন নির্দয় হায়েনার দল কখন
সাজায় সিংহাসন।
১৭.০৮.২০২০
এ শহর ও তার নদী
এ নগর একদিন স্মিত হাস্য নিয়ে গড়ে ওঠেছিল
কত বৃক্ষচ্ছায়া, সজলনদীতট-কত
বড় যে নদীটি, যার ভালোবাসা-নাম: গঙ্গাবুড়ি,
মশহুর চারদিক, ভুবনখ্যাতি;
এ নদীতে আমি একদিন ডুব দিয়েছি
দূরগ্রাম থেকে এসে-তার ভাসমান হোটেলে
খেয়েছি ঝালে রান্নাভাত-সালুন
বিস্ময়ে তাকিয়েছি এপার-ওপার, খেয়াঘাট
নৌকোর সারি, মানুষের কোলাহল যদিও
তবু সন্ধ্যা নামে
কী স্বচ্ছ তার জল, ইচ্ছে জাগে আঁজলা ভরি
মুখে তুলি নিই-
আহা নদী, আমার, গঙ্গাবুড়ি।
এখন এ শহরে যদিও নাগরিক
তবু পলাতক আমি এক তারুণ্য-স্মৃতি থেকে,
(নদী যেভাবে নিজেও পলাতক তার তীর ছেড়ে-)
হায়, নদীটি যদি একদিন নাই দেখতাম!
এখন, এই কোভিড-১৯’র দিনে, শুনি পালাচ্ছে মানুষ
পালাচ্ছে এই নিঠুর শহর ছেড়ে, যে শহর
নদীটিকে গ্রাস করার মতো গ্রাস করে নিয়েছে
সব মানবিক বোধ-সম্বল
ফুটপাথে পলিথিন-ঘেরে থাকা বৃদ্ধা চেঁচিয়ে
বলে: ‘এর চাইতে কুত্তা-বিলাইও বালা,
এ কুনু মাইনষের জীবন?’
গাড়িওলা-বাড়িওলা-রাজনীতির গুন্ডা-বদমাশ
তুখোড় মিথ্যুক,আর চাঁদাবাজ-পাচারকারী মিলে
লুট করে নিয়েছে
এ শহরের এমনকি প্রতিটি নিঃশ্বাস।
এ শহর তাই ওদের ছাড়া আর কারও নয়-
বড়নির্মম এ শহর: বস্তিতে আগুন, চুড়িহাট্টা-চকবাজারে লাশের সারি, নোংরা পানি, পকেটকাটা দাম,
কোথাও, কোনো একটিও হোটেল-রেস্তোরাঁয় ঢোকার জো’টি নেই, যেন মানুষের বাস নয়,
কিছু উদ্ভট জীব, সিটিকর্প ড্রেনের ভেতরে বড় হওয়া, ওরাই ঘুরে বেড়ায়।
আমিও এ শহর ছেড়ে পালাতে চাই।
২৬.০৬.২০২০