004746
Total Users : 4746
Charbak magazine logo
sorolrekha logo

লেখক তালিকা

জন্ম. ২৩ নভেম্বর ১৯৭৫, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা বাগানে। সম্পাদনা করছেন ‘চারবাক’ ও ‘সরলরেখা’। যুক্ত আছেন সাপ্তাহিক সাহিত্য আড্ডা ‘শুক্কুরবারের আড্ডা’র সাথে। লিটল ম্যাগাজিন সংগ্রহ ও প্রদর্শন কেন্দ্রের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকাশিত গ্রন্থ: মায়াহরিণ, কাব্যগ্রন্থ ২০০৮, চারবাক, বুদ্ধিজীবীর দায়ভার, সম্পাদনা ২০০৯, সংবেদ, পক্ষ—প্রতিপক্ষ অথবা শত্রু—মিত্র, প্রবন্ধ ২০১০, চারবাক, নির্বাচিত চারবাক, সম্পাদনা ২০১১, চারবাক, নাচঘর, কবিতা, ২০১২, চারবাক, ভাষা সাম্প্রদায়িকতা অথবা সাম্রাজ্যবাদি খপ্পর, প্রবন্ধ, ২০১৩, চারবাক এবং মুখোশ, কবিতা, ২০১৬, চারবাক, করোনাকালে, কবিতা, ২০২২, চারবাক।
View Posts →
কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
View Posts →
প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ
View Posts →
বাংলাদেশের উত্তরউপনিবেশি ভাবচর্চার পথিকৃৎ ফয়েজ আলম একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, অনুবাদক। উপনিবেশি শাসন-শোষণ আর তার পরিণাম, রাষ্ট্র ও সমধর্মী মেল কর্তৃক ব্যক্তির উপর শোষণ-নিপীড়ন ও ক্ষমতার নানামুখি প্রকাশ আর এসবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখছেন তিনি। বিশ্বায়নের নামে পশ্চিমের নয়াউপনিবেশি আর্থ-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর রাষ্ট্র ও স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীর শোষণচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার লেখা আমাদের উদ্দীপ্ত আর সাহসী করে তোলে। রুহানিয়াত সমৃদ্ধ দার্শনিক ভাবচর্চা আর সাহিত্যিক-রাজনৈতিক তত্ত্বচর্চাকে একসাথে কবিতার দেহে ধারণ করতে সক্ষম ফয়েজ আলমের সহজিয়া কবিতা। তার কবিতায় তিনি মানুষের প্রাত্যহিক মুখের ভাষার প্রতি উন্মুক্ত। যে ভাষাকে আমরা ব্রাত্য বানিয়ে রেখেছি একেই তিনি জায়গা করে দিয়েছেন কবিতায়। তাই প্রচলিত কাব্যভাষা থেকে তার কবিতার ভাষা ভিন্ন। বিভিন্ন প্রবন্ধে তিনি এ ভাষাকেই বলেছেন মান কথ্যবাংলা, আঞ্চলিকতার বাইরে সর্বাঞ্চলীয় বাঙালির প্রতিদিনের মুখের ভাষা। কবিতাগুলো কখনো কখনো বিভিন্ন ধ্বনি ও শব্দে বেশি বা কম জোর দিয়ে কথা বলার অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করতে পারে, যেভাবে আমরা হয়তো আড্ডার সময় কথা বলি। এবং তা একই সাথে বক্তব্যের অতিরিক্ত ভাষারও অভিজ্ঞতা। খোদ ‘আওয়াজের সাথে ইশক’ যেন। প্রাণের আকুতি ও চঞ্চলতার সাথে তাই শূন্যতাও হাজির আছে। সেই সাথে জারি আছে ‘শব্দের দিলের ভিতরে আরো শব্দের আশা’। ফয়েজ আলমের জন্ম ১৯৬৮ সালে, নেত্রকোনা জেলার আটপাড়ার যোগীরনগুয়া গ্রামে। বাবা মরহুম শেখ আবদুস সামাদ, মা সামসুন্নাহার খানম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ পাশ করার পর প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণার জন্য এমফিল. ডিগ্রী লাভ করেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ: ব্যক্তির মৃত্যু ও খাপ-খাওয়া মানুষ (কবিতা, ১৯৯৯); প্রাচীন বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি ( গবেষণা, ২০০৪); এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজম (অনুবাদ, ২০০৫); উত্তর-উপনিবেশি মন (প্রবন্ধ, ২০০৬); কাভারিং ইসলাম (অনুবাদ, ২০০৬), ভাষা, ক্ষমতা ও আমাদের লড়াই প্রসঙ্গে (প্রবন্ধ, ২০০৮); বুদ্ধিজীবী, তার দায় ও বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব (প্রবন্ধ, ২০১২), জলছাপে লেখা (কবিতা, ২০২১), রাইতের আগে একটা গান (কবিতা, ২০২২); ভাষার উপনিবেশ: বাংলা ভাষার রূপান্তরের ইতিহাস (প্রবন্ধ, ২০২২)।
View Posts →
কবি ও গল্পকার। যুক্ত আছেন চারবাক সম্পাদনা পরিবারের সাথে।
View Posts →
কবি। জন্ম মৌলভীবাজার জেলায়।
View Posts →
প্রাবন্ধিক। অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। বর্তমানে প্রান্তীয় কৃষক-মধুচাষি, বেতবাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত লোকজন নিয়ে কাজ করছেন।
View Posts →

সম্পূর্ণ লেখক তালিকা

হারুকি মুরাকামি’র সাক্ষাৎকার

জন রে: আমি সর্বেশষ আপনার ‘আফটার দ্য কুয়াক’ পড়লাম এবং মুগ্ধতার সাথে লক্ষ্য করলাম যে, আপনি কীভাবে বেশ স্বচ্ছন্দচিত্তে গল্পগুলোতে বাস্তব ও পরাবাস্তবের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। একদিকে আপনার উপন্যাস ‘নরওয়েজিয়ান উড’ এর সাথে ‘হার্ড বয়েল্ট ওয়ান্ডারল্যান্ড’ এই দুইটি উপন্যাস কাঠামোর মধ্যে আপনি মৌলিক কোনো পার্থক্য খুঁজে পান কি-না জানতে চাচ্ছিলাম।
মুরাকামি: যদি আপনি আমার লেখার ধরন বলতে চান, তবে আমি মনে করি আমার লেখার স্টাইল ‘হার্ড বয়েল্ট ওয়ান্ডারল্যান্ড’ উপন্যাসের সাথে খুব মিল। আমি বাস্তববাদী ধরন খুব পছন্দ করি না। পরাবাস্তববাদী ধরনটাকেই আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু ‘নরওয়েজিয়ান উড’ লেখার সময় আমি মনস্থির করেছিলাম যে একটি শতভাগ বাস্তববাদী উপন্যাস লিখবো। আমার অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ছিলো।
জন রে: আপনি কি মনে করেন, ঐ বইটি পরীক্ষামূলক ছিলো আপনার জন্য না-কি কাহিনীর বাস্তবিক প্রয়োজনেই লিখতে হয়েছিলো?
মুরাকামি: আমি যদি পরাবাস্তববাদী উপন্যাস লেখতাম তাহলে একজন কাল্ট লেখক হিসেবে আমাকে গণ্য করা হতো। আমি চাচ্ছিলাম মূল-ধারায় ঢুকতে, দেখাতে যে আমি বাস্তববাদী ধরনে লেখতে পারি। সে কারণে ওটি লেখা হলো। বইটি জাপানে বেস্ট সেলার খেতাব পায় এবং আমি সেটা আশা করেছিলাম।
জন রে: তার মানে এটা ছিলো আপনার একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ।
মুরাকামি: তা বলতে পারেন। ‘নরওয়েজিয়ান উড’ বইটি অনেক সহজেই পড়া এবং বোঝা যায়। এটা অনেকেই পছন্দ করেন। তারা পরে অনেকেই আমার অন্য লেখার প্রতি আগ্রহ দেখান। তাই ঐ বইটা সাহায্য করেছিলো অনেক।
জন রে: তবে কি জাপানিজ পাঠকেরা আমেরিকার পাঠকদের মতো সহজ গল্প পড়তে পছন্দ করেন?
মুরাকামি: আপনি জানেন যে স¤প্রতি আমার ‘কাফকা অন দ্যা শোর’ তিন লক্ষ সেট কপি বিক্রি হলো, যা এখানে দুই খÐে প্রকাশিত। আমি খুব অবাক হলাম যে এটি এতো কপি বিক্রি হলো। এটা কোনো যেনতেন ব্যাপার নয়। কাহিনীটি বেশ জটিল ও সোজাসুজি লাইনে বোঝা মুশকিল। কিন্তু আমার গদ্যের ধরন অনুযায়ী এটি পড়তে সহজ। গদ্যের ভেতর কোথাও মজাদার কৌতুক মেজাজে আবার কোথাও অতি নাটকীয়তাও থাকে। এ দুটোর মাঝে একটি চমকপ্রদ বোঝাপোড়া আছে, যেটি একটি কারণ হতে পারে। এখন এটি অবিশ্বাস্য যে আমি প্রতি তিন চার বছরে একটি উপন্যাস লিখছি এবং লোকজন সেটির জন্য অপেক্ষা করছে। আমি একবার জন আর্ভিং এর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, ভালো বই পড়া নেশার মতো। নেশার মতো যদি কেউ এটাতে নেশাগ্রস্ত হয়, তবে তারা সবসময় অপেক্ষায় থাকে।
জন রে: এর মানে আপনি আপনার পাঠকদের নেশাগ্রস্ত করতে চান?
মুরাকামি: হা, ঠিক তাই জন আর্ভিং যে রকম বললেন।
জন রে: ঐ দুইটি বিষয়-একটি সহজ সাবলীল বর্ণনা আরেকটা চমকপ্রদ হওয়ার মতো ঘটনা এসব কী সচেতনভাবে আসা সম্ভব?
মুরাকামি: না, এটা সম্ভব না। আমি যখন লেখি আমার কোনো পরিকল্পনা থাকে না। আমি গল্পটার জন্য অপেক্ষা করি। গল্পটি কেমন হবে, কি ধরনের হবে, আমি তা নির্বাচন করি না। আমি কেবল অপেক্ষা করি। ‘নরওয়েজিয়ান উড’ এর ব্যাপারটি ছিলো ভিন্ন। কারণ, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাস্তবিক ধরনেই লিখবো। কিন্তু সাধারণ অর্থে সেটা আমি কখনো করি না।
জন রে: কিন্তু আপনি কি ঐ স্বরটি নির্বাচন করেন মজা করে গল্প বলার ভঙ্গিটি?
মুরাকামি: আমি কিছু চিত্রকল্প দাঁড় করাই এবং একটির সাথে একটি যুক্ত করে গল্পটি দাঁড় করাই, তারপর পাঠকের কাছে গল্পটি বর্ণনা করি। আপনি যখন কাউকে কিছু বোঝাবেন আপনাকে সরল হতেই হবে। আপনি এক্ষেত্রে আমার সাথে একমত নাও হতে পারেন। সহজ শব্দ, যুতসই মেটাফর এবং কার্যকরী রূপক এভাবে গল্পটি আমি খুব সতর্কতার সাথে বর্ণনা করি।
জন রে: আচ্ছা, ওটি কি আপনার ভেতর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে?
মুরাকামি: আমি অতি বুদ্ধিমান নই। আবার একগুঁয়েও নই। আমি তাদেরই মতো যারা আমার বই পড়ে। আমি জ্যাজ ক্লাবে যেতাম, রান্না করতাম এবং স্যান্ডউইচ বানাতাম। আমি কখনো লেখক হতে চাইনি। এটা কেমনে হয়ে গেলো। আমার জন্য স্বর্গীয় ব্যাপার। আমার মনে হয় আমার বিনীত হওয়া উচিত।
জন রে: আপনি কোন বয়সে লেখক হলেন? এটি কি রকম আশ্চর্যের ছিলো?
মুরাকামি: যখন আমার বয়স ২৯ বছর ছিলো। হা, এটা আশ্চর্য যে অনেকটা দ্রæত হয়ে গেলো।
জন রে: দ্রæত? প্রথম বার লিখে আপনার কেমন অনূভূতি হলো?
মুরাকামি: আমি লেখা শুরু করতাম মধ্যরাতের পর রান্নাঘরের টেবিলে বসে। প্রথম বইটি লিখতে দশ মাস লেগেছিলো। এরপর আমি এটা একজন পাবলিশারের কাছে পাঠালাম এবং কিছু পুরস্কার পেলাম। আমি আশ্চর্য হলাম যে, এখানে স্বপ্নের মতো সবকিছু ঘটলো। কিন্তু পরমুহ‚র্তেই ভাবলাম যে, এটা ঘটলো এবং আমি একজন লেখক কেনো নয়? এটা স্বাভাবিক।
জন রে: আপনার স্ত্রী আপনার লেখালেখি করার সিদ্ধান্তটি কিভাবে নিলেন?
মুরাকামি: সে কিছুই বলেনি। যখন তাকে আমি বললাম আমি একজন লেখক, সে বিস্মিত হলো এবং একটু লজ্জ্বিত বোধ হলো।
জন রে: কেনো তিনি লজ্জ্বিত হলেন? তার কি মনে হয়েছিলো আপনি সফল হতে পারবেন না?
মুরাকামি: লেখক হওয়াটা খানিকটা লোক দেখানো টাইপের। এজন্য বোধ হয়।
জন রে: আপনার আইডল কে? আপনি কি জাপানি লেখক দ্বারা প্রভাবিত?
মুরাকামি: আমি ছোটবেলায় জাপানি লেখকদের লেখা তেমন পড়িনি। আমি এই সংস্কৃতি থেকে পালাতে চেয়েছিলাম। এটি আমার কাছে বিষণœ ও বিরক্তিকর লাগতো।
জন রে: আপনার বাবা কি জাপানি সাহিত্যের একজন শিক্ষক ছিলেন না?
মুরাকামি: হা ছিলেন। বাবা-ছেলের সম্পর্কটাও তেমন ছিলো। আমি পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়লাম। জ্যাজ সঙ্গীত, দস্তয়ভস্কি, কাফকা, রেমন্ড চ্যান্ডলার। ওটি ছিলো আমার নিজস্ব জগত। আমার কল্পলোক। আমি চাইলে চলে যেতে পারতাম সেন্ট পিটার্সবুর্গ অথবা পশ্চিম হলিউডে। এটিই হচ্ছে আমার উপন্যাসের শক্তি, আমি আপনি যেখানে খুশি চলে যেতে পারেন সহজে। এখন তো খুব সহজ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া। আপনি পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় চলে যেতে পারবেন। এটি ছিলো আমার মনের একেক ধরনের অবস্থান, অনেকটা স্বপ্নের মতো।
জন রে: তাহলে ওটিই ছিলো আপনার লেখার প্রেরণা।
মুরাকামি: বটে। যখন আমার ২৯ বছর বয়স, আমি একেবারে শূন্য থেকে উপন্যাস লেখা শুরু করলাম। আমি চাইলাম কিছু লিখতে, কিন্তু জানতাম না কীভাবে শুরু করবো। কীভাবে জাপানিতে লিখতে হয় তাও জানতাম না। আমার খুব অল্পই জাপানি লেখকদের লেখা পড়া হয়েছিলো। তাই ধার করলাম পাশ্চাত্য এবং আমেরিকার সাহিত্য থেকে। এর ফলে আমি আমার নিজের একটা স্টাইল তৈরি করলাম, যেটা এভাবেই শুরু হলো।
জন রে: আপনার প্রথম বই যখন প্রকাশিত হলো আপনি একটি পুরস্কার জিতলেন এবং এভাবে আপনার পথে এগোচ্ছিলেন। আপনার কি অন্য লেখকদের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিলো?
মুরাকামি: না, হয়নি।
জন রে: আপনার কোনো লেখক বন্ধু হয়নি ঐ সময়টায়?
মুরাকামি: না।
জন রে: এ সময়ে কোনো লেখক বন্ধু নেই?
মুরাকামি: না, আমার মনে হয় না।
জন রে: এরকম কেউ কি ছিলো না যাকে আপনি আপনার পাÐুলিপি দেখান?
মুরাকামি: কখনো না।
জন রে: আপনার স্ত্রীকেও না?
মুরাকামি: হ্যাঁ। আমি তাকে আমার প্রথম পাÐুলিপিটি দেখালাম কিন্তু কখনো এটি পড়েছে বলে ওভাবে বলেনি। তাই আমার ধারণা তার মধ্যে এটির কোনো প্রভাব নেই।
জন রে: উনার মধ্যে কোনো প্রভাব ছিলো না।
মুরাকামি: কিন্তু ওটি ছিলো আমার প্রথম খসড়া কপি, পরে এটি পুনরায় এডিট করেছিলাম।
জন রে: এখন আপনি যখন লেখেন কোনো বই উনি কি আপনার লেখার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখান?
মুরাকামি: সে আমার প্রথম পাঠক। আমি প্রতিটি বই লেখার পর তার পাঠের উপর নির্ভর করি। সে আমার একজন সহযোগী। এট অনেকটা স্কট ফিটজজেরাল্ড-এর মতো, তার বউ জেল্ডা ছিলেন তার প্রথম পাঠক।
জন রে: তাহলে এক্ষেত্রে আপনার কখনো কি মনে হয়নি আপনি কোনো লেখক স¤প্রদায়ের ছিলেন?
মুরাকামি: আমি একা থাকতে পছন্দ করি। আমি কোনো সাহিত্য গ্রæপ, স¤প্রদায় এগুলো তেমন পছন্দ করি না। একবার প্রিন্সটন হোটেলে আমাকে আমন্ত্রণ করেছিলো। সেখানে জয়েস কারল, টনি মরিসন ছিলেন এবং এতোটাই ঘাবড়ে গেছিলাম যে আমি কিছুই বলতে পারিনি। ছিলেন মেরি মরিসও। উনি বেশ চমৎকার মানুষ, সম্ভবত আমরা সমবয়সীই এবং আমাদের মধ্যে এক ধরনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিলো। কিন্তু জাপানে এরকম তেমন বন্ধু হয়ে উঠেনি। কারণ আমি দূরত্বে থাকতে চাইতাম।
জন রে: ‘দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রনিক্যাল’ বইয়ে আপনি যুক্তরাষ্ট্রের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে লিখেছিলেন। আপনার লেখায় কি সেখানে বাস করার কোনো প্রভাব আছে?
মুরাকামি: ‘দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রনিক্যাল’ লেখার চার বছরে আমি আমেরিকায় একজন ‘আগন্তুক’ হয়ে বাস করছিলাম। ঐ ‘আগন্তুক’ ভাবটা আমাকে সবসময় ছায়ার মতো তাড়া করছিলো এবং উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের ক্ষেত্রে সেই বিষয়টি ছিলো। এবার আপনি ভাবুন তো যদি আমি জাপানে লিখতাম তাহলে উপন্যাসটি ভিন্ন হতো কি-না। জাপানে আমার অপরিচিত ভাবটা এখানকার চেয়ে ভিন্ন। আমেরিকায় এটি অনেক সুস্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ ছিলো যে নিজেকে ভালোভাবে চেনার ব্যাপারটা। উপন্যাসেও একইভাবে নিজেকে নগ্ন করে দেখার ব্যাপারটা ঘটেছিলো।
জন রে: বর্তমানে জাপানে যারা বই লিখছেন এমন কেউ কি আছে যার বই আপনি পছন্দ করেন?
মুরাকামি: হা, আছে তো। রু মুরাকামি। বানানা ওশিমোটো। তার কিছু বই আমি পছন্দ করি। কিন্তু আমি কোনো সমালোচনা করি না। আমি ঐ সবে জড়িত হতে চাই না।
জন রে: কেন নয়?
মুরাকামি: আমি মনে করি আমার কাজ মানুষ এবং বিশ্বকে প্রত্যক্ষ করা এবং এসবের উপর বিচার করা নয়। আমি সবসময় নিজেকে তথাকথিত উপসংহার থেকে দূরে থাকার অবস্থানে রাখতে চাই। আমি বিশ্বের সবকিছুকেই সম্ভাবনার জায়গায় নিয়ে যেতে পছন্দ করি। আমি এটির চেয়ে অনুবাদ করাকেই পছন্দ করি। কারণ অনুবাদে আপনাকে কোনো কিছুর বিচার নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। লাইন বাই লাইন আমি আমার প্রিয় কাজগুলোকে শরীর আর মনের ভেতর চালিত করি। অবশ্যই সাহিত্যে সমালোচনার দরকার আছে, সেটি আমার কাজ নয়।
জন রে: আপনার কাজে ফিরে যাওয়া যাক, আমেরিকার গোয়েন্দা গল্প হিসেবে ‘হার্ড-বয়েল্ড’ মূল্যবান সম্পদ। আপনি এই ধারার সাথে কখন থেকে অভ্যস্ত হলেন?
মুরাকামি: মাধ্যমিকে পড়ার সময় আমি ক্রাইম উপন্যাসের প্রেমে পড়ি। তখন কোবে বাস করতাম। এটি ছিলো বন্দর শহর যেখানে অনেক বিদেশীরা আসতেন এবং তাদের পেপারব্যাক বইগুলো পড়া শেষ হলে পুরনো বইয়ের দোকানগুলোতে সস্তায় বিক্রি করে দিতেন। আমাদের অতো টাকা পয়সা ছিলো না। আমি ঐ বইগুলো সস্তায় কিনে পড়তাম। ঐ বইগুলো পড়ে পড়ে আমি ইংরেজি শিখেছি। এটি বেশ মজার। আমি তা উপভোগ করতাম।
জন রে: আপনি প্রথম ইংরেজি বই কোন্্টি পড়ছিলেন?
মুরাকামি: রোস ম্যাকডোনাল্ড এর ‘আর্চার’। ঐ বইগুলো থেকে অনেক শিখলাম। একবার শুরু করলে থামতে পারতাম না। একই সময়ে আমি তখন তলস্তয় এবং দস্তয়ভস্কি পড়েছি। সেগুলোও ধরলে শেষ না করে ওঠা যেতো না। আমার কাছে দস্তয়ভস্কি আর রেমন্ড চান্ডলার একই কথা। এছাড়া এখনও আমার কাছে আদর্শ কথাসাহিত্য বলতে দস্তয়ভস্কি আর রেমন্ড চ্যান্ডলার একসাথে বেটে রান্না করা।
জন রে: প্রথম কখন কাফকা পড়েছিলেন?
মুরাকামি: ১৫ বছর বয়সে আমি পড়লাম ‘দ্য ক্যাস্টল’। এটা দারুণ উপন্যাস। এরপর ‘দ্য ট্রায়াল’ পড়লাম।
জন রে: বেশ তো। দুটো উপন্যাসই অসমাপ্ত ছিলো। যেগুলোতে কোনো উপসংহার নেই। আপনার উপন্যাসেও এরকমটা খাটে, বিশেষ করে ‘দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রনিক্যাল’ এটার শেষ পর্যন্ত কোনো উপসংহার থাকে না, যেটা পাঠকরা বেশ উদগ্রীব হয়ে বসে থাকে। এক্ষেত্রে কাফকার কোনও প্রভাব বিস্তার করেছিলো?
মুরাকামি: না, পুরোপুরি নয়। আপনি রেমন্ড চান্ডলার পড়ে থাকবেন, তিনিও কোনো সমাপ্তি টেনে দেন না। তিনি হয়তো বলেন, কে সে হত্যাকারী তা আমার কাছে তেমন কোনো ব্যাপার না। ব্রাদারস কারামাজোভ-এ কে সেই হত্যাকারী সেটা আমি গ্রাহ্য করি না।
জন রে: তারপরও কে খুন করলো সেটা জানার জন্য তো পড়ে যাওয়া।
মুরাকামি: আমি নিজে যখন লিখতে বসি তখন নিজেই জানি না কে এটা করলো। তখন পাঠক আর আমি একই অবস্থানে অবস্থান করি। আমি গল্প লেখা শুরু করলে আমি জানি না এর সমাপ্তি কি হতে পারে বা পরে কি ঘটতে পারে। গল্পের শুরুর দিকে হত্যা করে থাকলো কেউ, আমি তা জানি না। আমি লিখতে থাকি এবং গল্পটি তৈরি করতে থাকি কারণ আমি খুঁজতে পছন্দ করি। আমি যদি আগে থেকেই জানতাম খুনি কে তাহলে গল্পটির আর কোনো মানে থাকতো না।
জন রে: আপনার গল্পের ব্যাখ্যা করতে না চাওয়ার পেছনে নিশ্চয় একটা অর্থ আছে, যে রকম স্বপ্নের ব্যাখ্যা করলে আর স্বপ্নময়তা থাকে না।
মুরাকামি: বই লেখার সবচেয়ে একটা ভালো দিক যে লেখার সময় আপনি জেগে স্বপ্ন দেখতে পারবেন। যদি সেটা প্রকৃত স্বপ্ন হয়, আপনি এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। আপনি জেগে আছেন, লিখতে লিখতে আপনার সময়, মাত্রা এসব সবকিছুই ঠিক করে নিতে পারেন। আমি সকালে চার পাঁচ ঘণ্টা ধরে লিখি এবং তারপর আমি থামি। পরের দিন আবার ধারাবাহিকভাবে শুরু করি। যদি এটা প্রকৃত স্বপ্ন হয়, আপনি ঔটা করতে পারবেন না।
জন রে: আপনি বললেন যে আপনি যখন লেখেন তখন খুন কে করলো সেটি জানেন না। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে: ‘ড্যান্স ড্যান্স ড্যান্স’ উপন্যাসে সচেতনভাবেই ঐ দৃশ্যটির প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যেখানে গোতেন্দা তার স্বীকারোক্তি প্রদান করে, যেটি অনেকটা ক্লাসিক ক্রাইম উপন্যাসের মতো। সেই ছিলো শেষ ব্যক্তি যাকে আমরা সন্দেহে রাখতে পারি। আপনি কি শুরুতে জানতেন না যে, গোতেন্দা ছিলো অপরাধী?
মুরাকামি: প্রথম খসড়ায় আমি জানতাম না। শেষটার কাছাকাছি গিয়ে জানতে পারলাম। দ্বিতীয়বারের মতো লিখতে বসে তখন গোতেন্দার দৃশ্যগুলো নতুন করে লিখলাম, জেনে যে গোতেন্দা মূল অপরাধী।
জন রে: আপনি যেটি প্রথম খসড়া করলেন এটির শেষ করতে গিয়ে আপনি জানলেন এবং তখন কি এটির সঠিক সংশোধন দেয় মনে করেন আপনার পুনঃলেখন কাজটি?
মুরাকামি: একদম ঠিক। আমি প্রথমে একটা খসড়া তারপর পুনরায় সংশোধন করি।
জন রে: কতোদিন সময় লাগে আপনার খসড়াটি তৈরি করতে?
মুরাকামি: আমার প্রথম খসড়া লিখতে ছয় মাসের মতো, এরপর বাকি ছয় সাত মাসে পুনঃলেখনের কাজ করি।
জন রে: ঔটাই বেশ ভালো।
মুরাকামি: আমি পরিশ্রমী। আমি কাজ করার সময় খুব মনোযোগ দিয়ে করি। তাই এটি সহজ হয়। লেখার সময় গল্পের ফিকশন তৈরি করতে থাকি আর অন্যকিছু না।
জন রে: আমি আপনার চরিত্রগুলো সম্পর্কে জানতে চাই। আপনি লেখার সময় এদের কতোটা বাস্তব মনে হয়? ন্যারেটিভে একমাত্র আপনি জীবন্ত, এটি কতোটুকু গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে?
মুরাকামি: যখন আমি আমার বই এর চরিত্রগুলো তৈরি করি তখন তাদেরকে বাস্তব জীবনে দেখতে পছন্দ করি। অধিক কথা বলাটা পছন্দ করি না। অন্যদের গল্প শুনতে ভালো লাগে। তারা কেমন মানুষ হবে সেটা নির্ধারণ করি না। তাদের ভাবনাটাকে ধরার চেষ্টা করি। তাদের কাছ থেকে সব ঘটনা একসাথে করি। জানি না এটা বাস্তব না অবাস্তব। কিন্তু আমার কাছে আমার চরিত্ররা অনেক বেশি বাস্তব। ঐ ছয় সাত মাস ধরে যখন লিখি, তখন এরা আমার ভেতরে আবাস গাড়ে। এটা এক ধরনের নতুন জগতের মতো।
জন রে: আপনার প্রধান চরিত্রগুলো মনে হয় আপনারই দৃষ্টিভঙ্গী নিজের ন্যারেটিভের।
মুরাকামি: আপনি ধরেন যে আমার একজন জমজ ভাই আছে, আমার দুই বছর বয়সে সে হাইজ্যাক হয়। এরপর সে অনেক দূরের কোনো জায়গায় বাস করতে থাকে এবং আমাদের মধ্যে কখনো দেখা হয় না। সে হচ্ছে আমার মূল চরিত্র, আমার একটা অংশ কিন্তু আমি নই। আমরা একে অপরকে দীর্ঘ দিন দেখি না। এটি এক প্রকার নিজেকে আরেকভাবে জানা। ডিএনএ গঠন মতে আমরা একই কিন্তু আমাদের পরিবেশ ভিন্ন। তাই আমাদের চিন্তার পথও ভিন্ন। প্রত্যেকবার বই লেখার সময় আমি আমার পা ভিন্ন ভিন্ন জুতোয় রাখি, কারণ আমি নিজেকে নিয়ে ক্লান্ত। এভাবে আমি পালাতে থাকি নিজের থেকে। এটি একটা ফ্যান্টাসি। যদি আপনার ফ্যান্টাসি না থাকে তাহলে কেনো লিখবেন?
জন রে: আরেকটি প্রশ্ন ‘হার্ড বয়েল্ড ওন্ডারল্যান্ড’ এর ব্যাপারে। এটি সাধারণত নির্দিষ্ট ভারসাম্যে একটি স্বাভাবিক ধরনে এগোয় যা আপনার ‘দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রনিক্যাল’ এর থেকে ভিন্ন। আপনি কি কিছু জায়গায় উপন্যাসটির গুরুত্বপূর্ণ গঠন ও ধরন পরিবর্তন করেছেন?
মুরাকামি: হ্যাঁ। আমার প্রথম দুটি বই প্রকাশিত করতে চাইনি জাপানের বাইরে। কারণ এগুলো আমার কাছে অনেকটা অপরিণত ও অদক্ষ মনে হয় তাই।
জন রে: আপনার উপন্যাসে দুই ধরনের নারীদের দেখা যায়: এক ধরনের নারীদের সাথে আপনার প্রটাগনিস্ট-এর সত্যিকার সম্পর্ক থাকে। প্রায়ই এ ধরনের নারীরা লীন হয়ে যায় এবং তার স্মৃতি তখন প্রটাগনিস্টকে তাড়িয়ে বেড়ায়। অন্য ধরনের নারীরা পরে আসে, হয় প্রটাগনিস্টকে নতুন করে কিছু খুঁজতে সাহায্য করতে নয়তো ভুলিয়ে রাখতে। দ্বিতীয় টাইপের নারীরা অকপটে হয়, যৌনতার দিক দিয়ে উদার। এই দুই ধরনটা আসলে কেনো?
মুরাকামি: আমার প্রটাগনিস্ট সবসময় বাস্তব ও আধ্যাত্মিক জগতে আটকে থাকে। আধ্যাত্মিক জগতে নারী অথবা পুরুষরা খুব শান্ত, বুদ্ধিমান ও ভদ্র। কিন্তু বাস্তব জগতে, আপনি যেমনটি বললেন, নারীরা খুব সচল, হাস্যমুখর ও আশাবাদী। তাদের হিউমার ধরার ক্ষমতা রয়েছে। প্রটাগনিস্ট-এর মন এই দুই জগতে বিভক্ত থাকে। তিনি ভেবে পান না কোন্্টি ধরে রাখবেন। আমার মনে হয় সেটিই প্রধান উদ্দেশ্য। ‘হার্ড বয়েলড ওয়ান্ডারল্যান্ড’ উপন্যাসে বিষয়টি খুব দৃশ্যগত। সেখানে প্রটাগনিস্ট-এর মনটা বিভক্ত। ‘নরওয়েজিয়ান উড’ উপন্যাসে দুই জন নারী আছে, প্রটাগনিস্ট শেষ অবধি ভেবে পায় না কাকে আঁকড়ে ধরবে।
জন রে: আপনি কি আপনার কমিক চরিত্রগুলোর প্রতি বেশি যতœবান?
মুরাকামি: আমি কমিক ডায়ালগ লিখতে পছন্দ করি। এটি আমার কাছে মজার। কিন্তু আমার সব চরিত্র যদি কমিক হয় তবে সেটি একঘেয়েমি হয়ে যাবে। এই কমিক চরিত্রগুলো আপনার মনকে থিতিয়ে রাখবে। রসালো অনুভূতিকে আপনাকে জিইয়ে রাখতে হবে। আপনার মেজাজকে শীতল রাখবে। যখন আপনি বেশ বিষণœ থাকবেন তখন আপনার ভেতরটা খুব অস্থির হয়ে উঠবে। কিন্তু যখন আপনি হাস্য উজ্জ্বল থাকবেন আপনি তখন স্থির। তবে আপনি হাসি দিয়ে তো আর যুদ্ধ জয় করতে পারেন না!
জন রে: আপনাকে মনে করা হয় বর্তমান জাপানি লেখকদের ভেতর আপনি সবচেয়ে পশ্চিমা ঘেঁষা কিংবা আমেরিকান-জাপানি লেখক। আমি জানতে চাচ্ছিলাম, জাপানের সংস্কৃতির সাথে আপনার বোঝাপড়াটা কেমন?
মুরাকামি: আমি অন্যদেশের মানুষদের নিয়ে লিখি না। আমি আমাদের নিয়ে লিখতে চাই। আমি আমার জাপান ও জাপানের মানুষদের জীবন নিয়ে লিখতে চাই। এটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বলেন যে, আমার ধরনটা পশ্চিম বিশ্বের জন্য যুতসই, সেটা হয়তো ঠিক, তবে আমার গল্পগুলো আমার একান্তই, সেগুলো কখনোই পশ্চিমা না।
জন রে: আপনার লেখায় প্রসঙ্গক্রমে পশ্চিমের অনেক বিষয় চলে আসে। উদাহরণস্বরূপ- বিটলস-এর কথা বলা যায়, এখন সেটা জাপানের জীবনের সাথেও জড়িয়ে গেছে।
মুরাকামি: যখন আমি লিখি যে মানুষ ম্যাকডোনাল্ডের হাম্বাগার খাচ্ছে, আমেরিকানরা বিস্ময় নিয়ে তাকায়, তারা ভাবে এই চরিত্র টফু না খেয়ে হাম্বাগার কেনো খাচ্ছে ! কিন্তু হাম্বাগার খাওয়াটা এখানে এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
জন রে: আপনি কি বলবেন যে আপনার উপন্যাসগুলো জাপানের নাগরিক জীবনকে প্রতিফলিত করে?
মুরাকামি: যেভাবে মানুষ কথা বলে, যেভাবে তারা প্রতিক্রিয়া জানায়, যেভাবে তারা চিন্তা করে, যেভাবে তারা বিশ্লেষণ করে, এসব অতি মাত্রায় জাপানি। অবশ্যই কোনো জাপানি পাঠকই অভিযোগ করে জানাতে পারবে না যে আমার গল্প তাদের জীবন থেকে একেবারে আলাদা। আমি লিখতে চাই জাপানিদের নিয়েই। কোথায় আমরা আছি, আমাদের গন্তব্য কোথায়, আমরা আসলে কে আমি এগুলো নিয়েই লিখতে চাই। আমি মনে করি এগুলোই আমার লেখার বিষয়বস্তু।
জন রে: ‘দ্য উইন্ড আপ বার্ড ক্রনিকল’ এ আপনি আপনার কাহিনীতে বাবার কথা এবং তার সময়কার অবস্থা স্মরণ করেছেন। আপনার উপন্যাস কিংবা ছোটগল্পে তাকে ততো আমরা পাই না।
মুরাকামি: আমার প্রায় সব উপন্যাসই প্রথম পুরুষে লেখা। আমার প্রধান চরিত্রের কাজ হলো তার চারপাশে যা ঘটে বা ঘটছে সেটা অবলোকন করা। তার যেটা দেখার কথা সে হয়তো সেটা দেখে। যদি আমি বলি যে সে গ্রেট গেটসবির নিক কারাওয়ের সাথে মিলে যায়, সে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ। তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য তাকে সব ধরনের সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে হবে।
এইভাবে জাপানের ঐতিহ্যবাহী সাহিত্যে পরিবার সমস্তটির ওপর গুরুত্ব বহন করে এসেছে। আমি আমার প্রধান চরিত্রকে স্বাধীন ও সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপন করতে চাই। নগরবাসী হিসেবে তার অবস্থানটা ঐরকমই ছিলো। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি সম্পর্ক ছেড়ে স্বাধীনতা ও একাকীত্বকে বেছে নিয়েছিলেন।
জন রে: জাপানি লোককথা আপনার সাহিত্যে কতোখানি?
মুরাকামি: ছোটবেলায় আমি প্রচুর জাপানি উপকথা, লোককাহিনী পড়েছিলাম শোনানো। আপনি যখন বড় হয়ে যাবেন তখন ঐ গল্পগুলো আর বিনোদনের থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, অতি ব্যাঙয়ের চরিত্রটি ঐ ধরনের কোনো গল্প থেকে চলে আসবে। আপনার কাছে এখন আমেরিকান লোককাহিনী আছে, আছে জার্মান এবং রাশিয়ার লোককাহিনী। এগুলো সব কিছু মিলিয়ে আমরা একতা সংমিশ্রণ ঘটাতে পারি, মাকডোনাল্ডের ‘দ্য লিটল প্রিন্স’ যেরকম।
জন রে: পৃথিবীব্যাপী পপ-সংস্কৃতির ভাÐার ।
মুরাকামি: ন্যারেটিভটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আজকাল, আমি তত্ত¡ নিয়ে মাথা ঘামাই না। শব্দ ভাÐার নিয়েও তেমন ভাবি না। গল্পে ন্যারেটিভটা ভালো না মন্দ সেটা বড় বিষয়। ইণ্টারনেটের ফলে আমাদের এখন অনেক এবং নতুন ধরনের লোকসংস্কৃতির সাথে সাক্ষাৎ ঘটছে। এগুলো এক ধরনের মেটাফর। আমি ম্যাট্রিক্স মুভি দেখেছিলাম। এটি এখনকার মানুষদের জন্যে একটি ফোকলোর। কিন্তু এখানকার সকলে বলেছে এটি একঘেয়ে।
জন রে: আপনি কি হায়া মিয়াজাকির এনিমেটেড ‘স্পিরিটেড এ’ওয়ে’ মুভিটি দেখেছেন? আমার কাছে মনে হয় ঐ মুভিটির সাথে আপনার উপন্যাসের তুলনা করা যেতে পারে। তিনি আপনার মতো ফোকলোরকে আধুনিকভাবে উপযোগী করে পরিবেশন করেন। আপনি কি তার মুভিগুলো পছন্দ করেন?
মুরাকামি: না। আমি এনিমেটেড মুভি তেমন দেখি না। ঐ ছবিটার একটা ছোট্ট অংশ আমি দেখেছিলাম। কিন্তু ওটা আমার স্টাইল না। ওই ধরনের মুভিতে আমার তেমন আগ্রহী নেই। আমি যখন লিখি, আমি একটা চিত্রকল্প তৈরি করি এবং সেই চিত্রকল্পটি যথেষ্ঠ মজবুত।
জন রে: আপনি কি প্রায়ই মুভি দেখতে যান?
মুরাকামি: ওহ, হা সবসময়। আমার প্রিয় পরিচালক ফিনল্যান্ডের ‘আকি জোয়ারিশমাকি’। তার প্রত্যেকটি মুভি আমার ভালো লাগে। তার পরিবেশন অসাধারণ।
জন রে: আপনি একটু আগে বললেন যে হাস্যরস পাঠকদের ধরে রাখে। এটা কি আর কোনো কাজে আসে?
মুরাকামি: আমি হাসাতে চাই আমার পাঠকদের মাঝে মধ্যে। জাপানের অনেক পাঠক আমার বই ট্রেনে বসে পড়ে। মধ্যবিত্তরা কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার সময় ট্রেনে দুইঘণ্টা বই পড়ে সময় কাটায়। সেই জন্যে আমার বড় বইগুলো সাধারণত দুই খÐে প্রকাশিত হয়। একখÐ বয়ে বেড়ানো মুশকিল হয়ে যায়। কিছু পাঠক আমাকে চিঠি লিখে অভিযোগ করে যে, তারা ট্রেনে আমার বই পড়ে না হেসে থাকতে পারেন না, এটি কখনো তাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। ঐ চিঠিগুলোতে তাদের অভিযোগ আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়। আমার বই পড়ে মানুষ হাসছে ভেবে বেশ মজা পাই। আমি প্রতি দশ পৃষ্ঠা অন্তর অন্তর তাদের হাসাতে চাই।
জন রে: এটি কি আপনার কোনো গোপন ফরমুলা?
মুরাকামি: আমি হিসাব করিনি। যদি ঐটা ওইভাবে করতে পারতাম, তবে ভালো হতো। আমি কার্ট ভন্গুট এবং রিচার্ড ব্রাটিগান পড়তে পছন্দ করতাম কলেজে পড়াকালীন। তাদের মধ্যে হাস্যরস ছিলো এবং একই সাথে আবার সিরিয়াস ব্যাপারটা বিদ্যমান। আমি ঐ ধরনের বইগুলো পড়তে পছন্দ করি। প্রথম দিকে আমি তাদের বইগুলো পড়ে আশ্চর্য হয়ে যেতাম, ঐ ধরনের বইও লেখা যায়! এটি তখন নতুন জগৎ আবিষ্কারের মতোই মধুর ছিলো ।
জন রে: আপনি কি তাহলে আপনার লেখায় ঐ ধরনটা এনেছেন?
মুরাকামি: আমার মনে হয়, এই পৃথিবী হল একটা কমেডি। এই নগর জীবন, টেলিভিশনে পঞ্চাশটি চ্যানেল, সরকারের ঐ বোকা লোকগুলো, সব কমেডি। তাই আমি চেষ্টা করি সিরিয়াস হতে, যতো চেষ্টা করি ততোই আরো আমি হাস্যরসাত্মক হয়ে পড়ি। ১৯৬৮-৬৯ এর দিকে আমরা ভয়ংকর সিরিয়াস ছিলাম, তখন আমার বয়স ১৯ এবং সময়টা সিরিয়াস এবং মানুষ খুব বাস্তবিক।
জন রে: জাদুবাস্তবতার অন্যতম শর্ত হলো যে, ‘জাদু বা অতিবাস্তবের বিষয়বস্তুর উপর কম মনোযোগ দেওয়া। আপনি মনে হয় এই নিয়ম মানেন না, আপনার চরিত্রগুলো আপনার গল্পের অদ্ভুত দিকগুলো নিয়ে অস্বস্তিতে ভুগে। পাঠককে সেখানে আটকে রাখে। এটি কেন? এর কি কোনো আলাদা মতলব আছে?
মুরাকামি: এটি খুবই মজার প্রশ্ন। আমি এটি নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি এবং ভাবি যে, আমার নিজস্ব প্রকৃত অবলোকন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করি যে, পৃথিবীটা কতোটা অদ্ভুত! আমি লিখতে লিখতে যে সকল অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাই, আমার চরিত্ররাও সেই সকল অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায়। এবং যখন পাঠকরা পড়ে তারাও তখন একই অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে। কাফ্কা এবং মার্কেজ যেটি লিখেছেন সেটি ধ্রæপদী সাহিত্যের বিচারে অতি-সাহিত্য। আমার গল্পগুলো অতিবাস্তব একই সাথে অতি বর্তমান ও অতি আধুনিক। একটি মুভিসেটের কথা চিন্তা করুন, যেখানে সবকিছু পপস, বইগুলো দেয়ালের উপর, যেটি আসলে নকল। দেয়ালটি কাগজের তৈরি। ধ্রæপদী ধাঁচের জাদুবাস্তবতায় ঐ দেয়াল ও বইগুলো হচ্ছে বাস্তব। যদি আমার গল্পে নকল কিছু থেকে থাকে আমি বলে দিই যে এটি নকল। আমি নকলকে আসল বলে স্থাপন করি না।
জন রে: আপনার মুভি নিয়ে মেটাফোর ক্যামেরার পেছনে টানা হলে স্টুডিওতে সব কাজ দেখানো হবে বলছেন, যেটি বাস্তব?
মুরাকামি: আমি পাঠকদের নকলকে আসল বলে বিভ্রান্তির ভেতর ফেলি না। এক অর্থে, আমি পাঠকদের বলতে চাই, এটি শুধু গল্প মাত্র। এটি বানানো। কিন্তু যখন আপনি নকল জিনিসকে আসল জ্ঞান করবেন, তখন সেটি আসল হয়ে যায়। বিষয়টা অতো সহজে আসলে বোঝাবার নয়।
উনবিংশ ও বিংশ শতকের গোড়ার দিকে, লেখকরা আসল জিনিস উপস্থাপন করতেন। ‘যুদ্ধ এবং শান্তি’তে তলস্তয় যুদ্ধ ময়দানকে এতো কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে পড়তে পড়তে পাঠক ওটিকে বাস্তব বলে ধরে নিতে বাধ্য। কিন্তু আমি তা করি না। আমি এটি বাস্তব বলে ভান করি না। আমরা বাস করছি একটি বানানো পৃথিবীতে। আমরা সন্ধ্যায় বানানো খবর শুনি। আমরা একটি বানানো যুদ্ধে যুদ্ধ করছি। আমাদের সরকার বানানো। তবে আমরা এই বানানো জগতে আমাদের বাস্তবতাকে খুঁজে পাই। আমার গল্পগুলো ঐরকমই। আমরা বানোয়াট দৃশ্যের ভেতর দিয়ে গমন করছি। তবে যখন আমরা এই বানোয়াট জগতের ভেতর দিয়ে হাঁটছি তখন ওটা আমাদের কাছে বাস্তব হয়ে উঠছে। প্রতিশ্রæতি ও সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতিটা বাস্তব। এটিই আমি লিখতে চাই।
জন রে: আপনি আপনার লেখায় সময়টাকে বার বার ধরিয়ে দেন।
মুরাকামি: পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করা আমি পছন্দ করি। তলস্তয় তার লেখায় পুরো বর্ণনা করতেন। আমার বিবরণ একটা ক্ষুদ্র আকারকে ঘিরে থাকে। আপনি যখন ক্ষুদ্র অংশগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে উপস্থাপন করবেন, তলস্তয়ের বিপরীতটা তখন ঘটবে, যেটা অতিবাস্তবিক। এটিই আমার স্টাইল।
জন রে: আপনি একটু আগেই কাফকা ও মার্কেজের সাথে নিজেকে আলাদা করলেন। বললেন তারা সাহিত্যের লেখক। আপনি কি তবে নিজেকে সাহিত্যের লেখক বলে ভাবছেন না?
মুরাকামি: আমি চলমান সময়ের সাহিত্যিক। এই সময়ের সাথে তাদের একটা পার্থক্য আছে। যখন কাফকা লিখতেন তখন খালি সঙ্গীত, বই আর থিয়েটার ছিলো। এখন আমাদের সিনেমা ও ইণ্টারনেটসহ আরও অনেককিছু হয়েছে। এখন প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে বহুগুণে। সময়টা হলো বড় সমস্যা। ্ঊনবিংশ শতকে অবসর কাটানোর মতো যথেষ্ঠ সময় ছিলো। কাজেই তারা বই পড়তো। তারা অপেরা হাউজে তিন থেকে চার ঘণ্টার জন্যে বসে পড়তো। কিন্তু এখন সবাই খুব ব্যস্ত। অবসর বলে কিছু নেই জীবনে। ‘মবি ডিক’ কিংবা দস্তয়ভস্কি পড়া সত্যিই আনন্দের, কিন্তু মানুষের এতো সময় কোথায়! কাজেই কথাসাহিত্যকে বদলাতে হয়েছে। আমাদের পাঠকদের এখন ঘাড় ধরে টেনে নিয়ে আসতে হয়। এই সময়ের কথাসাহিত্যিকরা জ্যাজ কিংবা ভিডিও গেমসের মতো অন্যান্য জগতের রীতি অনুসরণ করছেন। আমার ধারণা, ভিডিও গেমস এখন কথাসাহিত্যের সবচেয়ে কাছাকাছি একটি মাধ্যম।
জন রে: ভিডিও গেমস?
মুরাকামি: হুম। যদিও আমি নিজে ওটি খেলা বিশেষ সুবিধার মনে করি না। তবে এই মিলটি আমি ধরতে পারি। মাঝে মধ্যে লেখবার সময় আমার মনে হয়, আমি একটি ভিডিও গেমের নকশা তৈরি করছি, সাথে ওটি চালানোর একটি মাধ্যমেরও। আমি প্রোগ্রামটা তৈরি করেছি, এখন আমি সেটার মাঝখানে; আমার বাম হাত জানে না ডান হাত কি করছে। এটা এক ধরনের ব্যবচ্ছেদ, বিচ্ছেদের অনুভূতি।
জন রে: বিষয়টাকে কি এভাবে দেখা যায় যে, আপনি যখন লিখছেন তখন জানেন না এর পরে কি ঘটতে যাচ্ছে, আবার আপনার একটি অংশ ঠিকই জানে এর ভবিষ্যৎ?
মুরাকামি: অবচেতনভাবে হতে পারে। যখন আমি লেখার ভেতর ডুবে থাকি, আমি জানি লেখক কি অনুভব করছেন এবং পাঠক কি ভাবছেন। সেটা ভালো, এ থেকে আমি লেখার গতি সঞ্চার করি। কেননা আমিও পাঠকদের মতো জানতে চাই পরের ঘটনাগুলো। তবে আপনাকে কখনো কখনো স্রোতকে টেনে ধরতে হবে। যদি আপনি খুব দ্রæত হাঁটেন, পাঠকরা ক্লান্ত ও একঘেয়ে হয়ে উঠবে। পাঠকদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় আপনাকে থামাতে হবে।
জন রে: থামানোর কাজটি আপনি কিভাবে করেন?
মুরাকামি: আমি এটা অনুভব করি মাত্র। আমি যখন বুঝতে পারি এখন থামা উচিৎ, থেমে যাই।

 

গ্রহণ: জন রে
ভাষান্তর: দেবাশীষ ধর
শেয়ার করুন: