উত্তরের চেয়ে প্রশ্নটাই গুরুত্বপূর্ণ অনেকসময় চিন্তাজগতে। বিপ্রতিব, নৈর্ব্যক্তিক জীবনের জন্য প্রয়োজন প্রচল ধারা ভেঙে সংগুপ্ত আকাক্সক্ষাগুলোর পরিস্ফুটন ঘটানো। নিমগ্ন আত্মকেন্দ্রিক অথর্ব ভোগবাদি জড় চেতনার বাইরে নিজেকে আবিষ্কার, প্রতিরোধি দেয়াল গড়ে তোলার মানস, আপাত বিচ্ছিন্ন একরৈখিক বিষয়গুলো সাদা চোখে দেখবার-ভাববার বাসনা আমাদের অপ্রতিরোধ্য উদ্দমি স্বপ্নকে কিছুটা এগিয়ে দিয়েছে। ভাবতে চাই বলতে চাই দেখতে চাই জীবনের প্রতিসাম্যে আয়নায় অস্পষ্ট অক্ষরগুলো, দাগ কেটে কেটে আতশ কাচে আপাত সম্ভাবনাস্বপ্ন। বিরোধিতার জায়গাগুলো স্পষ্ট হওয়া দরকার। আসলে লড়াইটা কার বিরুদ্ধে?? শ্রেণিহীন স্বপ্নরাজ্য, সাম্য-বঞ্চনা একরৈখিক উগ্র পুঁজিবাদি আখ্যান-গল্পের গোলক ধাঁধায় পরাস্ত, সমরক্লান্ত। বৈশ্বিক বিনাশি মন্ত্র সবগুলো দরজা একে একে রুদ্ধ করে দিয়েছে, লা-জবাব। জবাবহীন সময়ের ক্লান্ত সৈনিক আমরা বলবার ভাষা ভাববার বেদনা হৃদয়ের কান্না হারিয়েছি। বহুরৈখিক ঈশ্বরের অদৃশ্য হাত এখন সর্বব্যাপি। প্রতিনিয়ত সাধারণ মনন পরাজিত পরাহত বেদনাক্লান্ত। নিজস্ব অবস্থান বোধ ও বোধি প্রায়শই প্রতারিত, বোবাকান্নায় নিমজ্জিত। বলবার ভাষা চুরি হয়ে গেছে, যা বলতে চাই যেভাবে বলতে চাই তা পারি না; কুহক অথবা মায়া এমনই আচ্ছন্ন ঘোর কাটে না কিছুতেই, পদে পদে স্খলন গঞ্জনা।
চিন্তাজগত কি কঠিন হয়ে গেল? বিশেষ করে বিপ্রতিব চিন্তা।
তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ অপার সম্ভাবনা মানুষকে কি আরেক ধাপ নিচে নামিয়ে আনল? চিন্তাশূন্য অথর্ব করে ফেলার সাম্রাজ্যবাদি আখ্যান পূর্ণতা পেল এই সময়ে এসে। দরজা চারিদিকে খুলে দেয়া হল, আলো আসুক আলো। কিন্তু আলোর সাথে সাথে মরিচিকা গোলক ধাঁধায় যে মনন ধাঁধিয়ে যাচ্ছে না তা কি হলফ করে বলা যাবে? আলো নয় নিঃসীম অন্ধকার সাম্রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছি আমরা ক্রমে ক্রমে। এত এত মিথ্যাচার সাম্রাজ্যবাদি প্রতারণাখেল বধির অন্ধ করে দিচ্ছে। ভোগবাদি জগত আগেই মানুষকে একাকি করে দিয়েছিল এখন করে দিচ্ছে নিঃস্ব পঙ্গু মননে চিন্তায়। রঙিন স্বপ্নের কর্পোরেট বিভোরতায় মগ্ন চারপাশ, নধর শরিরি আবেশতায় ফেরি করে স্বপ্নকুমারি, নিজেকেই যেন।
সস্তা মোহ সস্তা আকাক্সক্ষার কাছে হেরে যাচ্ছি আমরা। কর্পোরেট স্মার্ট পণ্যগার্ল, পণ্যবিক্রেতায় পরিণত করছি নিজেকে, হয়তো অজান্তেই।
‘সরলরেখা’ এইসব বিষয় ভাবতে চায়, ভাবনায় সঙ্গি চায়।
কঠিন হয়ে যাচ্ছে প্রকাশনা শিল্প। দুর্বৃত্ত শক্তির স্বদম্ভ পদচারণা, কাল টাকা, অশ্লিল বেহায়াপনা, পুঁজির অসম বিকাশ আগ্রাসন, নিয়ন্ত্রণ অনেক সম্ভাবনায় ছেদ টেনে দিচ্ছে। তারপরও আমরা আশাবাদি ‘সরলরেখা’ এগিয়ে যাবে নিজস্ব পথে, নিজস্ব বিশ্বাসে। চিন্তা করতে, চিন্তা উস্কে দিতে চায় ‘সরলরেখা’। বিপ্রতিব অপ্রচল সাম্রাজ্যবাদবিরোধি তথা জাতিয় ইস্যুতে। এ-সংখ্যার বিষয়-‘ভাষা, বিশ্বায়ন ও ক্ষমতা’। ভাষা মানুষের হৃদয়ের কান্না। ভাষা নিয়ে সাম্রাজ্যবাদি খেইল, বিশ্বায়ন খপ্পর তলিয়ে দেখা জরুরি। বিশ্বায়ন ও ক্ষমতানামা কিভাবে ভাষার উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে, ভাষাসাম্রাজ্যবাদিদের বিষয় আশয় খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি আমরা। পরবর্তি সংখ্যার বিষয়-‘কবি নির্বাসন অথবা প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র’। স্বচ্ছন্দে লেখা পাঠাতে পারেন, তবে অবশ্যই যুক্তিসম্পন্ন হতে হবে পাঠানো লেখা। কবিতা ছাপা হল না এ-সংখ্যায়। যাদের লেখা নিয়ে সূচনা সবাইকে ধন্যবাদ। অগণিত শুভানুধ্যায়ি যারা আমাকে ব্যতিব্যস্ত করেছেন সংখ্যা করার জন্য শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের।
নিভৃতচারি দার্শনিক, বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের প্রবাদপুরুষখ্যাত খালেদ চৌধুরী (প্রভু)-র মৃত্যুতে আমরা গভীর শোকাভিভূত। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড: রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস
বাংলাদেশ সীমান্তে সবচেয়ে বেশি মানুষ খুন করছে ভারত। ২০১০ সালে বিএসএফ সীমান্তে ৭৪ বাংলাদেশি নাগরিক খুন করেছে। পৃথিবীর অন্য কোন সীমান্তে প্রতিবেশি দেশের সীমান্তরক্ষির হাতে এত নাগরিক খুন হওয়ার নজির নেই। ২০০৯ সালে ৯৮ জন, ২০০৮ সালে ৬২ জন, ২০০৭ সালে ১২০ জন, ২০০৬ সালে ১৪৬ জন, ২০০৫ সালে ১০৪ জন, ২০০৪ সালে ৭৬ জন, ২০০৩ সালে ৪৩ জন, ২০০২ সালে ১০৫ জন, ২০০১ সালে ৯৪ জন বাংলাদেশি খুন হন বিএসএফ-এর হাতে। এ-সংখ্যা উদ্বেগজনক। সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হয়রানি ও অন্যান্য অন্যায় জুলুমের খবরও প্রায়শই পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। স¤প্রতি ফেলানি হত্যাকাণ্ড ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ও হয়রানি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ-ব্যাপারে সরকারের উচ্চ-পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে এটিই আমাদের কামনা।