004743
Total Users : 4743
Charbak magazine logo
sorolrekha logo

লেখক তালিকা

জন্ম. ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে। সম্পাদনা করছেন ‘চারবাক’ ও ‘সরলরেখা’। যুক্ত আছেন সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’র সাথে। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: মায়াহরিণ, কাব্যগ্রন্থ ২০০৮, চারবাক, বুদ্ধিজীবীর দায়ভার, সম্পাদনা ২০০৯, সংবেদ, পক্ষ—প্রতিপক্ষ অথবা শত্রু—মিত্র, প্রবন্ধ ২০১০, চারবাক, নির্বাচিত চারবাক, সম্পাদনা ২০১১, চারবাক, নাচঘর, কবিতা, ২০১২, চারবাক, ভাষা সাম্প্রদায়িকতা অথবা সাম্রাজ্যবাদি খপ্পর, প্রবন্ধ, ২০১৩, চারবাক এবং মুখোশ, কবিতা, ২০১৬, চারবাক, করোনাকালে, কবিতা, ২০২২, চারবাক।
View Posts →
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
View Posts →
প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ
View Posts →
বাংলাদেশের উত্তরউপনিবেশি ভাবচর্চার পথিকৃৎ ফয়েজ আলম একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। উপনিবেশি শাসন-শোষণ আর তার পরিণাম, রাষ্ট্র ও সমধর্মী মেল কর্তৃক ব্যক্তির উপর শোষণ-নিপীড়ন ও ক্ষমতার নানামুখি প্রকাশ আর এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন তিনি। বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের নয়াউপনিবেশি আর্থ-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর রাষ্ট্র ও স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর শোষণচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার লেখা আমাদের উদ্দীপ্ত আর সাহসী করে তোলে। রুহানিয়াত সমৃদ্ধ দার্শনিক ভাবচর্চা আর সাহিত্যিক-রাজনৈতিক তত্ত্বচর্চাকে একসাথে কবিতার দেহে ধারণ করতে সক্ষম ফয়েজ আলমের সহজিয়া কবিতা। তার কবিতায় তিনি মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তার কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার যোগীরনগুয়া গ্রামে। বাবা মরহুম শেখ আবদুস সামাদ, মা সামসুন্নাহার খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ পাশ করার পর প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য এমফিল. ডিগ্রী লাভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ব্যক্তির মৃত্যু ও খাপ-খাওয়া মানুষ (কবিতা, ১৯৯৯); প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি ( গবেষণা, ২০০৪); এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজম (অনুবাদ, ২০০৫); উত্তর-উপনিবেশি মন (প্রবন্ধ, ২০০৬); কাভারিং ইসলাম (অনুবাদ, ২০০৬), ভাষা, ক্ষমতা ও আমাদের লড়াই প্রসঙ্গে (প্রবন্ধ, ২০০৮); বুদ্ধিজীবী, তার দায় ও বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব (প্রবন্ধ, ২০১২), জলছাপে লেখা (কবিতা, ২০২১), রাইতের আগে একটা গান (কবিতা, ২০২২); ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (প্রবন্ধ, ২০২২)।
View Posts →
কবি ও গল্পকার। যুক্ত আছেন চারবাক সম্পাদনা পরিবারের সাথে।
View Posts →
কবি। জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়।
View Posts →
প্রাবন্ধিক। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। বর্তমানে প্রান্তীয় কৃষক-মধুচাষি, বেতবাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন নিয়ে কাজ করছেন।
View Posts →

সম্পূর্ণ লেখক তালিকা

শ্রদ্ধাঞ্জলি- খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষ

খোন্দকার আশরাফ হোসেনের সম্ভবত অষ্টম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘আয়(না) দেখে অন্ধ মানুষ’। গ্রন্থটির এই নামের প্রথম শব্দটির প্রথম বন্ধনিটি তুলে দিলে দেখা যায় নামটিতে চারটি শব্দ রয়েছে। আবার বন্ধনির শব্দটি আলাদা করে গুনলে নামটিতে পাঁচটি শব্দ রয়েছে। এই চারটা বা পাঁচটা সবকটাই বেশ সোজাসাপ্টা গোছের শব্দ। কিন্তু এই সোজাসাপ্টা গোছের শব্দ কয়খানাই নামের অর্থখানাকে বেশ বাঁকাচোরা করে রেখেছে।

প্রথম ধাক্কায় নামখানাকে কানের মধ্যে কবিতার বইয়ের নাম বলে ঠেলে পাঠালেও সত্তুরসনা কান মেয়াছাহেবি মন্তব্যসহ ফেরত পাঠায়-‘বাবারে এর মধ্যে নাম কোথায়-এতো একখানা আস্ত কথা’। পরের ধাক্কায় নাম হিসেবে হেফজ করে নিলেও এবার কানমাথা দুয়ে মিলে বেশুমার বেকায়দায় পড়ে যায় এ নামের অর্থ খুঁজতে গিয়ে। একেবারে বেসম্ভব নাম। মাথা ধরতে গেলে অর্থখানা লেজে গিয়ে ভর করে; আর লেজ বাগে আনতে গেলে অর্থখানা মাথায় গিয়ে চড়ে ওঠে।

‘আয়(না) দেখে অন্ধ মানুষ’। একটু লয় সহ পড়ে ফেললে হয়-‘আয় না দেখে অন্ধ মানুষ’। আহ, কি পরিষ্কার অর্থ-‘চল, অন্ধ মানুষ দেখে আসি’। কিন্তু কি তেলেসমাতি! লয়খানা একটু পাল্টে দিলেই হয় ‘আয়না দ্যাখে অন্ধ মানুষ’। কি মুসিবৎ। এবারের অর্থ অনুযায়ি অন্ধ মানুষ নিজেই দেখতে শুরু করেছে, তা-ও আবার মানুষ, গরু না। অন্ধ মানুষ আয়না দেখতে শুরু করেছে।
কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন তাঁর অষ্টম কাব্যগ্রন্থের নামপর্বটি অর্থের এই যে তেলেসমাতি দিয়ে শুরু করেছেন তা তিনি নামের মধ্যেই ক্ষান্ত করে চলে যাননি। তিনি এটা সাথে নিয়ে এগিয়েছেন। কাব্যগ্রন্থের নামের শব্দক’টি যেমন আলাদাভাবে পরিষ্কার সুনির্দিষ্ট অর্থ দেয়, তেমনি এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো ব্যষ্টিকভাবে স্বতন্ত্র ও পরিষ্কার অর্থ দেয়। অর্থাৎ কবিতার পক্ষে অর্থ যতটা পরিষ্কার দেয়ার দায় আছে এ বইয়ের কবিতাগুলো সেই দায় যথেষ্ট দায়িত্বশিলতার সাথে পালন করে। কিন্তু সেই কবিতাগুলো একত্র হয়ে সামষ্টিকভাবে আমার যাপিত জীবনের যে বাস্তবতা প্রকাশ করে সে বাস্তবতার রূপ নির্দিষ্ট করতে গেলে আমি পাঠক আবার বইয়ের অর্থ নিয়ে যেমনটা হতবুদ্ধি অবস্থায় পড়েছিলাম তেমনটাই চোখ-কান-মাথা সব নিয়ে আবার দিশেহারা হয়ে পড়ি। বাস্তবতার সে স্বরূপে আমি দর্শক ও আমার দৃশ্যের মধ্যকার বিভেদরেখাটি অনির্ণেয় হয়ে ওঠে। এ কবিতাসমূহের দৃশ্যপটে আমি দেখি মানুষ-মানবতা-মননের ভীষণ অন্ধকারের অন্ধ এক জগৎ পদস্পর্শের ভূমিবিন্দু থেকে দিকচক্রবাল জুড়ে বিস্তৃত হয়ে আছে। আবার পরমুহূর্তেই মনে হয় অন্ধ ও অন্ধত্ব আমার দৃশ্য নয়। বরং কবিতাগুলো আমাকে দেখাচ্ছে যে, আমি নিজেই এক অন্ধ দর্শক। আয়না দেখছি। মানে কিছুই দেখছি না। কিংবা শুধু অন্ধের এক প্রতিরূপ দেখছি।

দেখার এই বিভ্রম বা ব্যাধি বিষয়ে পাঠক-দর্শক সচেতন হয়ে ওঠার আগেই কবিতার আমি-রূপ দর্শক চেয়েছিলেন ব্যাধিটি আগেভাগেই সারিয়ে নেয়া যায় কিনা। তাই গ্রন্থের প্রথম কবিতায় দেখি তিনি সোজা আই হসপিটালে উপস্থিত হয়েছেন এবং ভণিতা ছাড়াই শুরু করেছেন-
আমার চোখে কী হয়েছে ডাক্তার, কেন আজকাল
মানুষের মুখ দেখে বুঝি না
কে পথিক, কে পথের ঠিকাদার
কে নাবিক, কে জলের ঢেউ গুনে পয়সা তোলে,
কার গোয়ালে কে দেয় ধুয়া, কার সাজানো বাগানে
কে তোলে অনিন্দ্য হর্ম্য, কোন্ নেপোয়
মেরে যায় কোন্ কালাচাঁদের দই।
(আই হসপিটাল)

এই ব্যাধিগ্রস্ত চোখের মারফত পাঠানো সিগন্যাল তাঁর মস্তিষ্ককে যন্ত্রণায় ফেলে দেয়। সেই যন্ত্রণার কথাই তিনি তাঁর আই হসপিটালের ডাক্তারকে বলেন-
আমি বুঝি না, আমাকে কে বোঝাবে কেন এখনও
বাইশতলা কংক্রিটের মাথার ওপর ঝুলে থাকে চাঁদ
যেন ভাঙা রঙের মাথায় কেউ ঝুলিয়ে রেখেছে
অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি।
(আই হসপিটাল)

এই ব্যাধিগ্রস্ত চোখের সিগন্যালে তাঁর বিকারগ্রস্ত মস্তিষ্ক দেখে-
বুড়ি চাঁদ ভিখিরির শূন্য বাটি হাতে
নক্ষত্রের খুচরো পয়সাগুলোর দিকে চেয়ে থাকে
(আই হসপিটাল)

কবিতার ‘আমি’র এই দৃশ্যবির্পযয়ে ভেঙেচুরে একাকার হয় কালেকালে গড়ে ওঠা কবিসুলভ কমনিয় অনুভবের অনেক বালাখানা। রবীন্দ্র-অনুভবের বালাখানায় যে কবির বাস ‘তারা কেবলই হাসে কেবলই গায়/ হাসিয়া খেলিয়া মরিতে যায়’। কিন্তু এই অনুভবের বালাখানা বক্ষ্যমাণ কবিতার বাস্তবতার রাজ্যে গড়ে ওঠে না। বরং এই বাস্তবতায় যাদেরকে দেখা যাচ্ছে ‘তারা কেবলি কাঁদে, কাঁদিয়া কাঁদিয়া/ ঘুমাতে যায়’। তাদের কান্নাও এতো বোধশূন্য ও মনুষ্যেতর জন্তুসুলভ যে সে কান্না তাদেরকে কোনো করণিয়ের দিকে তাড়িত করে না বরং বোধহীন ঘুমের নিষ্ক্রিয়তার দিকে চালিত করে।

কবিতার ‘আমি’ এই বাস্তবতার মাঝে দাঁড়িয়ে বুঝে উঠতে পারছেন না তার এই বিপন্ন অবস্থা কার হাতে টেনে আনা সর্বনাশ! এই সর্বনাশ কি তাঁর ভীষণ জীবন-বাস্তবতার নির্মাণ না-কি তাঁর আত্মবিনাশি অসুস্থ চোখের সৃজন? তাই কবিতার শেষ বাঁকে তিনি শেষবারের মতো বলছেন-
ডাক্তার, ফিরিয়ে দিন আমার চোখ দুটো।

কিন্তু তিনি তার পুরনো চোখ ফিরে পাননি। কারণ, সমস্যাটি হয়তো তাঁর চোখের নয়। সমস্যাটি তাঁর চতুষ্পার্শ্বে বেড়ে ওঠা সর্বগ্রাসি বাস্তবতার। তাই পরবর্তি কবিতাগুলোয়ও তিনি দেখেন এবং আমরা দেখি একই চিত্র, একই বাস্তবতা। আমরা দেখি আয়ু কিভাবে এক অসহায় সঙ রূপে তাঁকে কান ধরে টানছে তাঁর সার্কাসের মতো জীবনের মঞ্চ জুড়ে। ‘দুপায়ে দুরকম জুতা’ পরে হাঁটছেন, চশমায় যা দেখছেন লিখছেন তার উল্টো, টুথপেস্ট ভেবে ব্রাশে শেভিং ক্রিম মাখছেন। শখের হাঁড়িতে যা পুষছেন বিস্ফারিত চোখে দেখছেন তা যে এক ‘কেউটে সাপের বাচ্চা’। ‘ভালোবাসার ধন’ জ্ঞানে যা গভীর দরদে আঁকড়ে ধরছেন আহত দৃষ্টিতে দেখছেন সে তো মাত্র ‘অন্যের ফেলে যাওয়া হার্ট’। আঁতকে উঠে চাওয়া-পাওয়ার নিকাশে দেখেন ‘হট্টগোলে পড়ে পাওয়া চোদ্দআনা সামলাতে গিয়ে’ হারিয়েছেন ‘হাজার টাকার মূলধন’ (আবার আসতে পেলে যা যা করবো (না) তার তালিকা)। দেখে দেখে এই নিকাশে এসে তাঁর চোখ ও অন্ধকার বাস্তবতার দৃশ্য যোগেমিলে গঠন করে এক অবাস্তব যৌগ-
একসাথে হবো ছুরি আর ক্ষতের মলম
জিহবা থাকবে দুটো, ফেলে আসবো অপ্রসন্ন কলমের ভার
প্রেমে হবো চতুর কৃষ্ণ, যুদ্ধক্ষেত্রে মিথ্যুক অর্জুন
আবার আসতে পেলে তোমাদের মিথ্যেবাদী বিদ্যালয়ে অনাচার্য হবো।
(আবার আসতে পেলে যা যা করবো (না) তার তালিকা)

কবিতার ‘আমি’র মধ্য দিয়ে কবিতার আয়নায় দেখা এই জীবনরূপের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট হতে থাকে আমাদের দেখা জীবনটি আমাদের অনুভবে কতখানি না-দেখা থেকে যাচ্ছে। বিস্ময় জাগতে থাকে আমার যাপিত জীবনকে দেখতে গেলে কি এক ধন্দে পড়ে যেতে হয়। ধন্দে পড়তে হয় এবং স্পষ্ট হয় না-অন্ধে আয়না দেখছে, নাকি, আয়নায় অন্ধ দেখানো হচ্ছে।
কাতর শূন্যতায় ও বিষন্নতায় এক সময় কবিতার ‘আমি’ আহবান জানায় আর এক কবিকে-কবি সুনীল গাঙ্গুলীকে-
কী দেখাবে? তার চেয়ে চল ফিরে যাই
দুজনের ব্যর্থতার নাও ঠেলে ঠেলে
কণ্ঠে নিয়ে কলমিলতার নম্র শোক উচ্চারণ
“একটি স্বপ্ন ছিল ঘুগরে পোকার
একটি গানের কণ্ঠ ছিল ছোট্ট ঘুগরে পোকার
আমি তাকে হারিয়ে ফেলেছি”। (নাদেরালি)

সেই স্বপ্ন হারিয়ে যে স্বপ্নসুখ এই ওয়েস্টল্যান্ডে আজ চলছে তার দিকে তাকিয়ে কবিতার ‘আমি’র উচ্চারণ-
আমাদের সময়তো টেবিলে সাজানো কেক, আমাদের সুখ
নিপাট ইস্পাত ছুরি, চাক চাক কেটে নিই, রক্তপাতহীন
এক অভ্যুত্থান ঘটে যায় শূন্যতার ভীষণ উদরে
পতাকা উড়িয়ে আসে দুঃখগুলো, চায়ের বাটিতে
শব্দ শুনি, হুহু করে কেটে যায় ট্রেন-
(আলবিদা)

এই চোখ নিয়ে, এই অনুভব নিয়ে এবং নিপাট ছুরির মতো জীবনের সুখ নিয়ে কবিতার ‘আমি’কে দেখতে হয় সাদা ও সুশোভনকে ঘিরে মানবের সকল আকাক্সক্ষাকে মানবের জন্মপাপের কৃষ্ণ ত্বক কিভাবে বেদনার অন্ধকারে গিলে নেয়-
আমি একজন কালো যিশুর প্রতিকৃতি খুঁজছিলাম
ওরা শ্রীকৃষ্ণের মতো এক ঘনশ্যাম কবির মৃতদেহ
উপহার দিয়ে বললো, এ মূর্খ অমৃতের ভাগ চেয়েছিল
আমরা ওকে মৃত্যুর হিস্যা বুঝিয়ে দিয়েছি
(কালো বাইবেল)

সাদা ও সুশোভনের আকাক্সক্ষায় ললাটনির্দিষ্ট এই হিস্যাহীনতার জীবনে মানবকে কিটপতঙ্গও পরিহাস করতে ছাড়ে না-
টিকটিকি
আমাকে শেখায় স্থির দেয়ালের শুভ্রতার কথা
এমনকি শুঁয়াপোকা ছন্দায়িত নাচের ইস্কুলে
প্রধান শিক্ষক
(পথ নয় পথিক)

জীবনে সাধ ও কল্পনার মূর্ত অংশের এমন মৃত্যুতে এবং বিমূর্ত অংশের উল­ম্ফ মুক্তিতে কবিতার ‘আমি’ অর্জন করেন এক অবিমিশ্র স্পর্ধা-
দীঘল ঐ পুরুষ আমাকে তাঁর বিশাল জোব্বার
ভেতর থেকে অবিমিশ্র স্পর্ধাটুকু দিলেন
(পূর্বপুরুষ)

এই স্পর্ধা নিয়ে উল­¬ম্ফ কল্পনায় বিখ্যাত কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্যের হাত দিয়ে তিনি আঁকেন তাঁর দেখা বাংলাদেশ-
একসার
বাইকের ছুটন্ত চাকা আঁকুন
কিন্তু কোনো সওয়ারি থাকবে না;
আঁকুন একটি ভাতের শূন্য হাঁড়ি;
আঁকুন স্মিতহাস্য বিপুলবদন কিছু তৃপ্ত বশংবদ
তাঁদের সামনে ধরা ডজনখানেক মাইক্রোফোন;

এক জোড়া খাঁচাও আঁকুন, যেখানে নিজেদের
থাবার নখর চাটছে দুইটি বাঘিনী।
(আর্ট গ্যালারি)

দুই বাঘিনির নখরে বিক্ষত মাতৃভূমিকে কবিতার ‘আমি’ চোখের যে স্পর্ধায় দেখেন, জীবন চরাচরকে দেখতে তাঁর সে স্পর্ধা আরো বেপরোয়া ও বিদ্রোহি হয়ে ওঠে। জীবন চরাচরকে তিনি দেখতে প্রয়াস পান প্রমিথিউসের অগ্নিচোখে। জীবন চরাচরের নিয়ন্তার প্রতি তাই তাঁর বাক্যের রোষানল-
তোমার কাছে চেয়েছিলাম জীবন জিজ্ঞাসার উত্তর
তুমি আকাশ থেকে ভয়াল শব্দে ছুঁড়ে দিলে
দুই খণ্ড পাথর
দশটি নিষেধ দিলে, চেয়েছিলাম পিপাসার জল
রক্তের কম্বল দিলে, চেয়েছিলাম মিলনের হাত
তীব্র দ্রংষ্টার ঘায়ে আমাকে ঝুলিয়ে রাখলে
দুই পাশে দু’জন তস্কর!
(প্রমিথি)

স্পর্ধার এই সকল উচ্চারণ যখন নিষ্ফল আস্ফালনের বাইরে আর কোনো অর্থ দাঁড় করায় না তখন দ্রষ্টা তাঁর অভিশপ্ত চোখের সাথে নিজেকেই অভিশাপ দিতে শুরু করেন-
আমি মন্দ ঋণ আমি ব্যাড ডেট আমি অচল নোট
আমাকে বাতিল করে দাও
– – –
আমাকে বাদ দাও আমি মন্দ ঋণ ব্যাড ডেট তোমাদের
সকল প্রপঞ্চ থেকে রাইট অফ করে দাও- বেগায়রে হিসাব।
(রাইট অফ)

আত্মগ্লানির সকল খেদের সাথে কবিতার ‘আমি’ উচ্চারণ করেন-
সমস্ত দিন তিনমাথাওয়ালা জীবনের সঙ্গে
পাঞ্জা লড়তে হয় বলে আমাদের বাহুগুলো বেশ শক্ত
কালো মেঘের পেছনে ঐইতো একমাত্র
রুপালি সূতার রেখা!
ছুটে আসা ষাঁড়ের শিঙে লাল রুমালের ফালি
বাঁধতে গিয়ে পা হড়কালে অন্তত আমাদের হৃদপিণ্ডটা
এফোঁড় ওফোঁড় হয়নি বলে
ভাগ্যকে বলি ধন্যবাদ।
– – –
আমরা অচিন পৃথিবীর মানুষ, আপনারা আমাদের
চিনবেন না, একই গ্রহে
আমাদের দোলনা ঝোলেনি,
আর আমাদের কবর সে-ও হবে অনেক দূরে
আপনাদের পা কাদাজলের সে তল¬াটে না পড়াই ভালো।
(অচিন পৃথিবী থেকে বলছি)

নিজেকে অচিন এই পৃথিবীতে সরিয়ে নিয়ে যখন কবিতার ‘আমি’ সকলের চেনা পৃথিবীর দিকে তাকান তখন মনে হয় তিনি এই যাপিত জীবনে দেখছেন বানিয়ানের পিলগ্রিমের দেখা মেলার মতো এক বাণিজ্যমেলা। সকলে সেই মেলার দিকে ছুটছে-
গাড়ির পাছার লাল আলোগুলো বাণিজ্যমেলায় যাচ্ছে
শাড়ির পাড়ের সাদাকালোগুলো বাণিজ্যমেলায় যাচ্ছে
ফ্রেঞ্চকাট দাড়িগুলো পোকাখাওয়া মাঢ়িগুলো
বাণিজ্যমেলায় যাচ্ছে
জমেছে বেচা ও কেনা মিলেছে বোঁচা ও কানা
তিল থেকে তালকরা বেতালবিংশতি সব
বাণিজ্যমেলায় যাচ্ছে
(ট্রেড ফেয়ার)

আর এই বাণিজ্যমেলার সকল পসরা ও পসার যাঁর একচেটিয়া বাণিজ্যিক স্বত্ব, যিনি চাইলে ‘নীল আকাশটার গা থেকে জামা খুলে’ পরিয়ে দিতে পারেন ‘লাল আঙরাখা’ এবং যিনি বললে নদিটা ‘তিন পাক ঘুরে’ তাঁর ‘আলিশান বারান্দার পাশ দিয়ে বয়ে যেতে’ পারে; তাঁকে বোঝানোর জন্য একটিমাত্র শব্দকে জুৎসই মনে করা হয়েছে। শব্দটি হলো ‘পাওয়ারফুল’। এই পাওয়ারফুলের দিকে গোল গোল মার্বেলপাথরের চোখে তাকিয়ে তিনি বলছেন-
হে পাওয়ারফুল তোমাকে পাওয়ার জন্য আমাদের
পাওয়ার হাউজগুলো মোরাকেবায় বসেছে; তোমার ভয়ে ডানার
রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলেছে চিল;
(পাওয়ারফুল)

এই পাওয়ারফুলের হাতে রচিত হচ্ছে মানুষের মহাপ্রয়াণ। সেই রচনার পালা অন্ধ কিংবা অসুস্থ চোখে আয়নায় দেখা কবিতার ‘আমি’র শেষ দৃশ্য। তিনি দেখছেন-
কারা যেন দিগন্তে দিগন্তে পীতবর্ণ নিশান পুতছে
আর হাঁকছে, মানুষের দিন গেছে গো, এবার
নুড়ি ও পতঙ্গের পালা, রামশালিক
আর কাঠকয়লার দিন

তিনি দেখছেন ও শুনছেন পাওয়ারফুলরা হাঁকছে-
মুছে দাও মানুষের পদচিহ্ন, তার হাতের সকল কারুকাজ
হৃদয়ের অক্ষরবিন্যাস, তার কাব্যইতিহাস
মানুষ নামের ব্যর্থ ভাস্করতা বামিয়ান বুদ্ধমূর্তির মতো
ধূলায় বিচূর্ণ করে ছুঁড়ে দাও ঈশ্বরের মুখে

স্বল্পায়তন কাব্যগ্রন্থখানির ছোট ছোট কবিতার ফালি ফালি জমিন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাস্তবতার এই জীবনরাজ্যটি কবিতার ‘আমি’ দেখেছেন বলে দেখা যায়। দেখা যখন শেষ হয় তখন পুরনো প্রশ্নটি আবার এসে হাজির হয়। কি দেখলেন, কে দেখলেন, কাকে কে কি দেখালেন? কি দেখলেন অন্ধ মানুষ কিংবা কে দেখলেন অন্ধ মানুষদেরকে? যিনি দেখলেন ও দেখালেন তিনি অন্ধ, নাকি, যাদেরকে দেখালেন তারা অন্ধ? যিনি এভাবে দেখলেন অন্ধ বলেই কি তিনি এভাবে দেখলেন? দৃষ্টিহীন চোখের সামনে কল্পনার আয়না ধরতে পারার যোগ্যতায়ই কি কেউ এই অবিশ্বাসের রাজ্যটি দেখাতে পারলেন? না-কি, এই দর্শক বা দ্রষ্টা আদপে অন্ধই নন? কিংবা ইঙ্গিতটি কি এই যে যাদেরকে অর্থাৎ যে জনতাকে দৃশ্যরূপে দেখানো হলো তারা কতখানি অন্ধ কবিতার ‘আমি’ তা-ই শুধু দেখাতে চান?

কবি কি দেখাতে বা বলতে চান যে অন্ধ বলেই এতক্ষণ ধরে দেখাতে থাকা দৃশ্যরূপ কবির চতুষ্পার্শ্বের জনতা কখনো দেখতে পারলো না যে তারা কতখানি অন্ধ? এইসকল প্রশ্নের অমিমাংসায় কাব্যিক রহস্যটুকু অবগুণ্ঠিত রেখেই কবি শেষ করেন তাঁর দৃশ্যায়ন; আর আমাদের শুরু হয় অন্ধত্বের নবায়ন। কারণ আমরা কি পেরেছি ঈদিপাসের মতো পুরনো চোখদুটিকে দু’হাতে উপড়ে এনে ছুঁড়ে ফেলে নতুন চোখে দেখা শুরু করতে?

ঈদিপাস জোকাস্টার পোশাকের পিন দিয়ে দু’হাতে উপড়ে ফেললেন তাঁর চোখ। এবার তিনি দেখতে শুরু করলেন সত্য। যে সত্যকে দেখার জন্য নাটকের শুরু থেকে তাঁর উদগ্র আকাক্সক্ষা সে সত্য যখন তার ভয়াবহ উজ্জ্বলতা নিয়ে ঈদিপাসের সামনে হাজির হলো তখন সেই উজ্জ্বলতাকে ধারণ করতে গিয়ে ঈদিপাসকে হারাতে হলো তাঁর মানবরূপি সিমাবদ্ধতার দুর্বল চোখ-উপড়ে ফেলতে হলো তাঁর ক্ষিণদৃষ্টির মানবচোখ। মানবচোখ হারানোর মধ্য দিয়েই খুলে গেল তাঁর সত্যদর্শি দিব্য-চোখ। এবার তিনি দেখতে পাচ্ছেন ভবিষ্যৎ-দেখতে পাচ্ছেন থিবিসের পরবর্তি রাজা কে হবেন সেই ভবিষ্যগর্ভের দৃশ্য। কলোনাসে তাঁর অজান্তেই তিনি হয়ে দাঁড়ালেন রাজপুত্র ইটিওক্লেস ও পলিনেইসিসের বর বা আশির্বাদ লাভের কেন্দ্র ও আশ্রয়।

দৃষ্টির এই দৈব-স্বচ্ছতার স্বল্প হলেও অর্জিত হয়েছে খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষের। তিনি অন্ধ হয়েছেন মানে আমাদের জ্বরাগ্রস্ত চোখকে উৎসর্গ করে জ্বরাহীন স্বচ্ছ চোখে দেখার শক্তি অর্জন করেছেন। আমাদের রোগ ও বিকারগ্রস্ত চেতনার আলোয় ও দৃষ্টিতে দেখা দৃশ্যগুলো তাই এভাবে পাল্টে যাচ্ছে বিকারগ্রস্ত দৃষ্টি থেকে মুক্ত খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষের সত্যদর্শি দৃষ্টিতে। দৃষ্টিকে বিভ্রমমুক্ত করতে পারার সুবাদে খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষ দেখতে পাচ্ছেন আজকের সর্বব্যাপি নষ্ট আলোতে আদর্শিক ও ঐতিহ্যিক সবকিছু কিভাবে হারিয়েছে সকল প্রভা, সকল আলোর দিশা।

আমরা যাকে দেখছি পথিক, খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষ দেখছেন সে পথিক নয়; আমরা যাকে দেখছি পথদ্রষ্টা, তিনি তাকে দেখছেন পথ হারানোর হোতা (আই হসপিটাল)। তিনি দেখছেন পথিকের পথিক সাজার ভান, তিনি দেখছেন পথদ্রষ্টার পথের কপটতা; আর সেইসবের সাথে দেখছেন আমাদের অন্ধত্ব, আমাদের সচক্ষু অন্ধত্ব-আমরা অ-পথিককে কিভাবে পথিকরূপে দেখছি কিংবা পথদিশারির কপটতাকে না-দেখে কিভাবে আমরা ফাঁদে পড়ছি। এসবই আমাদের দৃষ্টির ঊর্ধ্বে উঠে দেখতে পাচ্ছেন খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষ। কারণ, অন্ধরূপ তাঁর এই কবিসত্তা ঈদিপাসের মতো ট্রাজিক যন্ত্রণাভোগের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছে দৃষ্টির স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভেদি ক্ষমতা, তাঁর বিমোক্ষণ ঘটেছে দৃষ্টির ক্লেদজনিত সকল অস্বচ্ছতা থেকে ও কলুষতা থেকে।

খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষ দেখতে পান সনাতন সুন্দরের সত্তা চাঁদ আজকের এই ওয়েস্টল্যান্ডের নষ্ট ও বিকারগ্রস্ত চেতনার রাজ্যে কিভাবে ‘ভাঙা রডের মাথায়’ ‘এ্যলুমিনিয়ামের হাঁড়ি হয়ে ঝুলছে’ (আই হসপিটাল)। তিনি দেখতে পান এই ওয়েস্টল্যান্ডে ঈশ্বরের আশির্বাদ পর্যন্ত কিভাবে ক্লাসিক মশ্করা রূপে নাজিল হয়। তিনি দেখেছেন প্রার্থনা ছিল ‘মিলনের হাত’-এর জন্য, অথচ প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ হাত ঈশ্বরপুত্রেরই প্রাপ্তি জুটলো দুই পাশে দুইজন তস্করের মাঝে ক্রুশে ঝুলে যাওয়া (প্রমিথি)। তিনি দেখতে পান আমাদের জল¬াদি সুখগুলো ‘ইস্পাতের ছুরি’ হয়ে কিভাবে ‘চাক চাক কেটে নিচ্ছে’ আমাদের সময়টুকু-অর্থাৎ আমাদের জীবনটুকু (আলবিদা)। খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষ এইসব দেখতে পান এবং আরও দেখতে পান আমাদের সচক্ষু অন্ধত্বকে।

খোন্দকার আশরাফের এই কাব্যের চিত্রায়নে আমরাও অন্ধ, কিন্তু সে অন্ধত্ব ঈদিপাসের ট্রাজিক যন্ত্রণার বিমোক্ষণের মধ্য দিয়ে দৃষ্টি-শুদ্ধিতার এবং দৃষ্টি স্বচ্ছতার লক্ষ্যে অর্জিত মানবচোখ উপড়ে ফেলার অন্ধত্ব নয়। আমরা অন্ধ হয়েছি আমাদের আধ্যাত্মিক জ্বরায়-আমাদের চেতনার বিকারগ্রস্ততায়। আমরা অন্ধ হয়েছি যাতে ‘বিপুলবদন কিছু তৃপ্ত বশংবদ’ হয়ে উঠতে গিয়ে, কিংবা তাদের সামনে ‘ডজনখানেক মাইক্রোফোন’ ধরতে গিয়ে এই দৃশ্যের ক্লেদ দর্শনের যোগ্যতা আমাদের চোখের না-থাকে এবং আমরা যাতে এ কাজে বিবেকের বাঁধায় না-পড়ি। আমরা অন্ধ হয়েছি যাতে আমাদের জল¬াদি সুখগুলোর ‘নিপাট ইস্পাত ছুরি’ কিভাবে আমাদের জীবনকে চাক চাক কেটে নিয়ে গিলে খাচ্ছে তা দেখে ফেলতে না পারি এবং আধ্যাত্মিক সুখ ও চেতনার আলোও দেখে উঠতে না-পারি।

আর অপরদিকে, খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষটি অন্ধ ঈদিপাস কিংবা টাইরেসিয়াসের মতো একজন। তাঁর চোখ নেই, তবে আমাদেরকে অর্থাৎ আমাদের মতো চোখওয়ালা অন্ধদেরকে তিনি মানবচোখ-হারানো দিব্য চোখের আলোতে দেখেন। খোন্দকার আশরাফের বক্ষ্যমাণ কাব্যের কবিতা আমাদের যাপিত জীবন জুড়ে এভাবে আমাদেরকে দেখায়, আমাদের চোখওয়ালা অন্ধত্বকে দেখায়। এখানে আমরা যে আয়না দেখছি সে আয়নায় ভেসে উঠছে আমাদের যাপিত জীবনের রূপ-আমাদের বিকারগ্রস্ত চেতনার অন্ধত্ব। আর এই আয়না যাঁর, যিনি আয়নায় আমাদেরকে দেখাচ্ছেন, তিনি খোন্দকার আশরাফের অন্ধ মানুষ-ঈদিপাস কিংবা টাইরেসিয়াস। তিনি জ্বরাগ্রস্ত আমাদের ওয়েস্টল্যান্ডিশ চোখকে উপড়ে ফেলে দেখতে পাচ্ছেন আমরা কত অন্ধ।

খোন্দকার আশরাফ যখন ডাকছেন-আয়(না) দেখে অন্ধ মানুষ-অর্থাৎ চলে আয় দেখে আসি অন্ধ মানুষ-তিনি তখন হয়তো ডাকছেন আমাদেরকে এই দুই অন্ধ দেখাতেই। একদিকে সত্যদ্রষ্টা অন্ধ ঈদিপাস কিংবা টাইরেসিয়াস, অন্যদিকে সত্য দেখার চোখ-হারানো অন্ধ আমরা। একদিকে খোন্দকার আশরাফ, অন্যদিকে তাঁর চতুষ্পার্শ্ব।

শেয়ার করুন: