এক. মধ্যপ্রাচ্য বিপ্লব তথা আরব জাগরণ তার বছরপূর্তি করেছে। যে ঢেউ একদিন তিউনেশিয়া থেকে মিশরে এসে আছড়ে পড়েছিল সেই ঢেউ এখন ‘অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট’ নাম নিয়ে পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলোতেও আঘাত হানছে। এটা হচ্ছে প্রতীচ্যকে প্রাচ্যের দেয়া প্রতিদান, তথা পশ্চিম প্রাচ্যকে যে রাজনৈতিক গণতন্ত্র দিয়েছিল সেই গণতন্ত্রের সঙ্গে সামাজিক সুবিচার ধারণা জুড়ে দিয়ে প্রাচ্য তাকেই আবার পশ্চিমে ফেরত পাঠিয়েছে নতুন মুক্তিদাতার চেহারা দিয়ে। সেই প্রভাব যে বাংলাদেশের গায়েও লাগছে, তা স্পষ্ট। এদেশের তরুণদের একটি অংশ ইতিমধ্যেই অকুপাই ওয়ালস্ট্রিটের সমর্থনে মিছিল সমাবেশ করেছে। ডিজ্যুস বিকৃতি ও বিরাজনীতিকরণ ষড়যন্ত্র তারুণ্যের যে অংশটিকে বিভ্রান্ত করে রাখতে চাইছে, তরুণদের সেই বিভ্রান্ত অংশটি শিগগিরই তার আচ্ছন্নতা কাটিয়ে দেশকে, দেশের মানুষ-সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতিকে বুঝতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।
দুই. এরইমধ্যে প্রতিবেশী দেশটির আগ্রাসন নবতর রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এখন বিশ্বের সবচেয়ে ‘রক্তাক্ত সীমান্ত’। কাঁটাতারের বেড়ার ওপর ফেলানী হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশী যুবককে নগ্ন করে পিটানোর ভিডিও এখন বিশ্বব্যাপী ধিকৃত হচ্ছে। তাছাড়া ভারততোষণ করতে গিয়ে বাংলাদেশ তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে এসে মুক্তিকামী জনগোষ্ঠীকে শুধু সন্ত্রাসবাদী বলে অভিহিত করছে না, বরং দখলদার শক্তির হাতে তাদের লড়াকুসেনাদের তুলেও দিচ্ছে। ট্রানজিট নামের করিডোর দিতে গিয়ে এখন ‘তিতাস একটি খুন হয়ে যাওয়া নদী’র নাম। ফারাক্কার পর তিস্তা এবং স¤প্রতি টিপাইমুখ: বাংলাদেশ সত্যি বিপন্ন। একইসঙ্গে আমাদের একশ্রেণীর রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী ও সরকারি উপদেষ্টাদের কেউ কেউ নিজের দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদেশের হয়ে কথা বলছেন। সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ নিশ্চুপ।
তিন. সামপ্রতিক দিনগুলোতে ব্লগ এবং সামাাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক বিকল্প ও প্রতিবাদী গণমাধ্যম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। কিন্তু এই স্বাধীন মাধ্যমটি এখন সরকারি নজরদারির শিকার। মূলধারা হিসেবে পরিচিত গণবিরোধী এবং দুর্বৃত্ত পুঁজি ও সাংবাদিকতার সংবাদমাধ্যম এই মুক্তসাংবাদিকতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের প্লাটফরমের গলা টিপে ধরতে সরকারকে উস্কানি দিচ্ছে। লক্ষ করা যাচ্ছে কোনও কোনও ব্লগ এরইমাঝে স্বেচ্ছা সেন্সরশিপে জড়িয়ে পড়েছে এবং যে ভাষায় কৈফিয়ত পেশ করা হচ্ছে যেমন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’, ‘সেনাবাহিনী’, ‘ধর্মীয় অনুভূতি’ ইত্যাদি-এসব মূলত ফ্যাসিবাদী প্রভুদেরই শিখানো বুলি। আমরা ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে মেরুদণ্ড সোজা রাখার আহবান জানাই।